পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা

  ২৬ মার্চ, ২০২০

কলকাতার স্ট্যান্ডে নেই কোনও সংবাদপত্র

কলকাতায় এখন সকালে অমিল সংবাদপত্র। ঘুম থেকে উঠেই সংবাদপত্রের জন্যে হাত বাড়ানো মানুষজন বুধবার থেকেই ধাক্কা খাচ্ছিলেন, বৃহস্পতিবার তা আরও জোরালো হয়েছে। সংবাদপত্র বিক্রেতা এবং এজেন্টরা করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রকাশক বা প্রিন্টিং হাউসগুলো থেকে কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে কলকাতা তো বটেই, শহরতলি বা জিলা শহরেও পৌঁছায়নি কোনো কাগজ। বাংলা ,ইংরেজি, হিন্দি ,উর্দু, কোনও ভাষার সংবাদপত্র পৌঁছায়নি বৃহস্পতিবার সকালের হকার স্ট্যান্ডে।

কলকাতার সর্বাধিক বিক্রিত এবং জনপ্রিয় আনন্দবাজার পত্রিকা, এই সময় বা দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত বর্তমান থেকে সংবাদ প্রতিদিন, আজকাল, যুগশঙ্খ, গণশক্তি কোনও কাগজই সেই ভাবে প্রকাশিত হয়নি। আবার, সর্বাধিক প্রচারিত প্রথম তিনটি সংবাদপত্রের তরফে সরকারিভাবে পাবলিকেশন বন্ধের ঘোষণাও দেওয়া হয়নি। সব খবর পাওয়া যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কাগজের ওয়েব বা আপ ভার্শনে।

এদিকে কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকার পর এবার রাজ্য সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তি মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে করোনা আতঙ্কের জেরে গত কয়েকদিন ধরে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সমস্ত সংবাদপত্রের সার্কুলেশন ব্যাপক কমে গিয়েছে। বহু মানুষ খবরের কাগজ নিচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই বর্তমান পত্রিকা গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয়, বুধবার কাগজ প্রকাশিত হলেও বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ থেকে কাগজের প্রকাশ বন্ধ রাখা হবে। এরপর গণশক্তি পত্রিকাও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশিত হবে না।গণশক্তি পক্রিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরবরাহ সংক্রান্ত সমস্যার কারণে গণশক্তির মুদ্রিত সংস্করণ পাঠকদের বিপুল অংশের কাছেই পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে গণশক্তির মুদ্রিত সংস্করণ আপাতত স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছে। কলকাতা, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুরের তিন সংস্করণেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুদ্রিত সংস্করণ পাঠকরা পাননি ।মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশিত না হলেও, গণশক্তির ই-পেপার আগের মতই বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দিনভর গণশক্তির অনলাইনে ওয়েব, পোর্টাল অ্যাপও চালু রয়েছে। গণশক্তি পক্রিকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব মুদ্রিত সংস্করণ ফের চালু হবে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই সমান্তরাল সংক্রমণ ইনফোডেমিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। প্রচার ছড়ানো হয়েছে সংবাদপত্র নিয়েও। সংবাদপত্র থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদপত্র গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছেছে, তাতে আদৌ সংক্রমনের আশঙ্কা নেই তা তুলে ধরতে হবে। অনেক সংবাদপত্রের তরফে সেই সম্ভাবনা যে একদম নেই তা বোঝাতে প্রচার করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। অনেক সংবাদপত্র যা ইতোমধ্যেই করেছে, সংক্রমণের তথ্য ভুল প্রমাণিত করতে।

কিন্তু সংবাদপত্র বিক্রেতা এবং এজেন্টরা করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রকাশক বা প্রিন্টিং হাউসগুলো থেকে কাগজ নেওয়া বন্ধ করলেও, মানুষ মানে সংবাদপত্র গ্রাহকরা গত সোমবার থেকেই কার্যত কাগজ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা হতেই যা আরও বেড়ে গিয়েছে। ফলে, গত দুদিনে প্রচুর অবিক্রিত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরতে হয়েছে সংবাদপত্র বিক্রেতাদের। তারপরই এই সিদ্ধান্ত।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কলকাতা,সংবাদপত্র,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close