মো. আশরাফ হোসেন

  ২৬ জুন, ২০১৮

পরামর্শ

পামগাছের বাগান

মার্কিন চিকিৎসক স্টেফান রিপিচ তার ‘ডায়াবেটিক নিরাময় খাদ্য’ বইতে উল্লেখ করেছেন, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলো ভোজ্য তেল। একজন লোকের দৈনিক খাবারের ৩০ শতাংশ পুষ্টি ক্যালোরি ভোজ্য তেল থেকে আসা প্রয়োজন। তেল হরমন উৎপাদন, স্বাস্থ্যবান হাড় গঠন, সুষ্ঠু ত্ব¡ক এবং শারীরিক দৈনন্দিন কর্মের জন্য আবশ্যক। ভোজ্য তেল শরীরে পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা করে এবং শরীরের ভেতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে রক্ষা করে। এটি নেপটিনকে উত্তেজিত করে, যা শরীরকে ‘যথেষ্ট খাওয়া হয়েছে’ সিগন্যাল প্রেরণ করে অতিভোজ থেকে রক্ষা করে। মানুষের শরীরে অতিরিক্ত শ্বেতসার খাবার চর্বি উৎপাদন করে। খাবারের চর্বি মানুষের শরীরে চর্বি উৎপাদনের জন্য মূলত দায়ী নয়। তেলে ভালো-মন্দ রয়েছে। সেচুরেটেড তেল খুবই স্থিতিশীল, সহজে অক্সিডাইজ হয় না এবং রেনসাইড হয় না। পাম তেল, নারকেল তেল, বাদাম তেল, তিল তেল মেচুরেটেড তেলের দৃষ্টান্ত। এসব ভোজ্য তেল শরীর গঠনে পুষ্টি, হরমন, বল, সেলের পর্দার স্থিতিস্থাপকতা দিয়ে থাকে। মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্রিফেটি অ্যাসিড যা শরীর উৎপাদন করতে পারে না। সেচুরেটেড ভোজ্য তেল হজমে সাহায্য করে।

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২৩ লাখ টন অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের আমদানি করেছে, যাতে দুই হাজার কোটি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে। এ হিসেবে সরিষা আমদানি বিবেচনা করা হয়নি। এই অপরিশোধিত ভোজ্য তেলের মধ্যে ১৯ লাখ টন ছিল পাম তেল এবং চার লাখ টন ছিল সয়াবিন তেল। এসব অপরিশোধিত তেল দেশে পরিশোধন করে বিপণন করা হয়েছে। অধিকন্তু বাংলাদেশ বছরে চার লাখ টন রাই, সরিষা ও কেনোলা বীজ আমদানি করে, যা থেকে তেল নিঃসরণ করা হয়। তবে দেশে প্রায় পাঁচ লাখ টন রাই ও সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নিজের প্রয়োজন মেটানোর মতো ভোজ্য তেল উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের মুদ্রা বিদেশি মুদ্রার তুলনায় ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন ভারসাম্য অর্জনের জন্য যেসব ক্ষেত্রে সম্ভব, সেসব ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করা এবং ব্যয় হ্রাস করা প্রয়োজন।

পৃথিবীর জলবায়ুতে তাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন : ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্ব¡াস ইত্যাদির মোকরিলা করতে হচ্ছে। তেমনি প্রতি বছর হাজারো জীবন এবং কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে। পক্ষান্তরে, পাম তেল হলো পৃথিবীতে স্বল্পমূল্যের ভোজ্য তেল। আমরা অনেকে জানি না, মানুষের শরীরের জন্য এ তেল খুবই সহনীয়। পৃথিবীর যেকোনো ভোজ্য তেল অপেক্ষা পাম তেল হেক্টরপ্রতি উৎপাদন অনেক অনেক বেশি। হেক্টরপ্রতি পৃথিবীতে গড় পাম তেল উৎপাদন হয় ৩ দশমিক ৭৪ টন। সে তুলনায় হেক্টর প্রতি সয়াবিনের উৎপাদন মাত্র ০.৫ টন। বর্তমানে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদন করে এবং পুরো পৃথিবীতে রফতানি করে থাকে। ভারত তার নিজস্ব ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য পাম তেল উৎপাদনের জন্য পাম বাগান গড়ে তোলার এক বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে যখন আবহাওয়া উষ্ণতা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, সেটা পাম ফল উৎপাদনের জন্য ভালো সময় নয়। তবে জল সেচের মাধ্যমে এ অসুবিধা কাটিয়ে ওঠা সহজ। বছরের অবশিষ্ট ১০ মাস পাম ফলের জন্য খুবই উপযোগী। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় সাধারণত একটি পাম ফলে কাদির ওজন হয় ২০ থেকে ৩০ কেজি, কিন্তু বাংলাদেশের ঘাটাইলে একটি কাদির ওজন ৫০ থেকে ৬৩ কেজি হতে দেখা গেছে।

দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক হারে পরিকল্পিতভাবে পাম বাগান গড়ে তোলা জরুরি। এসব বাগান বাড়তি সুবিধা হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শত শত শ্রমিক মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাম বাগানে কাজ করে আসছে। পাম বাগান গড়ে তোলায় তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে পাম বাগান গড়ে তুলতে তাদের কাজে লাগানো যায়। পাম ফল থেকে তেল নিষ্কাশন করে কয়েক বছর বাংলাদেশ নিজের জন্য ভোজ্য তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। পাম বাগান গড়া ও পরিচর্যা যেহেতু শ্রমঘন কাজ, তাই এ ক্ষেত্রে বহু শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান সম্ভব হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist