সাঈদ চৌধুরী

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মতামত

শক্তিশালী দুদক প্রয়োজন

কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে গ্রেফতারের আগে সরকারি অনুমতি লাগার বিষয়টি খুব বেশি হতাশার সৃষ্টি করছে। ‘সরকারি চাকরি আইন’ শিরোনামে যে আইনটি নতুনভাবে আসছে, সেখানে স্পষ্টভাবে এ কথাটি উল্লেখ থাকলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ মূলত মুখ থুবড়ে পড়বে।

দুদক বেশির ভাগ সময়ই প্রশ্নের মধ্যে পড়ে যায়, এ কথার ক্ষেত্রে যে আসলে দুর্নীতি বন্ধে দুদকের কতটা সফলতা পেয়েছে! প্রতিটি ক্ষেত্রে যেখানে দুর্নীতির লাগামহীন আচরণ, সেখানে দুদকের একা বিপরীত অবস্থান যেমন কার্যকর নয়, তেমনি সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনো দুর্নীতিই বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল প্রয়োগ করে দুর্নীতি করা মানুষগুলো এমনিতেই লাগামহীন আর সেখানে যদি বলেই দেওয়া হয় তুমি মুক্ত তবে, কতটা সুফল বয়ে আনতে পারবে দুদক?

অনেক তথ্য এখনো সাধারণ মানুষ জানে না। তথ্য জানার জন্য কোনো অফিসে গেলেও তার জন্যও ঘুষ চাওয়া হয়, এমনও অভিযোগ যেখানে রয়েছে, সেখানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রেফতারের নির্দেশ না থাকলে দুদকের কাজ এলে কি তা নিয়েই সন্দেহের সৃষ্টি হবে এবং দুর্নীতি আরো অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যাবে, যা আমাদের দেশের কল্যাণের বিপরীতে যেতে পারে। দুদকের বর্তমান বিদ্যমান আইনের ২৮-এর ১ ধারা অনুযায়ী সন্দেহভাজন যেকোনো দুর্নীতিবাজ বা মামলার কোনো আসামিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করার বিধান রয়েছে। এ বিধান অনুযায়ী দুদক গত কিছুদিনে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে গ্রেফতারও করেছে। গত কিছুদিনে দুদকের কার্যক্রম ছিল বেশ আশাজাগানিয়া। যদিও বড় বড় দুর্নীতিবাজকে বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি ছিল, তবুও দুর্নীতিবাজরা ভয় পেতে শুরু করেছিল দুদকের কার্যক্রমে।

দুর্নীতির গ্রাফ যে হারে বাড়ছে, তাতে প্রতিটি প্রকল্পে সরকারের ক্ষতি অনেক বেশি। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজগুলোর অনিয়ম নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বেশি। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার কাজের ব্যয়-সংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা অনেক ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়নি। এখানে যদি কোনো দুর্নীতি হয়, তবে কীভাবে মানুষ জানবে যে কার্যসম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করেছে বা করেনি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে সচিবদেরও বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে এও বলেছেন, আপনাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে আপনারা দেশের সেবায় সততার সঙ্গে বেশি করে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন।

যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে চাইছেন দুর্নীতি বন্ধে সরকার আরো কঠোর হোক, সেখানে এমন আইন আরো পর্যালোচনার সুযোগ রেখে যাতে দুর্নীতি বন্ধে তা সহায়ক হয়, সে হিসেবে আইনটি প্রণয়ন হবে, সেটাই আমাদের কাম্য। আইন দুর্নীতি রোখার জন্যই করা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আইনকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। দুদক যাতে গ্রেফতারের পর কোনো দোষী ব্যক্তির শাস্তির জন্য আরো বেশি শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারে, আইন সেভাবে প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আবেদন রইল। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক ভালো অবদান রয়েছে। অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নিজেদের কাজ দিয়ে সমাদৃত হচ্ছেন। সরকারের মধ্যে এই কর্মকর্তারা নিজেদের কাজ দিয়ে অনেক নতুনত্বও নিয়ে আসছেন। শ্রীপুর উপজেলা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল করে আলাদাভাবে পরিচিত হয়েছেন। গাজীপুর জেলার জেলা প্রশাসক ইভটিজিং, মাদক, হোটেলে অসমাজিক কাজ বন্ধে প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন কাজ দিয়ে নিজেদের জনসাধারণের সহায়ক হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে দেখেছি পটুয়াখালীর একজন জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করে সাইনবোর্ড দিয়েছিলেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেকেই এভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করলেও দুর্নীতিবাজ কিছু মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি করছেন, যার প্রভাব পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিগুলোকেই আইনের আওতায় আনা রাষ্ট্রের কর্তব্য। দুর্নীতি বন্ধের জন্য দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর করার লক্ষ্যে সবাই সহায়ক ভূমিকা পালন করবেনÑএটাই প্রত্যাশা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close