নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৯

প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

২০১৮ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলার (১৫.৫৪ বিলিয়ন) পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠানো এই রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৪১ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৭ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এই হিসাবে ২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১২০ কোটি ২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা পাঠান ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন মুখী উদ্যোগে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তিনি মনে করেন, আগামী দিনেও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে প্রায় ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিট্যান্স আসে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিট্যান্স ওই সময় কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এরপর প্রতি বছরই রেমিট্যান্স কমে যেতে থাকে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে গিয়ে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলারে, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয় বাড়াতে হুন্ডি প্রতিরোধের অংশ হিসাবে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বর্তমানে ডলারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাবেও রেমিট্যান্স বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে ডলারের সংকট মেটাতে ব্যাংক তার নিজের স্বার্থেই ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আনার চেষ্টা করছে। সে কারণেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। শ্রমশক্তি রফতানি বেড়েছে। এরও একটা প্রভাব পড়েছে ২০১৮ সালে।

রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিট্যান্স আনতে বেশি উৎসাহী হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়াতে টাকার বিপরীতে ডলারের দর ৮৫ টাকায় স্থির করে দেওয়া উচিত।

তিনি জানান, ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তাদের নিজস্ব মুদ্রার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশেও হয়েছে; তবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন আরো হওয়া দরকার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসীরা ৭৪৮ কোটি ৮৪ লাখ (৭ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮০৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এদিকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রফতানি আয়েও সুবাতাস বইছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ২ হাজার ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ (২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রফতানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট রফতানি আয়ের ৮৩ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৭ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলারই এসেছে পোশাক খাত থেকে।

এদিকে রফতানি আয় ও প্রবাসী আয় বাড়ার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা) ছাড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ১২২ বিলিয়ন ডলারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close