নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

প্রাণের ভাষা এবং বর্তমান প্রজন্ম

‘রক্ত শপথে আমরা আজিকে তোমারে স্মরণ করি/একুশে ফেব্রুয়ারি/দৃঢ় দুই হাতে রক্ত পতাকা ঊর্ধ্বে তুলিয়া ধরি/একুশে ফেব্রুয়ারি/তোমাকে স্মরণ করি।’ মাতৃভাষা আন্দোলন একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষায় বাংলাভাষা ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি এ আন্দোলন চূড়ান্তরূপ ধারণ করলেও বস্তুতপক্ষে এর বীজবপন হয়েছিল অনেক আগে। এর প্রতিক্রিয়া এবং ফল ছিল সুদূরপ্রসারী। এটি একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যার মধ্য দিয়ে এসেছে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা।

তাই বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষায় আমরা কথা বলি, স্বপ্ন দেখি। হৃদয়ের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি, সুর আর ছন্দ এই জায়গায় মিলেমিশে একাকার। আমাদের স্বাধিকার ও আত্মচেতনার বহিঃপ্রকাশ প্রিয় এই ভাষার মাধ্যমে। বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের যে পতাকা আজ পতপত করে উড়ছে, বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র বিশ্বে মাথাউঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার ভিত্তি কিন্তু এই বাংলা ভাষার মাধ্যমেই প্রোথিত। বাঙালি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমাদের স্বীকৃতি ও পরিচয়ের জায়গাকে সুদৃঢ় করেছে আমাদের মাতৃভাষা।

মাতৃভাষা বাংলা আজ বিশ্বব্যাপী অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি এলে বিশ্বে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর দেশে দেশে যখন দিবসটি পালন হয় এবং প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হয় তখন গর্বে বুকটা ভরে যায়। কেননা এই দিবসের মূলে যে রয়েছে আমাদের প্রাণের বর্ণমালা। দিনটিতে বিভিন্ন জাতি নিজস্ব মাতৃভাষার কথা আলোচনা করলেও অবধারিতভাবে প্রথমেই উঠে আসে প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার নাম। এই বাংলা ভাষা আমাদের ইতিহাসের মৌলিক উপাদান। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থায় বদলে গেছে মানুষের ক্রমবিকাশের ইতিহাস। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে সব পৃথিবী এখন উন্মুক্ত, সবকিছু হাতের মুঠোয়। অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে আমাদের স্বপ্নের তারুণ্য আজ বন্দি অ্যানড্রয়েড মোবাইলের স্ক্রিনে। তাদের অন্তরাত্মায় সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন বিশ্বসংস্কৃতির ধারা, যা আমাদের শেকড় থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে তাদের এবং বিচ্ছিন্ন করছে আমাদের মৌলিক চিন্তা-চেতনার বিষয়গুলো থেকে। মৌলিক সংস্কৃতি আর চেতনার জায়গায় যদি আঘাত করা যায় তাহলে সেই প্রজন্মকে সহজেই বদলে দেয়া যায়। আমাদের সংস্কৃতি আর পরিচয়ের মূলে কিন্তু আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভাষা।

তাই এই ভাষার প্রতি আমাদের যে রক্তের বাঁধন, দরদ, আবেগ, অনুভূতি সেই জায়গায় আঘাত করে যদি শেকড়কে নড়বড়ে করা যায় তাহলে সহজেই আমাদের উপড়ে ফেলা যাবে। আর এই উপড়ানোর পথকে সুগম করছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম! প্রযুক্তির নেশায় বুদ হয়ে এই প্রজন্ম বই পড়া ভুলে গেছে। বেশির ভাগ সময় তাদের মন আর মগজ বন্দি থাকে কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। তরুণ প্রজন্ম বই না পড়ার কারণে ধীরে ধীরে বাংলা চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
একুশে ফেব্রুয়ারি,বাংলা ভাষা,প্রজন্ম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close