মো. মাঈন উদ্দিন

  ১৯ মে, ২০১৮

নিবন্ধ

রমজানের অর্থই সংযম

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে এসেছে মাহে রমজান। এই রমজান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আমাদের জন্য অপরিমেয় অর্থাৎ যা পরিমাপ করা যায় না। মাহে রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য কতটা পূণ্যের তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রস্তুতি থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। মাহে রমজান আগমনের দুই মাস আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তুতি শুরু করে দিতেন। রজবের শুরুতেই নিজে এবং সাহাবায়ে কিরামকে এ দোয়া করার জন্য বলতেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ (হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করো এবং আমাদের রমজানের পুণ্যময় মাস অর্জনের সৌভাগ্য দান করো-তাবারানি, বায়হাকি।) রাসুলুল্লাহর (সা.) এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্বের মুসলমানরা রমজান আসার আগেই পবিত্র রমজান মাসের জন্য প্রতি বছর প্রস্তুতি শুরু করে দেন। সাহাবায়ে কিরামের পর তাবেয়িন, তাবে-তাবেয়িন, মুহাদ্দিসিন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিনসহ সর্বস্তরের মুসলমান নিজ নিজ পরিসরে রমজানের প্রস্তুতি নিয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। সুতরাং এ কথা সহজেই অনুমেয়, এই পবিত্র রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে একটা বিষয় প্রতি বছর লক্ষ করি, রমজান মাসে হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে সর্বত্র কতিপয় লোক চট করেই রেগে যান। শোরগোল বাঁধিয়ে ফেলেন, যাতে ছোট ঘটনা থেকে বৃহৎ ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। তারা এ কথা ভুলে যান, তারা রোজাদার। আমাদের সবারই নৈতিক দায়িত্ব এ কথা মনে রাখা, আমরা রোজাদার। অপরের সামান্য ভুলের জন্য রমজান মাসে ঝগড়া করা কোনোমতেই উচিত হয়। আমাদের রাগ হলে অবশ্যই মাটির দিকে নজর দিতে হবে এবং মনে মনে বলতে হবেÑআমি রোজাদার, আমি রোজাদার। এ মাসে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অবশ্যই কর্তব্য। কারণ রোজা আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা আত্মসংযমের নীতি (তাকওয়া) অর্জন করতে পারো।’ রমজান হচ্ছে সব ধরনের পাপাচার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে একটি শোধনাগার।

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এ মাসে বেহেশতের দরজাগুলো খোলা থাকে আর দোজখের দরজাগুলো বন্ধ থাকে এবং শয়তানকে শিকল পরিয়ে রাখা হয়।’ বুখারি, নাসায়ি। তার পরও আমরা লক্ষ করে থাকি হাটে-বাজারে, গ্রামেগঞ্জে, শহরতলিতে রাস্তার পাশে, অনেক হোটেল মালিক তাদের হোটেলে পর্দা দিয়ে ঘিরে জনগণের খাওয়ার জন্য জায়গা করে দেন এবং অনেক জনগণ দিনেদুপুরে সেখানে গিয়ে খাওয়ার কাজটি করে যায় সংগোপনে। শয়তানকে শিকল পরিয়ে রাখা সত্ত্বেও এসব জনগণ শয়তানের শয়তানি থেকে রক্ষা পায় না, তার মানে তাদের অন্তর ভীষণভাবে কলুষিত। আল্লাহর ভয় তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এসব লোকের চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে! আবার অনেক স্থানে দেখা যায়, দিনেদুপুরে জনগণের সামনে অনেকে এটা-সেটা খাচ্ছে। এরা একাধারে গুনাহ তো করেই যাচ্ছে, তার ওপর রোজার পবিত্রতা নষ্ট করছে। আবার এমনও হতে পারে এদের দেখে অনেক কোমলমতি, উঠতি তরুণ-তরুণী রোজা ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু আল-কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যে এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। তাতে সে মুত্তাকি বান্দায় পরিণত হবে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩ ও ১৮৫)।

সব কু-প্রবৃত্তি ও রিপু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে প্রকৃত মানুষ তৈরি করতে মূলত রমজানের আগমন। খনি থেকে বের করে আনা সোনা আগুনে পোড়ালে যেমন খাদ মুক্ত হয়ে সোনায় পরিণত হয়, গাছ পুড়ে কয়লা হয়-তেমনি রমজানের দহনে সিয়াম সাধক গুনাহ থেকে অবমুক্ত হয়ে কু-রিপু ও গ্রন্থিগুলো ধ্বংস করে জান্নাতি মানুষে পরিণত হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। রমজান মাসে নাজিল করা হয়েছে (মহাগ্রন্থ) আল-কোরআন, মানবজাতির হেদায়েতের জন্য এ গ্রন্থখানা সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। মুমিনের আত্মাকে আল্লাহ তাআলা ধুয়ে-মুছে পাক-সাফ করে তাঁর রঙে রঙিন করে তুলবেন। আর যারা আল্লাহপ্রেমিক তারা শুধুই ভাবছেন, কবে শুরু হবে রমজান এবং কীভাবে তারা নিজেদের পূত-পবিত্র করে গড়ে তুলবেন এ মাসে। তাদের আখলাককে উন্নততর, মহত্তর, পবিত্রতর করে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সাধন করবেন। চারিত্রিক গুণাবলি আরো শানিত করবেন। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে পরহেজগারির শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করবেন। জীবনের যেকোনো বিষয়ে সফলতা আনতে চাইলে অথবা কোনো বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের মন-মানসিকতাকে স্থির করা ও গোছানো এবং এর জন্য প্রস্তুতি শুরু করা। মাহে রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন। তিনি সাহাবিদের এ মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (নাসায়ি, আহমদ)। রাসুল (সা.) একবার শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ করে মাহে রমজানে রোজার ফজিলত সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘হে মানবগণ! তোমাদের প্রতি একটি মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহ¯্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনি আছে। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ের যেকোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (বায়হাকি, ইবনে খোজাইমা)।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist