অলোক আচার্য্য

  ২১ মার্চ, ২০১৮

পরিবেশ

সুপেয় পানি সংকটে আমরা

প্রাণের উৎস পানি। এক ফোঁটা পানির কাছে তৃষ্ণার সময় সব খাবার অপ্রয়োজনীয়। পানির অস্তিত্ব খোঁজার জন্য বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে চাঁদ ও মঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছে। কারণ, পানির সন্ধান পেলেই সেখানে প্রাণের খোঁজ মেলা সম্ভব। আবার পৃথিবীর পরবর্তী মানুষের বাসস্থান এসব গ্রহ হতে পারে, যদি সেখানে পানি পাওয়া যায়। আমাদের এই ভূম-লের বেশির ভাগ অংশই পানি হলেও খাওয়ার উপযোগী পানির পরিমাণ কম। সেই কম থেকে আরো কমে আসছে। নিরাপদ পানির উৎসস্থল ক্রমেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসছে, যা আমাদের জীবন ও জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বিশে^র অনেক বড় শহর আজ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে। কয়েকটি শহর তো রীতিমতো পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। আমাদের তিলোত্তমা শহর ঢাকা সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। গরমের সময় এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। ক্রমেই ঢাকার আশপাশের নদনদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়াতে এবং তার সাতে পানি সংরক্ষণের কোনো সুবিধাজনক উপায় না থাকায় গত কয়েক বছরে পানির স্তর নষ্ট হচ্ছে।

কোনো সুপেয় পানির অভাব তার পেছনে অপরাপর বেশ কিছু কারণ জড়িত রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে নদীনালা ভরাট হচ্ছে। নদীনালা, খালবিল ভরাট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ পানির উৎস নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি দ্রুত জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। কৃষিজমি ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। এসব শিল্প-কারখানার বিষাক্ত পদার্থ নদীতে পড়ার ফলে দূষিত হচ্ছে পানি। তা ছাড়া বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পানির জোগান দেওয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির জন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভেদ, উপমহাদেশীয় আন্তকলহ। বাংলাদেশের সথেঙ্গ ভারতের পানিবন্টন নিয়ে অমীমাংসিত ইস্যু বহুদিন ধরেই ঝুলন্ত রয়েছে। তাই প্রয়োজন পরে পানির সঠিক সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবহার।

সুপেয় পানি কাকে বলে এর সজ্ঞায় জানা যায়, পনিতে লবণাক্ততার মাত্রা ৫০০ পিপিএম বা এক মিলিয়নের পাঁচশত ভাগের চেয়ে কম থাকে তাকে সুপেয় পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী গোটা বিশে^র সিংহভাগ মানুষের নিরাপদ পানি সুযোগ নেই। নিরাপদ পানির অভাবে বিশে^ প্রতিদিন এক হাজার চারশ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এর অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। সারা বিশ্বেই এই এক চিত্র। অথচ পানির অপচয় কমাতে পারলে এবং সুষ্ঠু বণ্টন করতে পারলে এই দরিদ্র্র শ্রেণির অনেকেই পানি থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। আমাদের দেশে বৃষ্টি বা এ রকম উৎস থেকে যে পানি আসছে তার অধিকাংশই নষ্ট হচ্ছে। অর্থ্যাৎ তা মাটিতে ফিরে যেতে পারছে না। অধিকাংশ নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে পানির সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। গেল পানি দিবসেও বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার মধ্যে মাত্র .০১৪ ভাগ খাবার পানি রয়েছে। পানি মানুষের জীবন-জীবিকা ও উন্নয়নের সব বিষয়ের অত্যাবশ্যক উপাদান। তাই পানির সঠিক হিসাব হওয়া উচিত। মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে পানির ন্যায্য হিসাব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানি এবং মোট জনসংখ্যার অন্তত ৯০ শতাংশের জন্য পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর। বাংলাদশের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতিতে পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের কষিকাজ, শিল্প-কলকারখানা, মৎস্য চাষ, জলজ সম্পদের আরোহণ থেকে শুরু করে আমাদের ঐতিহ্য এর সঙ্গে জড়িত। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই পানির সংকটের ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। আমাদের দেশে কেবল রাজধানী ঢাকা শহর নয় বরং প্রধান প্রধান বিভাগীয় শহরগুলোয়ও পানির তীব্র সংকট ঘনীভূত।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে প্রায় ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৯৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়বে। এখনই বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ পানি পায় না অথবা তাদের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছায় না। ইউনিসেফ এর আগে এক জরিপে বলেছিল, আমাদের দেশের প্রায় কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠী সুপেয় পানির সংকটে রয়েছে। সুপেয় পানির সুযোগ বঞ্চিত জনসংখ্যার দিক থেকে আমাদের দেশের অবস্থান সপ্তম। এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ খাওয়ার জন্য নিরাপদ পানি পায় না। আমাদের দেশের প্রায় এক হাজার তিন শ নদীর মধ্যে শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ২১২টি নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর্সেনিক ঝুঁকিতে ভুগছে কয়েক কোটি মানুষ। পানযোগ্য সুপেয় পানির চাহিদা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ সংকট মোকাবিলায় আামদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। এর মধ্যে মিঠাপানির উৎস সৃষ্টি করা, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সুপেয় পানির প্লান্ট করা, দেশের সর্বত্র বৃষ্টির পানির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, শহরের মতো গ্রামের মানুষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা করা, দেশের খাল বিল ও জলাভূমিগুলো রক্ষা করতে হবে, পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করতে হবে, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। এ ছাড়া দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist