reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মে, ২০১৭

নাটক

বলা হয়নি ভালোবাসি

রিহাব মাহমুদ

একটি ঘর। মাঝখানের দুটি চেয়ারে মুখোমুখি বসে আছে দু’জন। একজন লেখক। অপরজন এক ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের চেহারা দেখা যাবে না। লেখক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রেখে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে, বলুন, আপনার গল্পটা এবার শোনা যাক। ভদ্রলোকের ঠোঁট কেঁপে উঠে। বলতে শুরু করে এভাবে...রিহাব মাহমুদের লেখা একঘণ্টার নাটকের পুরো স্ক্রিপ্টটি প্রতিদিনের সংবাদের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

দৃশ্য-০১ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- লেখকের ড্রইংরুম। চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক সিরিজ অব শটস

১. ঘরের মাঝখানে একটি টেবিল। মুখোমুখি দুটি চেয়ার। একটি চেয়ারে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক বসে আছেন। চেহারা দেখানো হবে না।

২. টেবিলে দুটো চায়ের কাপ। ধোঁয়া উড়ছে।

৩. ভদ্রলোকের হাতের ক্লোজ। আঙুল নাড়াচাড়া করছে। একটা শব্দ হবে। আঙুল নাড়ানো থামবে।

৪. লেখক এসে সামনের চেয়ারে বসবে। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দেবে।

৫. ভদ্রলোক হালকা কাশি দেবে।

৬. লেখক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দৃষ্টি দেবে ভদ্রলোকের দিকে।

৭. লেখক চায়ের কাপ নামিয়ে রাখবে। এমন সময় লেখকের মোবাইল বাজবে। রিসিভ করে।

লেখক ঃ হ্যালো। ওয়ালাইকুম সালাম। এইতো ভাই, বেঁচে আছি। (শুনে) না ভাই, বিশেষ দিনের জন্য এখনো কোন স্ক্রিপ্ট লেখা হয়নি। আমি চেষ্টা করছি। ভাল কোন গল্প মাথায় এলে লিখে ফেলব। আপনি চিন্তা করবেন না। কয়েকটা দিন সময় দেন এরই মধ্যে আমি গল্পের প্লট ঠিক করে ফেলব। (শুনে) ঠিক আছে, রাখছি। ওয়ালাইকুম সালাম।

লেখক মোবাইল রেখে সামনে তাকাবে।

লেখক ঃ সরি, আপনাকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলাম। আপনার ধৈর্য্য দেখে আমি অবাক হয়েছি। আপনি এ নিয়ে তিনবার আমার এখানে এসেছেন। আপনি যেন কি বলতে চান।

ভদ্রলোক ঃ জ্বি-স্যার। আমি আপনাকে একটা গল্প শোনাতে চাই। আপনি আজ আমাকে সময় দেবেন বলেছেন।

লেখক ঃ ও-হ্যাঁ। গল্প। দেখুন, এভাবে গল্প শোনার অভ্যাস আমার নেই। তারপরও আপনি দেখছি নাছোড়বান্দা। চা খেয়েছেন?

ভদ্রলোক ঃ জ্বি।

লেখক ঃ গুড। এইবার আপনার গল্পটা শোনা যাক। সংক্ষেপে বলবেন। অযথা কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না।

ভদ্রলোক গলা খাকাড়ি দেবে।

কিছুক্ষণ নিরবতা। লেখক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ভদ্রলোক ঃ আমার গল্পটা একটু অন্যরকম। এটা কোন টিনএজ ছেলেমেয়ের গল্প নয়। এই গল্পের নায়ক নায়িকা যথেষ্ট ম্যাচিউরড। তারা দু’জনেই পার্সোনালিটি মেইনটেইন করে। ছেলেটা ৮ বছর পর সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে এসেছে বেড়াতে।

ইন্টারকাট দৃশ্য-০২ সময়- দিন, বাহির। স্থান- রাস্তা । চরিত্র- ছেলে, কেয়ারটেকার

{নিচের দৃশ্যগুলোর সাথে ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজ ওভার) ছেলেটার বাবা মা থাকে সুইজারল্যান্ড। ঢাকায় আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। বাবার এক বন্ধুর বাড়ি আছে উত্তরায়। খালি। আগে খবর দেয়া ছিল তাই কেয়ারটেকার ছেলেটিকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসে। ছেলেটি দেশে তিনমাস থাকবে এরকম প্ল্যান করেই এসেছে।

১. আকাশ থেকে প্লেন নামার দৃশ্য।

২. ছেলেটা চলন্ত ট্যাক্সির পিছন সিটে বসা। সামনের সিটে কেয়ারটেকার।

৩. ট্যাক্সি এয়ারপোর্ট রোড থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। ছেলেটা আশেপাশে তাকাচ্ছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে।

৪. ট্যাক্সি একটি বাড়ির সামনে এসে থামে। কেয়ারটেকার নেমে পিছন থেকে লাগেজ নামাবে। ছেলেটি নেমে চারদিকে তাকাবে। মুগ্ধ দৃষ্টি।

৫. ছেলেটি কেয়ারটেকারের পিছন পিছন পা বাড়াবে।

কাট টু

দৃশ্য-০৩ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- লেখকের ড্রইংরুম । চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক

ভদ্রলোকের হাতে চশমা। লেখক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ভদ্রলোক ঃ সেদিন ছেলেটি বাড়িতেই কাটায়। পরদিন বের হয় ঢাকা শহর ঘুরে দেখবে বলে। ছেলেটি মেয়েটিকে প্রথম দেখে একটি হ্যান্ডিক্রাফটসের দোকানে। মেয়েটি ওই দোকানেরই মালিক।

ইন্টারকাট দৃশ্য-০৪ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- হ্যান্ডিক্রাফটসের দোকান। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে, কর্মচারী, খদ্দের সিরিজ অব শটস

১. ছেলে দোকানের জিনিস ঘুরে ঘুরে দেখছে। জিনিস পছন্দ করছে।

২. মেয়ে দোকানের ভিতর ইন করে।

৩. ছেলের চোখ মেয়ের দিকে যাবে। প্রথম দৃষ্টিতা স্বাভাবিক। পরে আবার তাকাবে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

৪. মেয়ে কর্মচারীর সাথে মিউটে কথা বলে ডেস্কে বসে।

৫. ছেলে জিনিস পছন্দ করতে থাকে।

৬. মেয়ে খাতা খুলে হিসাব দেখতে থাকে।

৭. ছেলে কিছু জিনিস হাতে নিয়ে আড়চোখে মেয়েকে দেখে। তারপর সেদিকে এগিয়ে যাবে। জিনিসগুলো ডেস্কে রাখে।

৮. মেয়ে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে জিনিস দেখে দাম হিসাব করে।

মেয়ে ঃ টুয়েলভ ফিফটি।

কর্মচারী জিনিসগুলো প্যাকেট করে। ছেলে টাকা বের করে দাম মিটাবে। তারপর প্যাকেট নিয়ে বের হয়ে যাবে। মেয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।

কাট টু দৃশ্য-০৫ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- ছেলের ঘর। চরিত্র- ছেলে, কেয়ারটেকার।

ছেলে বিছানায় শুয়ে ভাবছে। এপাশ ওপাশ করে। কেয়ারটেকার ইন করে। ছেলে তাকাবে সেদিকে।

কেয়ারটেকার ঃ সকালের নাস্তায় চিকন চালের খিঁচুরি আর বেগুন ভাজা করলে কি খাবেন?

ছেলে উঠে বসে।

ছেলে ঃ খিঁচুড়ি আর বেগুন ভাজা। ওয়ান্ডারফুল, কতদিন খাইনি। খাবো, সঙ্গে মরিচ ভর্তা।

কেয়ারটেকার ঃ আচ্ছা।

ছেলে ঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো। এই বাড়িতে একা থাকতে আপনার ভয় করে না?

কেয়ারটেকার মৃদু হাসে তারপর কিছু না বলে চলে যাবে।

ছেলে তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াবে। তারপর পাশ থেকে কাউ বয় ম্যাগাজিন নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকে।

কাট টু দৃশ্য-০৬ সময়- দিন. বাহির। স্থান- দোকানের বিপরীত রাস্তা। চরিত্র- ছেলে

রাস্তায় গাড়ি চলাচলের দৃশ্য।

রিক্সা এসে থামে। ছেলে রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দেবে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে দোকানে দিকে। কিছু চিন্তা করবে। তারপর রাস্তা পার হতে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-০৭ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- দোকান। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে, কর্মচারী, খদ্দের

মেয়ে এক কাস্টমারের সাথে কথা বলছে। কাস্টমার চলে যাবে। ছেলে দোকানে ঢুকে একবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে শো পিচ দেখতে থাকে।

সময় কাটাবে। মেয়ে নিজের মতো কাজ করতে থাকে। ছেলে আড়চোখে দেখে। একটা জিনিস পছন্দ করে হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে। ডেস্কে রাখে। মেয়ে জিনিসটা দেখে বিল এগিয়ে দেবে।

ছেলে ঃ এক্সকিউজ মি, একটু কথা বলতে পারি?

মেয়ে ঃ হ্যাঁ, বলুন।

ছেলে ঃ আপনার দোকানে যা কিছু আছে সব জিনিসের প্রাইজ কত হতে পারে?

মেয়ে ঃ সরি?

ছেলে ঃ না মানে, দোকানের সব জিনিস যদি আমি কিনতে চাই? তাই...

মেয়ে ঃ (হেসে) এত জিনিস দিয়ে আপনি কি করবেন?

ছেলে ঃ নিয়ে যাবো।

মেয়ে ঃ (ভুঁরু কুঁচকে) নিয়ে যাবো মানে?

ছেলে ঃ নিয়ে যাবো মানে, আমি যেখানে থাকি সেখানে নিয়ে যাবো।

মেয়ে ঃ (মজার হাসি হেসে) কোথায় নিয়ে যাবেন?

ছেলে ঃ সুইজারল্যান্ড। আমি ওখানেই সেটেলড। কয়েকদিন হলো দেশে এসেছি।

মেয়ে ঃ ও আচ্ছা। (একটু সময় নিয়ে) দেখুন মিস্টার, আপনার কি মনে হচ্ছে না, একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে এভাবে মজা করাটা আপনার অন্যায়।

ছেলে ঃ আমি মোটেও মজা করছি না। আপনি দাম বলুন, আমি এখুনি সব কিছু কিনে তা প্রমাণ করে দিচ্ছি।

দোকানের কর্মচারীর চোখে কৌতূহল।

মেয়ে কিছুক্ষণ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ উচ্ছ্বসিত গলায় হেসে উঠে। মেয়ের হাসি দেখে ছেলের চোখেমুখে মুগ্ধতা।

ছেলে ঃ (অন্যরকম ভঙ্গিতে) বিশ্বাস করুন, আমি আপনার সাথে মজা করিনি।

মেয়ে ছেলের চোখের দিকে তাকাবে। তারপর দৃষ্টি সরিয়ে

মেয়ে ঃ আচ্ছা ঠিক আছে। বুঝলাম আপনি আমার দোকানের সব জিনিস একবারে কিনে নিবেন। কিন্তু আপনি আজ সব নিয়ে গেলে দোকান একদম খালি হয়ে যাবে। কাস্টমার এসে ফিরে যাবে। অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করবে। তারচেয়ে আপনি বরং কয়েকদিন পরে আসুন।

ছেলে ঃ কয়েকদিন পরে, কালকে আসি?

মেয়ে ঃ কেন?

ছেলে ঃ (থতমত খেয়ে) না, ঠিক আছে।

ছেলে প্যাকেটটি হাতে নিয়ে পা বাড়াবে। দরজায় গিয়ে ফিরে তাকাবে। মেয়ে তাকিয়েছিল। চোখাচোখি হতেই ছেলে মৃদু হেসে চলে যাবে। মেয়ে মজার হাসি হাসতে থাকে।

কর্মচারী ঃ আজব পাবলিক মনে হচ্ছে ম্যাডাম।

মেয়ে ঃ হুম। ইন্টারেস্টিং।

কর্মচারী ঃ ধান্ধাবাজও হতে পারে ম্যাডাম। খুব সাবধান।

মেয়ে তার কর্মচারীর দিকে চোখ বড় করে তাকাতেই কর্মচারী মাথা নিচু করে সরে যাবে।

কাট টু দৃশ্য-০৮ সময়- দিন, বাহির ও ভিতর। স্থান- রাস্তা, পার্ক ও মেয়ের দোকান। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে

{ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজওভার) মেয়েটিকে কিছুটা হলেও ইমপ্রেসড করতে পেরেছিল ছেলেটি। তার কারণ, ছেলেটির এপ্রোচে কোন ধরণের অভদ্রতা ছিলনা। দেশে আসার পর থেকে ছেলেটি সঙ্গীহারা। মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ছেলেটি তীব্র আকর্ষণবোধ করতে থাকে। তাইতো পরদিন ছেলেটি আবারও মেয়েটির মুখোমুখি হয়।

সিরিজ অব শটস

১. মেয়েটি আপনমনে চিন্তা করছে। হাসছে।

২. ছেলেটি দোয়েল চত্বর এলাকায় কোন স্থানে বসে আছে। ভাবছে।

৩. ছেলেটি ফুটপাত ধরে হাঁটছে।

৪. মেয়েটি দোকানে হিসাব করছে। কাস্টমার বিদায় করছে।

৫. ছেলেটি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

৬. রাতে লাইট পোস্টের নিচে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছেলে।

৭. হিসাব ক্লোজ করে মেয়ে দোকান থেকে বের হচ্ছে।

কাট টু দৃশ্য-০৯ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- দোকান। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে

মেয়ে ছোট্ট আয়নায় চেহারা দেখে চোখে মাশকারা দিচ্ছে। সামনে দাঁড়ানো ছেলে গলা খাকাড়ি দেবে। মেয়ে চমকে মুখ তুলে তাকাবে। তারপর ভুরু কুঁচকে তাকাবে। কিছুক্ষণ সময় নেবে।

ছেলে ঃ হ্যালো, চিনতে পারছেন?

মেয়ে ঃ ও হ্যাঁ-হ্যাঁ। আপনি? আপনার তো কয়েকদিন পরে আসার কথা।

ছেলে ঃ (হেসে) এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, দেখা করে যাই। মনে হচ্ছে, আপনি খুব বিজি। ঠিক আছে আমি যাই।

ছেলেটি দুই পা বাড়িয়ে আবার ফিরে আসে। মেয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাবে।

মেয়ে ঃ কিছু বলবেন?

ছেলে ঃ আপনার যদি আপত্তি না থাকে, দোকানের জিনিসগুলো আরেকবার দেখব।

মেয়ে ঃ আপত্তি থাকবে কেন। আপনি দেখুন। ভাল করে দেখুন। আফটার অল, আপনি আমাদের কাস্টমার।

ছেলে ঃ ধন্যবাদ।

ছেলে এগিয়ে যাবে। জিনিস দেখতে থাকে।

টাইম পাস। ছেলে জিনিস দেখে আর আড়চোখে মেয়েকে দেখে।

মেয়ে তাকায়। চোখাচোখি হলে ছেলে চোখ ফিরিয়ে নেবে।

কাস্টমার ঢুকছে। জিনিস কিনছে। বের হচ্ছে। মেয়ে ব্যস্ত।

ছেলে জিনিস দেখে। মেয়ের দিকে তাকাবে। মেয়ে তাকালে দ্রুত চোখ সরিয়ে খুঁটিয়ে জিনিস দেখার ভান করে। তা দেখে মেয়ে মৃদু হাসে।

টাইম পাস।

ছেলে হঠাৎ তাকিয়ে দেখে মেয়ে সেই জায়গায় নেই। ছেলে গলা বাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাবে। নেই।

এমন সময় ছেলের পাশ থেকে চায়ের কাপ ধরা একটি হাত। ছেলে চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখে মেয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে।

মেয়ে ঃ চা।

ছেলে ঃ ওহ, আপনি।

মেয়ে ঃ নিন। ধরুন।

ছেলে চায়ের কাপ হাতে নেবে। চুমুক দেবে।

ছেলে ঃ থ্যাঙ্কস। চা-টা অনেক ভাল। এরকম চা অনেকদিন খাইনি।

মেয়ে ঃ হুম। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। আপনি আমার দোকানের সব জিনিস একবারে কিনতে চান। কেন? আপনার কি অনেক টাকা? এত জিনিস দিয়ে আপনি কি করবেন?

ছেলে ঃ জানি না। তবে এটা ঠিক, এখানে যা আছে সব আমার পছন্দ হয়েছে। তাই সব কিনে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেবো।

মেয়ে ঃ এটাকে কি পাগলামি বলে না?

ছেলে ঃ আপনার কাছে তা মনে হতে পারে। আমার কাছে একদম পাগলামি না।

মেয়ে কিছু চিন্তা করে। চুপ করে থাকে। তা দেখে ছেলে বলে

ছেলে ঃ আমি এখানে বড্ড একা।

মেয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাবে।

ছেলে ঃ কথা বলে সময় কাটানোর মতো কেউ নেই।

মেয়ে ঃ স্ট্রেঞ্জ!

ছেলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। মেয়ে তাকিয়ে থাকে।

ছেলে ঃ দেশে আসার পর একমাত্র আপনার সাথেই দুটো কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আপনাকে কি বন্ধু হিসেবে পেতে পারি?

মেয়ে ঃ এত তাড়াতাড়ি?

ছেলে ঃ (ভড়কে গিয়ে) জ্বি?

মেয়ে হো হো করে হেসে উঠে। ছেলে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

ছেলে ঃ সরি, এভাবে বলাটা হয়তো আমার ঠিক হয়নি।

মেয়ে ঃ তাহলে বললেন কেন?

ছেলে ঃ সরি। এক্সট্রেইমলি সরি। আসলে দীর্ঘদিন ধরে বাইরে থাকি তো। তাই এখানকার কালচার ভুলেই গিয়েছিলাম। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

মেয়ে মৃদু হেসে মাথা নিচু করে।

কাট টু দৃশ্য-১০ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- লেখকের ড্রইংরুম। চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক

ভদ্রলোক হাতের তালু চুলকাচ্ছে। ক্লোজ। লেখক তাকিয়ে আছে। লেখকের বিভিন্ন এক্সপ্রেশন। ভদ্রলোকের বিভিন্ন ভঙ্গীর ক্লোজ।

ভদ্রলোক ঃ মুখে না জানালেও ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল। ছেলেটি প্রতিদিন আসে দোকানে। ছেলেটার মনে হলো সে চমৎকার একজন বন্ধু পেয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে তারা একে অপরের সঙ্গ দারুনভাবে উপভোগ করে। এভাবে দিন পার হয়। বন্ধুত্বের বাইরেও তাদের অবচেতন মন কি যেন চায়। কিন্তু কেউ কাউকে আবেগতাড়িত কোন কথা বলতে পারে না। ছেলেটি যেমন বুঝতে পারে, তেমনি মেয়েটিও বুঝতে পারে একে অপরের প্রতি ভাললাগা। অথচ মুখ ফুটে কেউ বলতে পারে না। যদি ফিরিয়ে দেয়। তাহলে যে নিজেদের কাছেই ছোট হয়ে যাবে। ছেলেটি চায় মেয়েটি আগে বলুক, তেমনি মেয়েটি চায় ছেলেটি আগে বলুক। আমি তোমাকে চাই অথবা ভালবাসি। এভাবে একদিন...

কাট টু

দৃশ্য-১১ সময়- দিন, বাহির। স্থান- কফি হাউস। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে

ছেলে মেয়ে মুখোমুখি বসে আছে। তাদের সামনে জুসের গ্লাস।

মেয়ে ঃ তুমি রবীন্দ্রনাথ পড়েছ?

ছেলে ঃ বেশিরভাগই পড়েছি। আমি রবীন্দ্রনাথের একনিষ্ঠ ভক্ত বলতে পার। আমি আর বাবা ওনার ভীষণ ফ্যান। কিন্তু মা ঠিক তার উল্টো। মায়ের ধারণা রবীন্দ্রনাথ অনেক কঠিন ভাষা ইউজ করেছে। এ নিয়ে আমরা বাপ বেটা প্রায়ই মায়ের পিছনে লাগি। আর মা এমন ক্ষেপা ক্ষেপেন।

মেয়ে ঃ (হেসে) আচ্ছা, ওখানে তো তোমার অনেক বন্ধু, তাইনা?

ছেলে ঃ অস্বীকার করব না। ওখানে আমার অনেক বন্ধু। কিন্তু তোমার মতো একজনও নেই।

মেয়ে হাসে। এমন সময় ছেলের মোবাইল বাজে।

ছেলে ঃ এক্সকিউজ মি। বাবা ফোন করেছে। হ্যালো, হ্যাঁ বাবা, আই এম ফাইন। মা কেমন আছে? (শুনে) রিয়েলি? আই নো দ্যাট। (শুনে) কবে আসব জানি না। ভাবছি, এখানেই সেটেলড হবো। তোমার সাথে এ নিয়ে পরে কথা বলব। পরে ফোন দিও। মায়ের দিকে খেয়াল রেখো। ওকে, টেক কেয়ার, বাই।

মেয়ে তাকিয়েছিল। ছেলে মোবাইল রেখে তাকাবে।

ছেলে ঃ তুমি আমার একটা হেলফ করতে পারো?

মেয়ে ঃ কি রকম?

ছেলে ঃ তোমার দোকানের সব জিনিস আমি কিনতে চেয়েছি। রাইট?

মেয়ে ঃ হুম।

ছেলে ঃ এমন কি হতে পারে না, আমি তোমার পার্টনার হয়ে গেলাম। তারপর দুজনে মিলে বিজনেসটাকে অনেক বড় করব।

মেয়ে ঃ আর ইউ ম্যাড? তুমি না সুইজারল্যান্ড ফিরে যাবে?

ছেলে ঃ যদি না যাই।

মেয়ে ঃ মানে?

ছেলে ঃ আমি ঠিক করেছি, আমি আর ফিরে যাবো না। এখানেই থাকব।

মেয়ের চোখেমুখে একটা ভাললাগা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সে তখনি নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু হাসে।

ছেলে ঃ কি, রাজী তো?

মেয়ে ঃ ভেবে দেখি।

দু’জনে মিউটে কথা বলতে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-১২ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- মেয়ের রুম। চরিত্র- মেয়ে

মেয়ে শুয়ে আছে। ভাবছে। ঠোঁটে মৃদু হাসি।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-১২ক সময়- রাত, ভিতর। স্থান- ছেলের ঘর। চরিত্র- ছেলে

ছেলে ফ্লোরে বসে আছে খাটে হেলান দিয়ে। কোলে একটি বালিশ। ভাবছে। হঠাৎ মনে পড়তেই মোবাইল নিয়ে

ফোন দেবে।

{ছেলে ও মেয়ের মধ্যে মোবাইল কথন}

ফোন বাজছে। মেয়ে নাম্বার দেখে রিসিভ করে।

মেয়ে ঃ হ্যালো।

ছেলে ঃ বন্ধু হিসেবে এত রাতে ফোন করে খবর নেয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই দোষের কিছু নেই?

মেয়ে ঠোঁট টিপে হাসে।

মেয়ে ঃ তা অবশ্য নেই। কিন্তু কি খবর জানতে চাও?

ছেলে ঃ এ্যাই, বন্ধুটি এখন কি করছে?

মেয়ে ঃ বন্ধুটি এখন ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

ছেলে ঃ তাহলে তো বড় ভুল হয়ে গেল। ঠিক আছে, রাখছি। গুড নাইট।

মেয়ে ঃ গুড নাইট।

লাইন কেটে গেল। মেয়ে থতমত খাবে। ভাবটা এমন সে এটা চায়নি। মোবাইলের দিকে তাকাবে। মনে হচ্ছে

এই বুঝি আবার রিং বাজবে। কিন্তু ফোন আসে না। মোবাইল হাতে নেবে। ডায়াল করতে গিয়ে কিছু চিন্তা করে

থেমে যাবে। অপেক্ষা করতে থাকে।

অপেক্ষা করার বিভিন্ন শট।

ছেলে গম্ভীরমুখে বসে আছে। আফসোস হচ্ছে কেন ফোন দিতে গেল। মোবাইলের দিকে তাকাবে।

{ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজওভার) এমনটা হবে দুজনের কেউই আশা করেনি। ছেলেটির মনে হয় মেয়েটি তার ফোন পেয়ে খুশি হয়নি। আর ওদিকে মেয়েটি, অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেটির ফোনের অপেক্ষা করে। এভাবে যখন দুজনের মনে স্বপ্নগুলো বাসা বাঁধতে শুরু করেছে তখন, ঠিক তার পরদিন....

কাট টু

দৃশ্য-১৩ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- মেয়ের ড্রইংরুম। চরিত্র- বাবা, মা, মেয়ে

বাবা মা ড্রইংরুমে বসে কথা বলছে।

বাবা ঃ পাত্র হিসেবে তৌফিক খারাপ না। বংশ ভালো। তাছাড়া সে নিজেও একটি বায়িং হাউজ চালায়। এমন পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না, তুমি কি বলো?

মা ঃ তা তো বুঝলাম। তোমার মেয়ের মতামতটা আগে নাও। দেখো ওর কোন পছন্দ টছন্দ আছে কিনা।

বাবা ঃ ঠিক বলেছো। তোমার কি মনে হয়, ওর কোন পছন্দ আছে?

মা ঃ সেরকম তো কিছু মনে হয়নি। ও তো সারাক্ষণ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কথা বলে দেখো।

এমন সময় মেয়ে ইন করে। বাহিরে যাচ্ছিল সে।

মেয়ে ঃ মা, বাবা আমি যাচ্ছি। আজকে আর লাঞ্চ নিলাম না, বাইরে খেয়ে নেবো।

এদিকে একটু আয় তো মা। তোর সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।

মেয়ে বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাবে। মা হাত ধরে পাশে বসাবে।

বাবা ঃ কথাটা সরাসরিই বলি। আমরা তোর বিয়ের ব্যাপারে ভাবছি।

মেয়ে ঃ বিয়ে?

মা ঃ ভাল সম্বন্ধ। ছেলে খারাপ না।

বাবা ঃ আমরা তোর মতামত জানতে চাচ্ছি। অবশ্য তোর যদি কোন পছন্দ থাকে বল। আমরা তাও বিবেচনা করবো।

মা ঃ হ্যাঁ মা, তোর কি কোন পছন্দ আছে?

মেয়ে ঃ (চিন্তা করে) তোমরা আমাকে ২ দিন সময় দাও। তারপর আমি আমার ডিসিশান জানাবো।

বাবা ও মা একে অন্যের দিকে তাকাবে। মেয়ে উঠে দাঁড়াবে।

মেয়ে ঃ আর কিছু বলবে?

বাবা ঃ না ঠিক আছে। পরে জানালেও হবে।

মেয়ে ঃ আমি আসি।

মেয়ে চলে যাবে। বাবা মা সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-১৪ সময়- দিন, বাহির। স্থান- কোন খোলামেলা সুন্দর জায়গা। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে

মেয়ে সামনে, ছেলে কিছুটা পিছনে দাঁড়ানো যাতে কেউ কারো এক্সপ্রেশন না দেখে।

ছেলে ঃ হঠাৎ এখানে নিয়ে এলে যে?

মেয়ে ঃ একটা খুব ইমপর্টেন্ট খবর দেবো বলে।

ছেলের গভীর আগ্রহে তাকাবে।

মেয়ে ঃ আমার বিয়ে।

ছেলে চমকে উঠে।

মেয়ে ঃ খুব শিগগির বিয়ের দিন ঠিক হবে।

মেয়ে ফিরে তাকাচ্ছে দেখে ছেলে দ্রুত নিজেকে সামলে নেবে। মুখ হাসিহাসি করে।

ছেলে ঃ তোমার বিয়ে! আরে এ তো খুশির খবর। বর কি করে? দেখতে কেমন? নিশ্চয়ই খুব সুন্দর দেখতে?

মেয়ে সইতে না পেরে দ্রুত অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ভাবটা এমন; এমন উত্তর সে আশা করেনি।

মেয়ে ঃ ছেলে দেখতে রাজপুত্রের মতো। তুমি খুশি তো?

ছেলে ঃ অবশ্যই খুশি। তোমার বিয়ে আর আমি খুশি হবো না। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে?

মেয়ে ঃ বিয়েটা তাড়াতাড়ি হওয়াই ভালো। তাছাড়া ভালো সম্বন্ধ কি কেউ মিস করে।

ছেলে ঃ ও।

দুজনের চেহারা ভারাক্রান্ত। কিন্তু কেউ কাউকে দেখায় না।

মিউট শট

ছেলে মেয়ে দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে। কখনো নিরব। কখনো কোন কথা বলছে। হাসিমুখে জবাব দেবার চেষ্টা

করছে। রাস্তায় এসে দাঁড়াবে। মেয়েটি একটি রিক্্রায় উঠে। চলে যাচ্ছে। ছেলে তাকিয়ে থাকে।

{মিউট শটের উপর ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজওভার) এটা অপ্রত্যাশিত। ছেলেটার মনে হলো তার পৃথিবীটা বুঝি কেউ নাড়া দিয়ে দিয়েছে। মহাপ্রলয় বুঝি শুরু হয়ে গেছে। ভাবল, মেয়েটা বুঝি তাকে ভালবাসে না, তাই বিয়েতে রাজী হয়েছে। এখন কি করবে সে? তার সব স্বপ্ন যে হারিয়ে যেতে বসেছে। মেয়েটিও ভাবেনি তার বিয়ের কথা শুনে ছেলেটি এরকম প্রতিক্রিয়া করবে। তার মনে হলো সে যে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ছেলেটা তাকে ভালবাসে না। সে কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে। কাকে তার জীবন, যৌবন বিলিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছিল। এক বুক কষ্ট নিয়ে ফিরে গেল মেয়েটি।

কাট টু

দৃশ্য-১৫ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- মেয়ের ড্রইংরুম। চরিত্র- বাবা, মা, মেয়ে

তিনজন মুখোমুখি।

মেয়ে ঃ এ বিয়েতে আমার অমত নেই। তোমরা বিয়ের আয়োজন করো।

মা, বাবা হাসিমুখে একে অন্যের দিকে তাকাবে।

মা ঃ তোর মঙ্গলের কথা চিন্তা করেই আমরা...

বাবা ঃ হ্যাঁ মা, তুই আমাকে বাঁচালি। আমি কালকেই ওদের আসতে বলছি। তারপর একটা শুভ দিন দেখে তারিখটা ফাইনাল করে ফেলব।

মেয়ে মাথা নিচু করে চলে যাবে। বাবা, মা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-১৬ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- একটি ঘর। চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক

লেখক তাকিয়ে আছে গভীর দৃষ্টিতে।

লেখক ঃ তারপর?

ভদ্রলোক ঃ সবকিছুর পরেও কোথায় যেন একটা কিন্তু থেকে যায়। মেয়েটি ভাবে এই বুঝি ছেলেটি তার কাছে ফিরে আসবে। আর ছেলেটি ভাবে এই বুঝি মেয়েটি তার কাছে ফিরে আসবে। প্রচন্ড অভিমান, প্রচন্ড কষ্ট দুজনের মনে। ছেলেটি সিদ্ধান্ত নেয় সে সুইজারল্যান্ড ফিরে যাবে। মেয়েটির বিয়ের দিনও ঠিক হয়

কাট টু

দৃশ্য-১৭ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- মেয়ের ড্রইংরুম। চরিত্র- বাবা, মা

বাবা ও মা বসে কথা বলছে।

মা ঃ ছেলের বাবা মাকে কিন্তু আমার যথেষ্ট ভদ্র মনে হয়েছে।

বাবা ঃ (হেসে) আমি তো সব জেনেশুনেই বিয়েটা পাকা করেছি। আগামী মাসের ২ তারিখ বিয়ে। মেয়েকে জানিয়েছো?

মা ঃ (মাথা নেড়ে) হ্যাঁ।

বাবা ঃ আচ্ছা, একটা ব্যাপার খেয়াল করছি কয়েকদিন ধরে। আমাদের মেয়ে কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কি বলতো?

মা ঃ ও কিছু না। বিয়ের কথা শুনলে মেয়েদের এমনিতেই মন খারাপ হয়। বুঝ না, আমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

বাবা ঃ ঠিকই বলেছো। আমাদের তো ওই একটাই মেয়ে। ও চলে গেলে আমাদেরও তো খারাপ লাগবে। ভাল কথা, মেয়ে কি করছে?

মা ঃ কি আর করবে, শুয়ে পড়েছে হয়ত। চলো আমরাও শুয়ে পড়ি।

বাবা মা উঠে দাঁড়াবে।

কাট টু

দৃশ্য-১৮ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- মেয়ের ঘর। চরিত্র- মেয়ে

মেয়ে শুয়ে আছে। চোখ ভিজা ভিজা। ভাবলেশহীন দৃষ্টি। উঠে দাঁড়াবে। ধীরে ধীরে হাঁটবে। আবার বসবে খাটে।

উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-১৯ সময়- রাত, ভিতর। স্থান- ছেলের ঘর। চরিত্র- ছেলে

ছেলে রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে পা খাটের উপর তুলে শুয়ে আছে। ভাবছে।

{এই দৃশ্যে ছেলে ও মেয়ের কিছু রিপিট শট এবং কিছু নতুন শট দিয়ে একটা রোমান্টিক গান হতে পারে}

আকাশে চাঁদ মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।

{ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজওভার) মেয়েটির বিয়ের দিন খুব বেশি দেরি নেই। তার এক সপ্তাহ আগেই ছেলের ফ্লাইট। এয়ারপোর্ট রওয়ানা দেবার আগেই ছেলেটি মেয়েটিকে ফোন করে।

কাট টু

দৃশ্য-২০ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- ছেলের ঘর। চরিত্র- ছেলে, কেয়ারটেকার

লাগেজ গোছানো শেষ। কেয়ারটেকার লাগেজ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। ছেলে মোবাইল হাতে কিছুক্ষণ

চিন্তা করে। তারপর ডায়াল করে।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-২০ক সময়- দিন, ভিতর। স্থান- মেয়ের ঘর। চরিত্র- মেয়ে

বিছানার উপর রাখা মোবাইল বাজবে। ঘরে কেউ নেই। খানিকপর মেয়ে দ্রুত ইন করে। মোবাইল হাতে নেবে।

নাম্বার দেখে রিসিভ করে।

মেয়ে ঃ হ্যালো।

{ছেলে ও মেয়ের মোবাইলকথন}

ছেলে ঃ বিয়ের আনন্দে বন্ধুকে ভুলে গেলে?

এই কথায় প্রচন্ড কষ্টে চোখ বন্ধ করে মেয়ে। তারপর চোখ খুলে।

মেয়ে ঃ ভুলে কি আমি একা গেছি। তুমিও তো আমাকে ভুলে গেছো।

ছেলে ঃ আসলে এই কয়দিন প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম। খুব দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে।

মেয়ে ঃ কেন?

ছেলে ঃ আসলে কিভাবে যে কথাটা বলি, সরি, তোমার বিয়েতে আমি থাকতে পারছি না।

মেয়ে শোনার অপেক্ষায়

ছেলে ঃ বাবার অসুখটা বেড়েছে। তাই আমি ফিরে যাচ্ছি। এখন থেকে আর দু’ঘন্টা পরে আমার ফ্লাইট।

মেয়ে চমকে উঠে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। এ কি শুনছে সে।

মেয়ে ঃ তোমার তো ফিরে যাবার কথা ছিল না। তাহলে...

ছেলে চুপ করে থাকে। মেয়ে অপেক্ষা করছে।

মেয়ে ঃ কি হলো, কথার জবাব দিচ্ছ না যে?

ছেলে ঃ হ্যাঁ। আমি যে এখানে থাকব। কার জন্য? কিসের জন্য? এখানে কি কেউ আছে আমার। যার জন্য থাকব। যার জন্য থাকতে চাই সে কি আর আমাকে চায়। সব মিথ্যা। ভুল ভেবেছিলাম।

মেয়ের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছেলের শেষ কথাগুলো রিপিট হচ্ছে।

ছেলে অপেক্ষা করে আছে মেয়ে কিছু বলবে।

মেয়ে বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সময় পাস হয়।

ছেলে অভিমান করে। লাইন কেটে দিয়ে মোবাইলটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-২০খ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- মেয়ের ঘর। চরিত্র- মেয়ে

মেয়ের চোখেমুখে খুশির উচ্ছ্বাস। দ্রুত ছেলের নাম্বারে ডায়াল করে।

ইন্টারকাট

বিছানায় পড়ে থাকা মোবাইলে রিং হচ্ছে।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-২১ সময়- দিন, বাহির। স্থান- ছেলের বাড়ির সামনে। চরিত্র- ছেলে, কেয়ারটেকার

বাড়ির সামনে একটি ট্যাক্সি ক্যাব দাঁড়িয়ে। ছেলে আসতেই কেয়ারটেকার দরজা খুলে ধরে। ছেলে পিছনের সিটে

বসে। কেয়ারটেকার উঠে সামনের সিটে। ট্যাক্সি ছেড়ে দেবে।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-২২ সময়- দিন, ভিতর ও বাহির। স্থান- মেয়ের ঘর, ছেলের ঘর ও রাস্তা। চরিত্র- ছেলে, মেয়ে, কেয়ারটেকার সিরিজ অব শটস

১. মেয়ে মোবাইলে রিং দিচ্ছে। কানে দিয়ে অপেক্ষা করছে।

২. ছেলের ঘরে বিছানায় মোবাইল বাজছে।

৩. ট্যাক্সি ছুটে চলছে। ছেলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

৪. মেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। ফোনের পর ফোন করছে।

৫. ছেলের মোবাইল বাজছে।

৬. মেয়ে মোবাইল কানে নিয়ে অপেক্ষা করছে।

৭. ছেলের মন অস্থির। ভাল লাগছে না। সামনে তাকাচ্ছে।

৮. মেয়ে ফোন দিচ্ছে।

মেয়ে ঃ (ফিসফিস করে) প্লিজ, একবার ফোন উঠাও। শুধু একবার। আমি বলব, আমি বলব আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে যেতে দেব না। প্লিজ, ফোন উঠাও।

৯. ছেলে মন খারাপ করে ভাবছে।

ছেলে ঃ (ভয়েজ ওভার) ও কেন কিছু বলল না। আমি তো আত্মসমর্পন করেই ছিলাম। সে কি আমার মনের কথাটা বুঝেনি। আর কি কোনদিন দেখা হবে না। আমার এমন লাগছে কেন। আমার মন বারবার পিছন দিকে ফিরে যেতে চাচ্ছে কেন।

১০. মেয়ে ফোন দিচ্ছে। অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে ছুটাছুটি করছে।

১১. ছেলের মোবাইল বাজছে। বেজেই চলেছে।

১২. ছেলে অস্থির।

১৩. মেয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। দুহাতে নিজের চুল টানছে। বুক ফেটে কান্না চলে আসছে। মেয়ে নিজেকে আর রুখতে পারে না। অদম্য কষ্টে বুক ফাটা কান্না বের হয়ে আসে।

১৪. ছেলে চোখ বন্ধ করে ভাবছে। বুকে হাত বুলাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে।

১৫. মেয়ে ঢুকরে কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ বুক ফাটা একটা আত্মচিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

১৬. প্রচন্ড শব্দে গাড়ি ব্রেক করে। ড্রাইভার ফিরে তাকাবে।

কেয়ারটেকার ঃ হঠাৎ এইখানে গাড়ি থামাতে বললেন যে?

ছেলে হাঁপাচ্ছে।

ছেলে ঃ ফিরে চলো।

কেয়ারটেকার ঃ কোথায়?

ছেলে ঃ বাসায়।

গাড়ি টার্ণ নিয়ে ফিরে আসতে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-২৩ সময়- দিন, বাহির ও ভিতর। স্থান- বাড়ির সামনে ও ছেলের ঘর। চরিত্র- ছেলে

গাড়ি থামতেই ছেলে দ্রুত নেমে দৌঁড়ে ভিতরে ঢুকে যাবে।

ইন্টারকাট

ঘর

ছেলে ঘরে ঢুকে মোবাইল হাতে নিতেই বিস্ময়ে বিমুঢ হয়ে যাবে। মোবাইলের স্ক্রিণের ক্লোজ। ১১০ মিসড কল লেখা। ছেলে চেক করে দেখে মেয়ে ফোন করেছে। ছেলে দ্রুত ফোন করে।

কাট টু

দৃশ্য-২৪ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- একটি ঘর। চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক

ঘর নিস্তব্দ। লেখক বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে। ভদ্রলোকের হাত কাঁপছে।

লেখক ঃ তারপর? তারপর কি হলো?

