নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ এপ্রিল, ২০১৮

রাতে অবৈধভাবে চলছে হাজারীবাগের ট্যানারি

হাজারীবাগের চামড়া ব্যবসায়ীদের গুদাম রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকা থেকে চামড়াশিল্পের কারখানাগুলো সাভারে চলে গেছে অনেক আগে। তাই হাজারীবাগে এখন আর কোনো চামড়া কারখানা থাকার কথা নয়। কিন্তু প্রতিদিন রাতে সরব হয়ে ওঠে ওই এলাকা। এরপর ভোর পর্যন্ত অবৈধভাবে চলে ট্যানারি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন রাত ১০টার পর ট্যানারিগুলোর ছিন্ন করা বিদ্যুতের সংযোগ বাঁশ বা অন্য কিছুর সাহায্যে লাগানো হয়। এরপর চলে ফিনিশড চামড়ার প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। কারখানার সামনের রাস্তায় কাউকে পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য অথবা সাংবাদিক মনে হলেই বেজে ওঠে এক ধরনের ‘নীরব’ সাইরেন। সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় বৈদ্যুতিক বাতি। থেমে যায় মেশিনের শব্দ। সন্দেহ কেটে গেলে আবার একইভাবে সরব হয়ে ওঠে হাজারীবাগের একসময়ের এই ট্যানারিশিল্প এলাকা। এভাবে চলে ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। এরপর আবার একই কায়দায় খুলে ফেলা হয় বৈদ্যুতিক সংযোগ। থেমে যায় মেশিন। নিভে যায় বাতি, বন্ধ হয় জেনারেটর।

ভোর ৬টার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সারাদিন পুরো হাজারীবাগ এলাকা স্বাভাবিক। তখন বোঝার উপায় থাকে না রাতভর কী কর্মযজ্ঞই না চলে এখানে। শুধু তা-ই নয়, অনেক কারখানা এখন হয়ে উঠেছে চামড়াশিল্পে ব্যবহার্য কেমিক্যালের গুদাম। বন্দর থেকে সরাসরি কেমিক্যালের ড্রাম ভর্তি কন্টেইনারবাহী লরি আসে হাজারীবাগে। রাত ১০টার পর থেকে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত আসে লরিগুলো। তখন পুরো হাজারীবাগ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এলাকাবাসীর প্রাইভেটকার, রিকশা, সিএনজি তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

গার্মেন্ট কারাখানার হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে চামড়ার কারখানা। অনেক কারখানার গেটে কিছুসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের বিজ্ঞাপনও ঝুলতে দেখা গেছে। অনেক কারখানার গেটে কুটিরশিল্প করার জন্য স্পেস ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন চোখে পড়েছে। এ বিষয়ে ওই কারখানার ভেতরে অবস্থানকারী লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কারখানার কেউ নন বলে জানান। সংবাদিক পরিচয়ে জানতে চাইলে দায়িত্ব পালনকারী নিরাপত্তাকর্মী সাজেদুল হক জানান, এখানে গার্মেন্টস কারখানা করা হবে। সে জন্য পুরান ভবন ভেঙে নতুন করে কারখান বানানো হচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগে ট্যানারির পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগাতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। ট্যানারি কারখানাগুলো চলে গেলে খালি জমিতে নতুন করে কোনো ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে দেওয়া হবে না। এখানকার প্রতি ইঞ্চি জমিতে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে এ ব্যাপারে একটি খসড়া রূপরেখা তৈরির কাজে হাত দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এখানে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করতে বহুতলবিশিষ্ট বহুমুখী বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হতে পারে। এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবনটির ১০ তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হবে। বাকি তলাগুলো থাকবে আবাসিকের জন্য।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্র জানিয়েছে, হাজারীবাগকে আধুনিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার হাজারীবাগের ট্যানারির জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করবে, নাকি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। এজন্য মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা চায়।

শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিক সূত্রে জানা গেছে, হাজারীবাগে ট্যানারিপল্লীর মোট জমির পরিমাণ ৭০ বিঘা। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে প্রথম ট্যানারি শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু হয়। পরে অনুকূল পরিবেশের কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৪ সালের ২৪ জানুয়ারি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে হাজারীবাগে ট্যানারিপল্লী করার অনুমোদন দেয়।

হাজারীবাগকে আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হাজারীবাগ এলাকার বর্তমান জরাজীর্ণ চেহারা আর থাকবে না। এই এলাকাকে শতভাগ নাগরিক সুবিধা দিয়ে একটি মডেল আবাসিক পল্লী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ বলেন, ‘হাজারীবাগ এলাকা থেকে ট্যানারিশিল্প পুরোপুরি চলে যাওয়ার পর এখানে সবুজ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি সুন্দর, পরিকল্পিত অঞ্চল গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু নয়। জমি অধিগ্রহণে সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা আছে। তবে তা করতে হলে জমির বিপরীতে ট্যানারি মালিকদের নেওয়া বিপুল ব্যাংক ঋণের দায়ও বহন করতে হবে সরকারকে।’

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাজারীবাগ,চামড়াশিল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist