আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ মার্চ, ২০২০

করোনা মোকাবিলায় কঠিন যুদ্ধে মুখোমুখি মানবজাতি

মুসলমানরা রোগমুক্ত থাকার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার সহযোগিতা প্রার্থনায় বিশ্বাসী। ইরানসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরাই করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পেতে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন। এসব দোয়ায় ঔদার্যের ছাপ স্পষ্ট। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ তথা পুরো মানবসমাজের মুক্তির জন্য দোয়া করছেন।

ইরানে করোনাভাইরাস ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : ইরানের সাধারণ মানুষ ও আলেমদের চোখে-মুখেও একই আর্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে যে আমেরিকা ইরানকে বিপদে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সে দেশের মানুষের জন্যও দোয়া করছেন তারা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিশ্বের এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মার্কিন সরকারের মানবিক বোধ জাগ্রত হচ্ছে না। কদিন আগেও আমেরিকা ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কঠিন বাধা তৈরি করে রেখেছে।

ইরান চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী দেশ। কিন্তু এরপরও কিছু ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হয়। করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার পর এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা রোগের খুব ভালো চিকিৎসা বের হয়নি। কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার মতো কিছু রোগের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানে কদিন আগ পর্যন্তও টামিফ্লু নামের একটি ওষুধ করোনা রোগীদের দেওয়া হচ্ছিল, যা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে কার্যকর। করোনা রোগী শনাক্ত করতে টেস্ট কিটের সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি ফুসফুসের সিটি-স্ক্যান রিপোর্টকেও আমলে নিচ্ছেন ইরানি চিকিৎসকরা।

ট্রাম্পের একা ভালো থাকার নীতি : ট্রাম্প একা ভালো থাকার নীতি অনুসরণ করছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ইস্যুতেও তিনি একা ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। জার্মান বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের যে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেটার ওপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এক শ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। জার্মানির অর্থনৈতিক ও জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী পিটার আল্টমায়ার নিজে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে পুরো বিশ্বের অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত, বর্তমান যুগে কেউ একা ভালো থাকতে পারে না। লুকোচুরি বা একক প্রচেষ্টায় এই ভাইরাসকে পরাস্ত করা যাবে না।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমেরিকা ও ইউরোপের সাফল্য অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তারা অনেক এগিয়ে। ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮০ বছর। এসব সাফল্যের কারণে ইউরোপ-আমেরিকা প্রায় ভুলতেই বসেছিল তুলনামূলক কম বয়সেও মানুষ রোগাক্রান্ত হতে পারে অথবা মৃত্যুবরণ করতে পারে। চীনে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার বহু দিন পর তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ছড়িয়েছে। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাওয়ার পরও এই ভাইরাসের কারণে ইউরোপ-আমেরিকা বিপর্যস্ত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকাও ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এক থেকে দেড় বছরের আগে কোনোভাবেই এই রোগের ভ্যাকসিন সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে না।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় : যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনা রোগের ভালো কোনো ওষুধ নেই এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, সে কারণে আমাদের প্রতিরোধের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। আমরা জানি, যেকোনো রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক সহজ ও সস্তা। যদিও এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ অন্য রোগের চেয়ে একটু বেশি কঠিন। তবু জীবন বাঁচাতে আমাদের এই কঠিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এটাকে প্রতিরোধ যুদ্ধ বলছি এই কারণে যে, আপনাকে ঘরের বাইরে গিয়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় ভাইরাসযুক্ত যে জলীয় কণা (ড্রপলেট) বেরিয়ে আসে তা কিছুক্ষণ বাতাসেও থাকতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো বস্তুর ওপর এই ভাইরাসের বেঁচে থাকার ক্ষমতা আরো বেশি। বাইরের কোনো বস্তু স্পর্শ করলেই এই সন্দেহ করতে হবে যে, করোনাভাইরাস হয়তো আপনার হাতে লেগে আছে। এই অদৃশ্য শত্রুর আরেকটি ভয়ানক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাহ্যত পুরোপুরি সুস্থ মানুষও এই ভাইরাসের বাহক হতে পারে, বাহকের শরীরে রোগের কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সংস্পর্শে আসা অন্য জনের শরীরে গিয়ে তা বাসা বাঁধতে পারে। আবার অনেক বাহকের শরীরে কখনোই এই রোগের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না এবং কিছুদিনের মধ্যে বাহকের রোগ প্রতিরোধ শক্তির কাছে তা পরাস্ত হয়। অবশ্য এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তাও রয়েছে আর তা হলো করোনাভাইরাস সবাইকে কাবু করতে পারে না।

শ্রমজীবী মানুষের কী হবে : এ মুহূর্তে দরিদ্র মানুষেরা চরম সংকটে। তাদেরও যাতে ঘর থেকে একটু কম বের হয়েই তিন বেলা খাবার জুটে, সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব মানুষের। মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস ধনী-দরিদ্র চেনে না। রাজা-রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী চেনে না। সব শ্রেণির মানুষ এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইরান সরকারের একটি উদ্যোগ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে যেসব দিনমজুর ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না, তাদের চিহ্নিত করে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ-সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। ইরানের গণমাধ্যমও এ রোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদ ও টকশোর পাশাপাশি নাটক, নাটিকা ও বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সবার জন্য দোয়া ও এবাদতের পাশাপাশি আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ভয় ও দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কারণ ভয় ও দুশ্চিন্তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়, এর ফলে করোনাভাইরাস সহজেই মানুষকে কাবু করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close