সাধন সরকার
বিশ্লেষণ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ বৈশি^ক উষ্ণায়ন। বহু আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার উপকূলীয় দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো। সম্প্রতি বিশ^ব্যাংকের ‘দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু উপদ্রুত এলাকা (হটস্পট), জীবনমানের ওপরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এতে ১৩ কোটি ৪০ লাখ (২০৫০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ২০ কোটির বেশি) মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগ ক্ষতির দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ইতোমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বনভূমি, জলাশয় ও জীববৈচিত্র্য কমে যাওয়ার কারণে এ অঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি! জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এখনই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য, কৃষি, অভিবাসন ও উৎপাদনশীলতায় বিরূপ প্রভাবসহ নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তসরকার সংস্থা ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ ভাগ উপকূলীয় স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। ফলে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে (প্রতি সাতজনে একজন)। এ ছাড়া সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আগামী কয়েক দশক পর চট্টগ্রাম বন্দরও সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে!
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে ভুগছে বাংলাদেশ। ফলে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে জীবন-জীবিকা। পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে ঋতুবৈচিত্র্যের খামখেয়ালিপনায় অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। গ্রীষ্মকাল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বর্ষাকাল তার সময় থেকে সরে যাচ্ছে। অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হচ্ছে দেশের ব্যাপক অঞ্চল। আবার গ্রীষ্মকালে দেখা দিচ্ছে খরা। শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতুর চিরচেনা রূপের দেখা মিলছে না। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতি, ফসল ও মানুষের ওপর। ঋতুভিত্তিক ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের ওপর নতুন রোগের প্রভাব বাড়ছে। বাড়ছে লবণাক্ততা। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে! মানুষজন কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য সুবিধাজনক পেশায় চলে যাচ্ছে। জলবায়ুর কারণে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে শহরগুলোয় অভিগমনের হার বাড়ছে।
মানব সম্প্রদায়ের নানাবিধ নেতিবাচক কর্মকান্ড পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকে আরো ত্বরান্বিত করছে। উন্নত দেশগুলোয় শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অতিমাত্রায় আরাম-আয়েশের ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্বন-ডাই অক্সাইড তথা গ্রিনহাউস গ্যাসের ব্যাপক নির্গমন ঘটছে। গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ বিশেষ করে কার্বন-ডাই অক্সাইড তাপ ধরে রেখে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সারা বিশে^র যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ নামক পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ অন্যতম। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২ ফুটের বেশিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশসহ দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইনসহ প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র তলিয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর ব্যাপক জনসংখ্যাবহুল বৃহৎ বেশ কয়েকটি মেগাসিটি সমুদ্রতীরের কাছাকাছি অবস্থিত। তাই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয়, দ্বীপরাষ্ট্রসহ সব মিলিয়ে পৃথিবীর এক-পঞ্চমাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে! সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সামুদ্রিক সীমানাও পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। এক কথায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশে দেশে মিঠাপানির সংকট দেখা দেবে। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। সামুদ্রিক প্রাণী ও সামগ্রিক জীববৈচিত্র্য বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হবে। ফলে পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে সামগ্রিক প্রতিবেশ ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়বে।
জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যেতে শুরু করেছে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে ঋতুবৈচিত্র্যের খামখেয়ালিপনায় কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘জার্মানওয়াচ’ ১৯ বছর ধরে দুর্যোগের সংখ্যা, মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির মোট হিসাবের ভিত্তিতে ‘বৈশি^ক জলবায়ু ঝুঁকিসূচক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবারও বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে (শুধু গেল বছরের বিবেচনায় বাংলাদেশ রয়েছে ১৩তম অবস্থানে)। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে মোট ৮৫৯ জন মারা গেছেন। ওই সময়ে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি ডলার। আরো বলা হয়েছে, এ সময়ে মোট ১৮৭টি দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত এনেছে। এসব দুর্যোগের মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধস প্রধান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বন্যা আগের চেয়ে তীব্র হচ্ছে। অসময়ের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ। জলবায়ুগত দুর্যোগ বন্যা ও পাহাড়ধসে প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবনও হুমকির মুখে রয়েছে।
এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ নানা উদ্যোগ নিতে থাকবে আর উন্নত বিশ^ কার্বন নিঃসরণ করতে থাকবেÑএটা হতে পারে না। উন্নত ও ধনী দেশগুলোর শিল্পকারখানা থেকে শুরু করে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে কার্বন-ডাই অক্সাইড বা গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বেড়েই চলেছে। এসব গ্যাস তাপ ধরে রেখে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ^ আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) মতে, ২০১৬ সালে বিশে^র বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই অক্সাইড জমা হয়েছে, তা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে ৩৬ কোটি কিলোটন কার্বন-ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে নির্গত হয়। বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ একেবারে কম, বছরে মাত্র ৭৭ টন (প্রায় ০.১৭ ভাগ)। কিন্তু বিশ^ব্যাপী অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ বলতে আগে বাংলাদেশসহ ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর নাম আসত। কিন্তু এখন বিশে^র তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে শুধু এ বছরই দুটি বড় বন্যা ও দুটি ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে। বন্যায় হাওরে বোরো ফসল নষ্ট হওয়াসহ উত্তরাঞ্চলে আমন ফসল তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হওয়াতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিতে সমগ্র দেশের মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ায় জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবে এ দেশে ধীরে ধীরে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেবে। মাটির গুণগত মানের অবনতি হবে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে নতুন নতুন রোগবালাই দেখা দেবে।
প্রতিটি নতুন বছর আসছে আর পুরোনো বছরের কার্বন নিঃসরণের হারকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশ ও গোষ্ঠীগুলো কার্বন নিঃসরণের মূল হোতা। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশে কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। ফলে বেকারত্ব বেড়ে যেতে পারে। এ কারণে অ-কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের উপকূলের জমিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। ফসল উৎপাদন কম হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষজন দীর্ঘদিনের পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় তিন কোটি মানুষের একটি বড় অংশই পরিবেশ-উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। একদিকে উত্তরাঞ্চলের মরূকরণ, অন্যদিকে প্রতি বছর বন্যায় ফসল ও জানমালের যে ক্ষতি হয়, তার ব্যাপক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত রাষ্ট্রসমূহকে এক কাতারে এসে দায় নিয়ে ‘প্যারিস চুক্তির’ (বর্তমান শতাব্দীতে বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রির নিচে রাখা) শর্ত মেনে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণে জোর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো কোনোভাবেই দায়ী নয়। কার্বন নিঃসরণ তথা বিশে^র তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধ করা না গেলে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় দেশসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল ও উপকূলীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিবাদ করার, রুখে দাঁড়ানোর, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার এখনই সময়। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে নিজেদের মতো করে ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মকান্ডের ওপর জোর দিতে হবে। কেননা যেকোনো উন্নয়নে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নে (ইআইএ) গুরুত্ব দিলে উন্নয়নও টেকসই হবে। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
জলবায়ুগত দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্ব দিতে হবে। সবুজ প্রবৃদ্ধি বা অর্থনীতির মূল কথা হলো মানুষের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে, অভাব দূর হবে কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি হবে না। টেকসই সবুজ প্রবৃদ্ধির দিকে দেশ এগিয়ে থাকলে পরিবেশ দূষণ বন্ধ হবে। দারিদ্র্যদূর হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। বনভূমির পরিমাণ বাড়বে। নদী-নালা, খাল-বিল রক্ষা পাবে। কার্বন নিঃসরণ কম হবে। সর্বোপরি পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষা হবে। তবে সবার আগে টেকসই নির্মাণ ও বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শহরের টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। তা ছাড়া নীতিনির্ধারকদের টেকসই কৌশল নির্ধারণের ওপর জোর দিতে হবে। জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় নেওয়া দেশি-বিদেশি সব প্রকল্প ও কর্মকান্ড সমন্বিত ও জবাবদিহির সঙ্গে পরিচালিত করতে হবে। নদ-নদীগুলো ড্রেজিং করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব ধরনের জলাধার রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে হবে। উপকূলে সবুজ বেষ্টনীর পরিসীমা বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য সোচ্চার হতে হবে। সর্বোপরি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সম্প্রতি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে। একদিকে খরা, অন্যদিকে বন্যার এই উভমুখীসংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন। বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৮০ ভাগ পানি নষ্ট হয়ে যায়। অথচ এ পানি ধরে রাখা সম্ভব হলে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ভালো ভূমিকা রাখবে। সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলাসহ পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, মৎস্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প, বনায়ন, টেকসই নদী ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনায় রেখে এই ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়েছে। ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়’ এটাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এটা খুব ভালো সমাধান হতে পারে। যাহোক, অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী দেশসমূহকে ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ মেনে নেওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে জলবায়ুসহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিটা মূলত সবার। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ^কে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তির (সৌরশক্তি, পানিশক্তি, বায়ুশক্তি) দিকে প্রতিটি দেশকে অগ্রসর হতে হবে। উপকূলীয় এলাকাসহ দেশব্যাপী সবুজায়ন বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরো বেশি বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি, পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
"