নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ জুলাই, ২০২০

গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যে খামারিরা দিশাহারা

আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা। তবে বর্তমাতে গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দেশের প্রায় ছয় লাখ খামারি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, গরুর খাদ্যের এত দাম আর কখনোই দেখেননি তারা। গো-খাদ্যের দাম না কমলে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রতি বছর দেশের খামারিরা গরু, ছাগল, ভেড়া মোটাতাজা করে থাকেন। তবে দিন যতই যাচ্ছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। এতে করে খামারিদের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ওপর হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। তাদের শঙ্কা, করোনা পরিস্থিতি যদি ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তাহলে গরু বেচাকেনা হবে না। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা নিয়ে তারা বড় দুশ্চিন্তায় আছেন। সারা বছর গরু মোটাতাজা করে অনেকে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ঈদে তারা গরু বিক্রি করতে পারবেন কি নাÑ এখন সেই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দেশে খামারের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি। ২০১৯ সালে গরুর খামারের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬টি। এবার এ সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে। তিন বছর ধরে আমাদের দেশি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু। কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। গত বছরে প্রস্তুত করা প্রায় ১২ লাখ পশু অবিক্রীত থেকে যায়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারও নিজেদের পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো যাবে। এজন্য বাইরের কোনো দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খামারি আবদল্লাহ আল মামুন গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য প্রসঙ্গে বলেন, এক কেজি গমের ভুসির দাম ৪৫ টাকা, ছোলার ভুসি ৬০-৬৫, অ্যাংকর ভুসি ৫০, মসুর ভুসি ৪০, খুদ ৩০, ধানের কুড়া ১৪, খৈল ৩৫, ফিড ৩৮ এবং খড় ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে প্রতিটি খাবারের ওপর কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারের এই বাড়তি খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার ৫৮টি গরু লালন-পালন করে করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন মামুন। করোনার কারণে বেলকুচি উপজেলায় ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক না থাকায় তার ৬৫ হাজার টাকা দামের একটি গরু মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। এ কারণে খুব অস্বস্তির মধ্যে আছেন তিনি। খামারি মামুন বললেন, খাবারের দাম বাড়ানো এবং করোনার চলমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লস হবে। দুঃখ করে তিনি বলেন, এবার যদি লস হয় আর গরুর ব্যবসা করব না।

শেরপুরের আরেক খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পু জানালেন, প্রতিনিয়ত গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই বাড়তি মূল্যে খাবার কিনতে কৃষক হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, কোরবানিতে তিন-চার লাখ টাকায় বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাওয়া দিয়ে গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয়, তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়। সেই লস পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়। এই অবস্থায় অনেকে চালান হারিয়ে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান এই খামারি।

বগুড়ার উল্লাপাড়া গ্রামের খামারি হবিবর রহমান (হবি) বলেন, গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আমাদের মতো ছোটখাটো খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেল। তিনি বলেন, এক লিটার দুধ বিক্রি করে এক কেজি ভুসির দাম হয় না। এর আগে করোনা শুরুর সময় দুই কেজি দুধ বিক্রি করে এক কেজি ভুসি কিনতে হয়েছে। এখন রোজার কারণে দুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। রোজা চলে যাওয়ার পর কী হবে, তা জানি না।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, সারা বিশ্বে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আমরাও সে পরিস্থিতির শিকার। তিনি বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য নানা জাতের ঘাস উদ্ভাবন করা হয়েছে। দানাদার খাদ্যের ওপর বেশি জোর না দিয়ে ঘাসের ওপর নির্ভর করার জন্য তিনি খামারিদের প্রতি আহ্বান জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close