reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

শ্রদ্ধা ও স্মরণ

প্রিয় সব্যসাচী

সব্যসাচী লেখক, কথাশিল্পী, কবি সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মঞ্চস্থ হবে।

এ ছাড়া কবির জন্মস্থান কুড়িগ্রামে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও তাকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করবে। কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এদিকে, কবির সহধর্মিণী কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক জানান, সৈয়দ হকের ছোট ভাই গত মঙ্গলবার ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। এ কারণে কবির জন্মবার্ষিকীতে পারিবারিকভাবে গ্রহণ করা সব কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের এই মেধাবী কবি ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে তিনি প্রায় ৪ মাস লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে।

কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, চলচ্চিত্র, গান, অনুবাদসহ সাহিত্যে-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সাবলীল লেখালেখির জন্য তাকে ‘সব্যসাচী’ লেখক বলা হয়ে থাকে। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। সৈয়দ হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

কবি সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবকিছুই খুব সহজ কথা ও ছন্দে সৈয়দ হক তার লেখনীতে তুলে এনেছেন। তিনিই প্রথম নতুন উদ্দীপনায় মধ্যবিত্তের কথা ভালো করে বললেন এবং মধ্যবিত্ত জীবনের বিকারকেও ধরলেন। তার আগের বড় লেখকরা সবাই গ্রামকেন্দ্রিক উপন্যাস বা গল্প লিখেছেন। কিন্তু তিনি তার রচনায় সমসাময়িক বাংলাদেশকে তুলে এনেছেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, নাট্যকার হিসেবেও সৈয়দ হক ছিলেন দারুণ সফল। বিশেষ করে তার রচিত দুটি কাব্যনাট্য ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ বাংলা নাটকে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।

কবি অধ্যাপক মোহাম্মদ সামাদ বলেন, সৈয়দ হক তার কবিতা দিয়ে বারবার সাড়া ফেলেছেন। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত তার কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’, আধুনিক সময়ের কোনো কবির এত দীর্ঘ কবিতা বেশ বিরল। তার এই কাব্যগ্রন্থের কারণে তিনি তখন আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। তার আরেক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পরানের গহীন ভিতর’ দিয়ে তিনি তার কবিতায় আঞ্চলিক ভাষাকে উপস্থাপন করেছেন।

তার প্রথম লেখা একটি গল্প, যা ১৯৫১ সালে ফজলে লোহানী সম্পাদিত ‘অগত্যা’ নামের একটি ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন।

তিনি ১৯৫৯ সালে মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেন। এরপর তোমার আমার, শীত বিকেল, কাঁচ কাটা হীরে, পুরস্কার, ক খ গ ঘ ঙ, বড় ভালো লোক ছিলসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন। ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ও ‘পুরস্কার’ এ দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রের জন্য গানও রচনা করেছেন। এখানেও তিনি সফল হয়েছেন এবং পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

তিনি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ত্যাগ করে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে বিবিসির বাংলা খবর পাঠক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবরটি পাঠ করেছিলেন। পরে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বিবিসি বাংলার প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সৈয়দ শামসুল হক,সব্যসাচী লেখক,কবি,মৃত্যুবার্ষিকী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close