রায়হান আহমেদ তপাদার

  ১৩ আগস্ট, ২০১৮

বিশ্লেষণ

দুই পরাশক্তির বিস্ময়কর বার্তা

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদক ফিলিপ রাকার টুইটারে মন্তব্য করেছেন, মানুষকে অপেক্ষায় রাখাটা পুতিনের প্রভাব প্রদর্শনের স্টাইল। হেলসিংকিতে পুতিন দেরিতে অবতরণ করলেও পরে দেখা গেছে, সভাস্থলে তিনি ট্রাম্পের আগে পৌঁছান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে বৈঠকটি একটু বিলম্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ট্রাম্প হেলসিংকিতে পৌঁছে গেলেও পুতিনের পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। গার্ডিয়ান লিখেছে, পুতিনকেও পাল্টা অপেক্ষায় রেখেছেন ট্রাম্প। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর অবশেষে তাদের বৈঠক হয়েছে ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে। উল্লেখ্য, ব্রাসেলসে গত ১০ ও ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে আসার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জার্মানির প্রাজ্ঞ-প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিরূপ মন্তব্য করে তাকে ক্ষুব্ধ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, জার্মানির জন্য মার্কেলের নেতৃত্ব বিপর্যয়কর। মার্কেলের অপরাধ, তিনি অসংখ্য সিরীয় যুদ্ধবিধ্বস্ত ও শরণার্থীকে জার্মানিতে আশ্রয় দিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি ট্রাম্পকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সরবরাহের জন্য এক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ১৩ জুলাই লন্ডনে এসেই ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সম্পর্কে বলেছেন, থেরেসা ব্রেক্সিট চুক্তিকে নস্যাৎ করেছেন। তা ছাড়া সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন একজন সার্থক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

অন্যদিকে ট্রাম্পের লন্ডন সফরের সময় তার বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করার ব্যাপারে ট্রাম্প লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে সরাসরি দায়ী করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ব্রেক্সিটের ব্যাপারে থেরেসা তার পরামর্শ গ্রহণ করেননি। ট্রাম্প নাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে থেরেসা মেকে মামলা করতে বুদ্ধি দিয়েছিলেন। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পারেননি যে ব্রিটেনে একটি অত্যন্ত তৎপর ও জীবন্ত সংসদ রয়েছে, যার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মত ছাড়া কোনো প্রধানমন্ত্রীই কিছু করতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ব্যবহার গণতান্ত্রিক দিক থেকে এক রকম নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দ্বিধায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেভাবে অন্য দেশ ও তার নেতাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেন, তা কোনো মতেই শোভন, ভদ্রজনোচিত কিংবা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচায়ক নয়। প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থেকে আসা এবং যথাযোগ্য শিক্ষার অভাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের অমার্জিত আচার-ব্যবহারের জন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করে। তা ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থ-বিত্ত তাকে অনেকটা উন্নাসিক, গোঁয়ার ও মাথাভারি ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে বলেও ধরে নেওয়া হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হেলসিংকি বৈঠকের পর সমালোচনা উঠেছে, যে ব্যক্তি আমেরিকাকে নম্বর ওয়ান মনে করেন, তিনি কীভাবে হেলসিংকিতে বসে তার দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, ইন্টেলিজেন্স বিভাগ ও এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারেন? এতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মান ও মর্যাদা কোথায় থাকে? এ অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ও গণমাধ্যমের। তাদের মতে, ট্রাম্প মনে করেন তাকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়টি এখন রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিনের হাতে। ট্রাম্পের নির্বাচন বিজয় এখন যুক্তরাষ্ট্রবাসীর কাছে বহু কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ট্রাম্পের মতো এমন প্রেসিডেন্ট অতীতে কখনো দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারসচেতন ও মর্যাদাসম্পন্ন নাগরিকদের অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজন প্রেসিডেন্টের জন্য লজ্জাবোধ করেন। অনেকে মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভালো করেই রুশ নেতা ও সাবেক সোভিয়েত গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভøাদিমির পুতিনের খপ্পরে পড়েছেন। সেখান থেকে তার পক্ষে বেরিয়ে আসা কতটা সম্ভব হবে, তা একমাত্র ভবিতব্যই বলতে পারে। এরপর হেলসিংকি সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগদান, তার বিভিন্ন বক্তব্য এবং রাশিয়ার প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশের কারণে ট্রাম্পের নিজ রিপাবলিকান দলীয় প্রবীণ নেতা ও সিনেটর জন ম্যাক কেইন ও ফ্লোরিডার তরুণ রিপাবলিকান নেতা এবং গত নির্বাচনে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মার্কো রুবিওসহ অনেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রবীণ নেতারাসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি মার্কিন গণতান্ত্রিক ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার সাইবার হস্তক্ষেপকে একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মার্কিন রক্ষণশীল রাজনীতিক ও জনগণের একটি বিপুল অংশ রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বলে মনে করে না। তাদের অনেকে মনে করেন, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানোর জন্যই রাশিয়া ডেমোক্র্যাটদের শিবিরে সাইবার আক্রমণ ও গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে। মুলার-তদন্তের ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার যেসব অবৈধ হস্তক্ষেপের কথা বেরিয়ে এসেছে, তাতে মার্কিন অধিকারসচেতন জনগণ, বিশেষ করে পশ্চিমা গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক নাগরিকদের একটি ব্যাপক অংশ আন্দোলিত হয়েছে। তারা বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কোনো মতেই যেন আর আস্থায় নিতে পারছে না।

এ মুহূর্তে তারা মনে করছে প্রেসিডেন্টের পদ ধরে রাখার জন্যই ট্রাম্প পুতিনের প্রতি এ দুর্বলতা দেখাতে শুরু করেছেন এবং সেই সুযোগে পুতিন একে একে পশ্চিমা গণতন্ত্র, প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ন্যাটো ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। সেই পরিকল্পিত কার্যক্রমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রয়েছে সরব সমর্থন। ট্রাম্প চাচ্ছেন রাশিয়া ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে অতীতে অর্জিত সব বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে তাদের এক নতুন ভাগাভাগির ব্যবস্থা চালু করতে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তাতে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। ৯০ মিনিটের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পূর্বনির্ধারিত সেই সভা শেষ পর্যন্ত দুই ঘণ্টার ওপর গড়ালেও তাদের মধ্যে আলোচ্য বিষয় নিয়ে সত্যিকার অর্থে কিছুই জানা যায়নি। সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা সাংবাদিকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিলেও সেগুলো থেকে বিরাজমান সংকট নিরসনের কোনো সুস্পষ্ট দিকদর্শন পাওয়া যায়নি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালে মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস অফিসে (এনডিসি) রাশিয়ার সাইবার হস্তক্ষেপ ও সেই অপরাধে ১২ জন পদস্থ রুশ সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করার মার্কিন আইনজীবী রবার্ট মুলারের তদন্তের বিষয়টি আমলেই নেননি রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিন। প্রথমত, মার্কিন নির্বাচনে সরকারিভাবে কোনো হস্তক্ষেপের বিষয়টি আবারও সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন পুতিন। তা ছাড়া তিনি মার্কিন আইনজীবী রবার্ট মুলারকে রাশিয়ার গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে রুশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পত্র পাঠানোর পরামর্শ দেন। রুশ সরকার ও তার অপরাধ কমিশন সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে বলে পুতিন উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সাইবার হস্তক্ষেপ কিংবা গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে জোর দিয়ে কিছুই বলেননি।

মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (এফবিআই) প্রকাশ্যে সমালোচনা করে তাদের ব্যর্থতার দিকগুলো তুলে ধরেছেন। ট্রাম্প পুতিনের পথ ধরে পাল্টা প্রশ্ন করেন, গত নির্বাচনের সময় কোনো বিদেশি সাইবার হস্তক্ষেপ বা কারসাজি হয়ে থাকলে এফবিআই কেন ডিএনসি অফিসের সাইবার সার্ভারটি জব্দ করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখল না? নিজের দেশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেসামাল কথাবার্তা বলার জন্য শুধু অভিযুক্তরা নয়, ট্রাম্পের নিজ দলের রিপাবলিকানরাসহ দেশের অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দুই নেতার রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও তার সরকার সেই সভাকে আশাতীতভাবে সফল বলে উল্লেখ করেছেন। তা ছাড়া রুশ নেতা ভøাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প কোনো বিষয়েই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শক্তিশালী অভিযোগ উত্থাপন করেননি। তিনি বরং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রুশ নেতা পুতিনকেই পক্ষান্তরে সমর্থন করে গেছেন। তা ছাড়া এ বৈঠকের আগেই ট্রাম্প রুশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাবেক প্রেসিডেন্টদের অভিযুক্ত করেন। ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে নির্বাচনকালীন বিদেশি সাইবার হস্তক্ষেপ কিংবা গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন বারবার। অথচ প্রেসিডেন্ট ওবামা সেসব ব্যাপারে সরাসরি রুশ নেতা পুতিনের কাছেই অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এবং এমনকি কিছু অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপসহ কিছু রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারেরও সুপারিশ করেছিলেন।

বিভিন্ন কারণে ট্রাম্প রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ কিংবা ক্রিমিয়া দখল, বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থা ডব্লিউটিও এবং প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ন্যাটো ভেঙে দেওয়ার অভিযুক্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান নিতে পারছেন না। সে কারণে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডাসহ অনেক মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী দেশ ট্রাম্পের সংস্পর্শ ও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রভাব-প্রতিপ্রত্তি থেকে ক্রমে ক্রমে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে। জার্মানি ও ফ্রান্স এ ব্যাপারে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, বর্তমান অবস্থায় ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহাবস্থান মোটেও সম্ভব নয়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অনেকেই মনে করে, পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া এখনো একটি অশুভ, অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারপ্রবণ রাষ্ট্র এবং পুতিন একজন ঠা-া মাথার খুনি। তার কোথাও কোনো জবাবদিহি বা স্বচ্ছতা নেই। এ ধরনের প্রশ্নাতীত ক্ষমতার অধিকারী শাসকদেরই ভালোবাসেন ট্রাম্প। এ অভিযোগ গণমাধ্যমের একটি বিশেষ অংশসহ অনেকের। হেলসিংকি বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা দুজন উপস্থিত দোভাষী ছাড়া আর কেউ জানে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা ন্যাটো ভেঙে দেওয়া, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের অবসান ঘটানো, এমনকি সিরিয়া সমস্যার সমাধান নিয়েও তাদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে, তারা সে ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে তেমন কোনো আভাস দেননি। পরমাণু অস্ত্রের বিস্তাররোধ কিংবা সীমিতকরণের কথা উল্লেখ করলেও তার কোনো ফর্মুলা বা কর্মসূচির কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাষ্ট্রীয়ভাবে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, ইউক্রেন আক্রমণ ও ক্রিমিয়া দখল এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রতিরোধমূলক জবাব দিয়েছেন পুতিন আর তার বক্তব্যের প্রতি বিনয়ের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে গেছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়, ট্রাম্প অতিমাত্রায় পুতিনের প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছেন।

ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী নিউইয়র্কার ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে সম্ভাবনা দেখেছিলেন ধূর্ত রাজনীতিক পুতিন। সেই থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিন বছরের মধ্যে তৈরি করে তোলা হয়েছে বলে উল্লেখ। সেই পথ ধরেই অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ট্রাম্পের সাফল্য নিয়ে সেদিন অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণ ছিল, তবু শেষ পর্যন্ত বিজয় ট্রাম্পই ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু কীভাবে, তার সবকিছুই সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয়বস্তু। ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাইবার কারসাজি কিংবা কারচুপিসংক্রান্ত মুলার-তদন্তের বিষয়টি কোনোমতে পার হতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রে তার দ্বিতীয় টার্মের নির্বাচনে তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। বেরিয়ে আসবেন আসল ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তির দেশে তা কি সম্ভব হবে? বহু কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ১৬ জুলাই হেলসিংকিতে অনুষ্ঠিত সভা তাদের নিজ দেশসহ বিশ্বব্যাপী সীমাহীন আলোচনা ও সমালোচনার সূত্রপাত করেছে। উভয় পক্ষে কোনো সহায়তাকারী কিংবা আলোচ্য বিষয়ের ওপর কোনো নোট নেওয়া ছাড়াই দুই ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী সেই অভূতপূর্ব সভা সমাপ্ত হয়েছে।

লেখক : লেখক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close