ভদ্রলোক ঃ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল মেয়েটি তাকে ফোন করে কি বলতে চেয়েছিল। আর মেয়েটিও বুঝেছিল ছেলেটি তার উপর অভিমান করে ফিরে যাচ্ছে। বাসায় ফিরে ছেলেটি যখন দেখল মেয়েটি তাকে এতবার ফোন করেছিল তখন তার পাগল মন ঢুকরে কেঁদে উঠেছিল। তাইতো সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের নাম্বার সে ফোন করল। কিন্তু ফোন ধরল মেয়েটির বাবা। ছেলেটি জানতে পারল মেয়েটি তখন হাসপাতালে।

আবারও ঘরে নিরবতা।

ভদ্রলোক ঃ জানেন, এর পরের ঘটনা অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার। এরকম তো হবার কথা ছিল না। মেয়েটা এত বেশি মনে আঘাত পেয়েছিল যে, সে সুস্থ হলো ঠিকই কিন্তু আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো না। হ্যাঁ, মেয়েটি পাগল হয়ে গেলো। ছেলেটিও আর ফিরে গেল না।

ইন্টারকাট

দৃশ্য-২৫ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- মেয়ের ঘর। চরিত্র- মেয়ে, বাবা, মা, ছেলে

দিনের বাড়ির আউট ভিউ। মেয়ের হাসির শব্দ। গলা ফাটানো হাসি।

খাটে এলোমেলো বেশে বসে আছে মেয়ে। পা শিকল দিয়ে বাঁধা। পাশে মা। অদূরে বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মা বাটি আর চামচ হাতে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। মেয়ে খাচ্ছে না।

মেয়ে ঃ যা, যা বলছি। সর। সর সামনে থেকে। (আবারও হাসি)

মা আঁচলে চোখ মুছে।

ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করে ছেলে। মেয়ে তাকাবে। নিরবে তাকিয়ে থাকে।

মেয়ে ঃ (আদুরে গলায়) তুমি এসেছো? এসেছো আমার রাজপুত্র। কোথায় চলে গিয়েছিলে? তুমি জানো না, তোমাকে না দেখলে আমার ভাল লাগে না। বলো, আর যাবে না। আর যাবে না আমাকে ছেড়ে।

ছেলে এগিয়ে পাশে বসে।

ছেলে ঃ আর যাবো না, কোনদিন যাবো না তোমায় ছেড়ে। এবার লক্ষী মেয়ের মতো এটা খেয়ে নাও।

{ডায়লগ ওভারলেপ হবে}

ভদ্রলোক ঃ (ভয়েজওভার) ছেলেটি প্রতিমুহূর্তে অপেক্ষা করে মেয়েটা একদিন ভাল হয়ে যাবে। সব আগের মতো। এবার তারা একে অন্যকে বলবে আমি তোমাকে ভালবাসি। ছেলেটি প্রতি রাতে ঘুমুতে যাবার আগে স্বপ্ন দেখে সকালে ঘুম ভেঙ্গে সে নতুন সূর্য দেখবে। একটি নতুন দিন। সুন্দর দিন। বিশ্বাস করেন, ছেলেটার মনে এত কষ্ট! সে কাকে বুঝাবে। কাকে দেখাবে। তার ভালবাসার মানুষ কি কোনদিন স্বাভাবিক হবে না?

সিরিজ অব শটস

১. ছেলে মায়ের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে চামচ তুলে খাইয়ে দিতে থাকে।

২. মেয়ে খাচ্ছে। ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

৩. বাবা ও মা ঘর থেকে বের হয়ে যাবে।

৪. ছেলে চিরুনি দিয়ে মেয়ের মাথার চুল আঁচড়ে দেবে।

৫. ছেলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। মেয়েও ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

৬. মেয়ে ঘুমাচ্ছে। ছেলে পাশে বসে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ঘুমিয়েছে মনে করে যেই না উঠতে চাইবে অমনি দেখে মেয়ে তার জামা টেনে ধরেছে। মেয়ে উঠে বসে হাসতে থাকে।

৭. মেয়ে বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমি করতে থাকে। পাগলামি করতে থাকে।

৮. ছেলে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

কাট টু

দৃশ্য-২৬ সময়- দিন, ভিতর। স্থান- একটি ঘর। চরিত্র- লেখক, ভদ্রলোক।

ঘরে নিরবতা। লেখক চোখ মুছে। নিজেকে সামলাবে। তাকাবে।

লেখক ঃ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। এতক্ষণ যে গল্পটি আপনি শোনালেন, সে গল্পের ছেলেটি কি আপনি?

ভদ্রলোকের ঠোঁট কাঁপছে। এমন সময় মোবাইল বাজে।

দর্শকের পরিচিত রিংটোন। ভদ্রলোক তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে। আমরা দর্শক দেখব সেই মোবাইল। এবার ভদ্রলোকের চেহারা দেখানো হবে। মোবাইল কানে নিয়ে কথা বলছে। চোখ বেয়ে অশ্র“ গড়িয়ে পড়ছে।

ছেলে ঃ হ্যালো, জ্বি, আমি আসছি।

ছেলে মোবাইল রাখে। লেখক উঠে দাঁড়াবে। ছেলেও উঠে দাঁড়াবে। লেখক এসে তাকে জড়িয়ে ধরবে।

লেখক ঃ আমি কথা দিচ্ছি, এই গল্পটা আমি লিখব। আর এটাই হবে আমার সেরা গল্প।

ছেলে চোখ মুছে। তাকাবে। হাসার চেষ্টা করবে।

কাট টু

দৃশ্য-২৭ সময়- দিন, বাহির। স্থান- খোলা মাঠ। চরিত্র- ছেলে

ছেলের পায়ের শট। ধীরে হেঁটে যাচ্ছে। দাঁড়াবে। আকাশের দিকে তাকাবে।

ইনসাটে মেয়েকে দেখা যাবে। পাগলামি করছে। পুতুল নিয়ে খেলা করছে। হাসছে।

ছেলে ঃ (ভয়েজওভার) আমার বুকের ভিতর জমাট বাঁধা কষ্টটা আমাকে এতটাই বিষন্ন করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ওই দূর পাহাড়ের উঁচু থেকে একখন্ড পাথর এসে আমার বুকের উপর চেপে বসে আছে। আমি কেমন করে এই ভার সহ্য করব! (কান্না) কাকে বুঝাব আমি, আমার এত কষ্ট! সে কি আর ভাল হবে না! এমন হলো কেন! ভালবাসায় এত কষ্ট কেন! (কান্না) সে তো সব কিছুর উর্ধ্বে। আমার এই কষ্ট কি সে বুঝতে পারে না? কবে সুস্থ হবে সে? কবে......

ফ্রিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বলা হয়নি,ভালোবাসি,নাটক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist