মোহাম্মদ আবু নোমান

  ২৪ মে, ২০১৮

নিবন্ধ

রমজান যেন ব্যবসায়ীদের

দুঃখ ও দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ। জনগণ যেন খেলার পুতুল! জনগণের কথা আর কোথাও কাজে লাগে না। পবিত্র রমজান মাসে আজ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। সেহরি, ইফতারিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের পেটভরে খাওয়ারও সুযোগ নেই। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। নিয়তি ও অভিন্ন দুর্ভোগের মাত্রা রমজানে অসহনীয় হয় খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। সবার সামর্থ্য সমান নয়, অনেকে রোজা রেখে ইফতারসামগ্রী জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অবস্থা এমন, গরিব ও সাধারণ মানুষ না খেয়ে ধুঁকবে আর বড়লোকরা কিনবে দেদার। এটা তো কোনো সভ্যসমাজের কাজ হতে পারে না। মুসলিম হিসেবে আসলেই আমাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংযমের মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হ্রাস করে জনগণের সেবা করা হয়। আমাদের দেশে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া! যা যুগ যুগ ধরে চলমান। অথচ রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমিয়ে রাখার বক্তব্য, আলাপ ও নির্দেশ শোনা যায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বাজারে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকার পরও কেন পণ্যের দাম বাড়ে, তা অনুসন্ধান ও প্রতিকার করা কি কোন সরকারের সাধ্য, সামর্থ্য ও শক্তির বাইরে!

দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর অন্তরকে রমজানের পবিত্রতা বা প্রকৃত শিক্ষা ছুঁতে পারে না। তারা পার্থিব আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে রমজান মাসকে শুধুই লাভজনক ব্যবসায়িক মাস হিসেবে বিবেচনা করে। কতিপয় বাঙালির স্বভাব রয়েছেÑ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারো’। এই নীতিতেই দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর জন্য রোজার মাসকে বিশেষভাবে টার্গেট করে কতিপয় অসৎ, দুষ্ট ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা। তাই রমজান মাসে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রমজান এসেছে, আর তখনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য নড়েচড়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। যে রমজান আমাদের জন্য নিয়ে আসে রহমত, নাজাত ও মাগফিরাত; সেই রমজান আসার আগেই শুরু হয়ে যায় অনৈতিক কার্যকলাপ। যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে মনে হয় রমজান মাস সওয়াবের নয়, ব্যবসার নামে হরিলুটের মাস।

রোজার মাস সংযম সাধনার। শুধু রসনা নয়, সব রিপুর নিয়ন্ত্রণই এ সাধনার লক্ষ্য। কিন্তু এ কথা কারো মনে থাকে না। ফলে দুর্নীতি কমে না, ক্ষমতার দাপট কমে না, বাজারে নিত্যপণ্যের দামও কমে না; বরং বাড়ে।

রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বহু গুণে বেড়ে যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ বাজারের সব পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আকাশচুম্বী দাম হাঁকা শুরু হয়। ক্রেতাসাধারণ নিরুপায় হয়ে সেই চড়া দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বাধ্য হন। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন চাঁদাবাজি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে যতটা কঠোর হওয়া দরকার, তারা ততটা নয়। একবাক্যে বলতে গেলে কঠোর বাজার ব্যবস্থাপনা ও বাজার কমিটিকে জবাবদিহির অধীনে আনার মাধ্যমে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০০ কোটি টাকার শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। এর পরও বাজার অস্থির কেন? শুল্ক ছাড়ের লাভ যায় ব্যবসায়ীদের পকেটে। নিত্যপণ্যের এলসি খোলাতেও আছে সুবিধা। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি, তবু দাম বাড়ে! বাজারভর্তি পণ্য তবু দাম নিয়ে শঙ্কা। রমজান মাস যেন ব্যবসায়ীদের স্বর্গবাস। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের অন্যতম দাবিদার যখন আমরা, বিষয়টা ভাবতেও লজ্জা হয়। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন রমজান মাসে পণ্যের দাম কমানোর চেষ্টা করে, আমরা তখন বাড়িয়ে দিয়ে বেশি মুনাফা লাভের চেষ্টা করি। বিক্রেতার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তোলা ও মানবিক ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনসেবামূলক কর্মকা- ও সৎ মনোভাবাপন্ন হওয়া দরকার। মজুদদারি, ধোঁকাবাজি প্রভৃতি আদর্শ বিবর্জিত তৎপরতা রোধ করা এখন সময়ের দাবি।

মুনাফা অর্জন ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক নীতি। কিন্তু জনগণকে জিম্মি করে অতি বা অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন ব্যবসার নীতি হতে পারে না। রমজানের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে সংযম। জীবনের সব ক্ষেত্রে সংযমী হওয়াই রমজানের শিক্ষা। অথচ আমাদের জীবনে এর উল্টোটাই দেখা যায়। প্রকৃত অর্থেই লুটেরা পুঁজির নখের আঁচড়ে সমাজ আজ ক্ষতবিক্ষত। অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। এ অবক্ষয়ের পাহাড় ভাঙতে এখন প্রয়োজন একটি বৈশাখী তা-ব। একটি ধ্বংসের মধ্য দিয়ে উদিত হতে পারে সূর্যদীপ্ত আলোকিত ভোর। আমরা সেই ভোরের অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist