নতুন কৌশলে মিয়ানমার
সীমান্তে উত্তেজনা। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারেÑকোন সীমান্তে? আমরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কথা বলছি। কখনো কোথাও কোনো উত্তেজনা বিনা কারণে তৈরি হয়নি। সব উত্তেজনার পেছনে কোনো না কোনো কার্যকারণ থাকবেই আর না থাকাটাই অস্বাভাবিক।
মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তেও যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তার পেছনেও একটি নয়, বেশ কিছু কার্যকারণ রয়েছে। তবে মিয়ানমার বলছে, অভ্যন্তরীণ কাজে নিরাপত্তার প্রয়োজনেই তারা সীমান্তে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নয়। আর বাংলাদেশ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতেই মিয়ানমার এই যুদ্ধংদেহি মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ অংশের বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে মিয়ানমারের এই উসকানিমূলক ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। এমনকি গত শুক্রবার এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ না করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করার মধ্য দিয়ে সীমান্তে সেনা সমাবেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
বিশ্লেষকদের এই পরামর্শের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করেই বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষকে আরো কত পথ ধৈর্যধারণ করে অপেক্ষা করতে হবে। মিয়ানমারের স্বেচ্ছাচারিতা ক্রমেই চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েই চলেছে। তাদের কার্যকলাপে এটা আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার, রোহিঙ্গা ফেরত না নেওয়ার ব্যাপারে তারা বদ্ধপরিকর। আর সে কারণেই এই আগাম ব্যবস্থা। সেনা মোতায়েন আর কাঁটাতারের বেড়া চিৎকার করে সে কথাই ঘোষণা করছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত অথবা অন্য কোনো বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো বিরোধ কখনো ছিল না এবং এখনো নেই। রোহিঙ্গা প্রশ্নে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের কোনো ভূমিকা নেই এবং কোনোকালেও ছিল না। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যা বাংলাদেশের ওপর অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেই অনৈতিক কর্মকে চিরস্থায়ীভাবে চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে পরোক্ষ হুমকির পাঁয়তারা শুরু করেছে।
আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। তার মতে, মিয়ানমার বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই। বিজিবি সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমরা মনে করি, কেবল সতর্ক অবস্থায় থাকাটাই শেষ কথা নয়, যেকোনো অবস্থায় যেকোনো অন্যায়কে প্রতিহত করার মানসিকতায় আমরা প্রস্তুত-এ সংবাদ পৃথিবীকে জানিয়ে দেওয়া।
"