আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৭ জুন, ২০১৯

বিদ্যুৎ ছাড়াই চলে বর্ষীয়ানের জ্ঞানচর্চা

জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতার জন্য কি বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন অপরিহার্য? ভারতের এক বর্ষীয়ান নারী নিজের বাসাবাড়িতে সেই চিরাচরিত ধারণা নাকচ করে দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়াই জ্ঞানচর্চা, জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন ৮০ বছর ধরে।

অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিদ্যার প্রফেসর হেমা সানেকে সন্ধ্যায় আলোর জন্য প্রাচীন লণ্ঠনের ওপর নির্ভর করতে হয়। ওই লণ্ঠনটি তার হাতে এসেছে পারিবারিক বংশানুক্রমে। ৮ দশক ধরে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেননি। তিনি নিজের জীবনযাত্রায় এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন যে, নিজের সাফল্য সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। তিনি বলেন, ‘জন্ম থেকেই আমি বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন কাটাচ্ছি। এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। মানসিকতাও সে রকম হয়ে গেছে। কখনোই বিদ্যুৎ ও অন্যান্য স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়ার কথা ভাবিনি।’

উদ্ভিদবিদ্যার প্রফেসর হিসেবে ৭৯ বছর বয়সি সানে এমনকি পিএইচডি করার সময়ও মোমবাতির আলোয় পড়াশোনা চালিয়েছেন। ভারতে গ্র্যাজুয়েশনের ছাত্রদের জন্য বেশ কয়েকটি পাঠ্যবইও লিখেছেন তিনি। তার জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে মনে রাখতে হবে যে, ভারতে প্রত্যেক ব্যক্তি বছরে গড়ে প্রায় ৮০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আমেরিকার ক্ষেত্রে সংখ্যাটি বছরে ১৩ হাজার কিলোওয়াট। সানে প্রায় শূন্য পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। ভিশন পাবলিকেশনস প্রকাশনার সংস্থার মনীষী আগারওয়াল হেমা সানেকে বহু দিন ধরে চেনেন। তিনি বলেন, ‘এটাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। এমনকি এ বয়সেও তিনি আমাদের সামনে অনুকরণযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। আমরা যে সম্পদ নষ্ট করি, তিনি তা সংরক্ষণ করেন। তিনি আমাদের পানি ও বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার কথা মনে করিয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করেন, তোমার এত বিদ্যুতের কেন প্রয়োজন? আমাদের জ্বালানি সংরক্ষণ করা উচিত। সন্তানদের জন্য আমরা কী রেখে যাব?’

উঠান ঝাঁড় দেওয়ার পর তিনি নিজেই কাপড় কাচেন। এমনকি দিনের প্রয়োজন মেটাতে নিজেই কুয়া থেকে পানি তোলেন। সানের বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের অভাব মোটেই অস্বাভাবিক মনে হয় না। হেমা সানে বলেন, ‘এই জীবন বড়ই যান্ত্রিকতায় ভরা। বিদ্যুৎ না থাকলেই আপনি অসহায় হয়ে পড়েন। টেলিভিশন ছাড়া শিশুরা কাজ করতে পারে না। মোবাইল ফোনের গেমস ছাড়া শিশুরা বাসায় বসতে পারে না। জীবনযাত্রা খুবই ভিন্ন।’

সারা দিন ধরে অনেক মানুষ তার সঙ্গে দেখা করতে ও ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা নিতে আসেন। অনেকে শুধু পরামর্শ বা গল্প করতেও আসেন। ব্যবসায়ী হিসেবে কৌস্তভ মুদগল বলেন, ‘ড. সানে আমাদের কাছে গুগলের মতো। তার কাছে বিদ্যুৎ, কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নেই বটে। কিন্তু অনেক বিষয়ে তার অসীম জ্ঞান রয়েছে। তিনি অনেক বিষয়ে আমাকে সাহায্য করেন। যেমন কোনো প্রবন্ধ লেখা বা প্রেজেন্টেশন তৈরি করার ক্ষেত্রে। হিন্দি চলচ্চিত্র, তার গান নিয়েও কথা হয়। সে বিষয়েও তার সুন্দর সব তথ্য জানা রয়েছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তার ঘরে মোমবাতি, তেল ও সৌরবাতি জ্বলে ওঠে। লণ্ঠনের পাশে বসে তিনি তার সর্বশেষ বই লেখার কাজ শেষ করছেন। এবারের বিষয় নক্ষত্রমন্ডল। লণ্ঠনের আলোয় তিনি এ পর্যন্ত ২০টি বই লিখেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close