হিমেল আহমেদ

  ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বিশ্লেষণ

ই-সূচকে এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা। এই দেশ বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেÑএই স্বপ্ন সবার। একসময় ছিল যখন বিশ্ব বাংলাদেশকে চিনত প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি ভূখ- হিসেবে, হতদরিদ্র ও সাক্ষরতাহীন এক রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু আজ সময়ের সঙ্গে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জরিপে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসূচকে ভারত-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে নয় ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৮৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। গেল বছর যা ছিল ১৩৭তম। যেখানে ভারতের অবস্থান ১৪৩তম আর পাকিস্তান ১৪১তম। এ ছাড়া এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ২৮তম। আমেরিকান থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যৌথভাবে ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানকে অতিক্রম করে ৫৫ পয়েন্ট অর্জন করেছে। যার বাংলাদেশের জন্য শুভকর সংবাদ। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, অস্থিরতা থাকা সত্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য লাভ করেছে। যে দেশ একসময় বাংলাদেশকে একসময় শাসন, শোষণ করেছে, সেই দেশ পাকিস্তান আজ পিছিয়ে পড়েছে। সর্বদিক থেকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে।

’৭১-এ গণহত্যার মাধ্যমে পাকিস্তান চেয়েছিল বাঙালি জাতির নাম ও চিহ্ন মুছে ফেলতে। যে বর্বরতা আর নির্যাতন ইতিহাসে আজও লেখা রয়েছে। জনসংখ্যাবহুল আমাদের এই রাষ্ট্রকে বিশ্ব একসময় জানত প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘাঁটি হিসেবে। সেই রাষ্ট্র আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি দি ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি তুলনা তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশকে শোষণ-নিপীড়নে নিষ্পেষিত করতে চেয়েছিল যে দেশটি, এখন অনেক কিছুতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে সে। গত ৪৬ বছরের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ এখন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ১ হাজার ৫৩৮ ডলার। সেখানে পাকিস্তানের ১ হাজার ৪৭০ ডলার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হয়েছে লাখো মানুষ। ধ্বংস করা হয়েছিল শিল্প-কারখানা, ব্যাংক প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, রেলপথসহ অনেক অবকাঠামোসমূহ। ৭১-এর বাংলা যখন স্বাধীন হয় পুরো দেশ তখন ছিল ধ্বংসস্তূপ। স্বাধীনতার এই ৪৬ বছরে দেশ সর্বাধিক থেকে এগিয়ে গেছে। সম্প্রতি মাছ ও মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণে বিশ্বে চতুর্থ এবং মাছ চাষে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত খুশির সংবাদ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ হওয়ায় এই জাতিকে মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। বর্তমানে এই প্রবাদটি সত্য হয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার টন। উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি। আর গত অর্থবছরে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার টন মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন উৎপাদন হয়েছে। দেশের সরকারের এটি বিরাট অর্জন নিঃসন্দেহে বলা যায়। মাছ-মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দেশকে আরো একধাপ উন্নয়নের দিকে অগ্রসর করেছে। সাক্ষরতার দিক দিয়েও প্রতি বছর বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। সরকারি জরিপে দেশে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭০ শতাংশ, যা পাকিস্তানের চেয়েও প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি এক জরিপে উঠে এসেছে সাক্ষরতার দিক দিয়ে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়ছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর পাকিস্তানে সাক্ষরতার হার ২ শতাংশ কমে ৫৮ শতাংশে অবনতি হয়েছে। আর বাংলাদেশে ২০১১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৫০ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে উন্নীত হয়ে প্রায় ৭০ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মহাশক্তিধর রাষ্ট্র চীন। সারা বিশ্বে বর্তমানে চীনের তৈরীকৃত পণ্যাদির প্রচলন বেশি। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়েও এগিয়ে আছে এই দেশটি। আরেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ভারত; যার প্রধান শক্তি হলো সে দেশের বৃহৎ আয়তন ও জনশক্তি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ভারতকে পেছনে ফেলে চীনের পর নিজের স্থান করে নিয়েছে, যা পুরো জাতির জন্য গর্বের ও আনন্দের। বাংলাদেশ বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তিতেও বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। থ্রিজির পর ফোরজি ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। স্থাপন করা হয়েছে দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট। শুরু হয়েছে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। নানান উন্নয়নের সঙ্গে সমস্যা ও সংকটও কম নেই। এই দেশে রাজনৈতিকভাবে এখনো দুর্বল রয়েছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবু এগোচ্ছে দেশ। সব সমস্যা ও সংকট নিরসন করে এভাবেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশ-এই কামনা প্রতিটি নাগরিকের।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist