বাড়িভাড়া নৈরাজ্যের অবসান জরুরি
জীবিকার তাগিদে মূলত মানুষ রাজধানীমুখী হয়। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। আর বাইরে থেকে আসা এসব মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ভাড়া বাসা। এতে আবাসন সমস্যা যেমন তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে রাজধানীজুড়ে চলছে বাসাভাড়া নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য। একজন রোজগেরে মানুষের আয়ের সিংহভাগ টাকা চলে যায় বাড়িওয়ালার পকেটে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তালিকা থাকা সত্ত্বেও তা কেউ-ই মানছেন না।
আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে চুক্তির দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর নিয়ম না থাকলেও বাড়িওয়ালারা তা আমলেই নিচ্ছেন না। বরং বছর শেষে বাড়ছে বাড়িভাড়া। ফলে দিন দিন ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন। আর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বাড়িভাড়া নৈরাজ্য ভাড়াটিয়া জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। বিশেষ করে স্বল্প-আয়ের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এই অনিয়মের চরম খেসারত দিচ্ছে। গত ১০ বছরে ঢাকা মহানগরীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় দুইশ গুণ। ফলে নগরীতে বসবাসকারী শতকরা ৬৮ ভাগ মানুষের আয়ের ৪৪ ভাগ চলে যায় বাসাভাড়ায়। গত রোববার ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইডিজি) ‘নগর পরিস্থিতি ২০১৭ : ঢাকা মহানগরীর আবাসন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে বসবাসরত ৬৮ ভাগ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। আর ৩২ ভাগ মানুষ নিজস্ব বাসায় থাকেন। সংগতি না থাকায় ঢাকায় বসবাসরত ৬৮ ভাগ লোক রাজধানীতে নিজস্ব আবাসন কেনার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। ফলে বাড়িভাড়ার অনিয়ম মেনে নিয়েই তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই অব্যবস্থার প্রতিকার হওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে, বাড়িভাড়া যে হারে বাড়ছে সে তুলনায় হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়েনি। বাড়িওয়ালার একটি বাণিজ্যিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহার করে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। কিন্তু সরকারের রাজস্ব খাত সে তুলনায় একেবারে কম। এ ছাড়া বাড়িভাড়া বৃদ্ধি সমাজে অন্যায় ও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত হওয়ার খেসারত পড়ছে কর্মক্ষমতার ওপর। যার প্রভাব সরাসরি পড়ছে আমাদের জিডিপিতে। বাড়ির মালিকরা কীভাবে ভাড়া বাড়াবেন তার একটা নীতিমালা থাকা উচিত। যেহেতু ঢাকা সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে, তাদেরই উচিত এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে এবং বাড়ির সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বর্গফুট হিসেবে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া। এতে বাড়িভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য যেমন কমবে, অন্যদিকে নাগরিক জীবনও হবে সুন্দর।
"