সম্পাদকীয়

  ১৯ মার্চ, ২০২০

দেশে খাদ্য মজুদ পর্যাপ্ত, দুশ্চিন্তার কারণ নেই

আসন্ন রমজান নিয়ে মানুষের উৎকণ্ঠার কোনো শেষ নেই। প্রতি রমজানের আগে এ উৎকণ্ঠা অনেকটা হামলে পড়ার মতো সমাজের ফুসফুসের ওপর চেপে বসে। নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আর এবারে উপসর্গ একটির বদলে আরো একটি যুক্ত হয়েছে। যার দাপটে পুরো পৃথিবীর হৃদকম্পন শুরু হয়েছে। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারিনি।

করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর সব যোগাযোগ স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। ইতোমধ্যেই তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ঠিক এ রকম একটি অবস্থায় সাধারণ মানুষের জন্য একটি সুসংবাদ আছে।

ব্যবসায়ী ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাস সামনে রেখে দেশে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সমুদ্রপথে পরিবহন অব্যাহত থাকায় আমদানি করা পণ্য দেশে পৌঁছানোর অপেক্ষায় রয়েছে আরো কয়েক লাখ টন, যা রমজানের আগেই দেশে এসে পৌঁছাবে। ফলে আসন্ন রমজান কিংবা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না।

আবার বলতে হয়, সংবাদটি শুভ। তবে যতটা মেঘ গর্জায় বৃষ্টি ততটা হয় না। সংশ্লিষ্টদের এই আগাম বক্তব্য যেন এই প্রবচনের মতো না হয়ে যায়। আর সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা এখানেই।

তবু বলতে হয়, সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে উচ্চারিত শব্দাবলি যেন বেদবাক্যের মতো হতে পারে। এটি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষেরই মনের কথা। বাস্তবতাই সাধারণ মানুষকে বিশ্বাসহীনতার বৃত্তে বন্দি করে রেখেছে। তবু বিশ্বাস করতেই হয়। কেননা, বিশ্বাস হারিয়ে গেলে সমাজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। কলুষিত হয় সমাজ ব্যবস্থা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এ ছাড়া এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই। আর ঘাটতিরও কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে এখানে একটি কথা আছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কি বাজার নিয়ন্ত্রণে পারঙ্গম। সুদূর অথবা নিকট অতীত বলছে, না...! বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের এই ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই। এবারও যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয়। এটাই ভোক্তা পক্ষের করজোড়ে প্রার্থনা।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারের কাছে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল ও গমের মজুদ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার টন; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন বেশি। এ ছাড়া ১২ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে চাল ও গম আমদানি হয়েছে ৫১ লাখ ৭৯ হাজার টন। চালের পুরোটাই আমদানি করা হয়েছে বেসরকারিভাবে। চালের পরিমাণ ৪ হাজার টন। আমদানি ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে বেশির ভাগ পণ্যের দাম। পণ্যবাহী জাহাজ চলমান থাকায় আমদানির অপেক্ষায় রয়েছে আরো কয়েক লাখ টন পণ্য। যার মধ্যে রয়েছে ছোলা, মসুর ডাল, সাদা মোটর, ভোজ্যতেল, চিনি, পামঅয়েল, অপরিশোধিত সয়াবিন, রসুনসহ অন্য পণ্যসামগ্রী। যার প্রতিটিই বাজারের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।

আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সহায়তা বা অবহেলার কারণে এবারও যদি বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে, তাহলে এ দায় বহন করবে কে? অতীত বলছে, দায় বহন করার জন্য কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। সুতরাং আগে থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণের ভার সরকারকেই নিতে হবে। বাজারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণই পারে বাজারকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখতে। আমরা সেই কঠোরতাকে স্বাগত জানাই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,বাজার নিয়ন্ত্রণ,করোনাভাইরাস,খাদ্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close