প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৭ জানুয়ারি, ২০১৮

সাইবার ক্রাইম : প্রযুক্তির ঝুঁকি ও নিরাপত্তা

আজ বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো যুদ্ধ করার জন্য পারমানবিক অস্ত্র কেনে বা তৈরী করে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এটার বদলে কিনবে বা তৈরী করবে উন্নত প্রযুক্তি। কারণ বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য কোন দেশ হয়তো পারমানবিক বোমা কিনল। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ কিনল উন্নত প্রযুক্তি। এটি দিয়ে শক্তিশালী হ্যাকার টিমের সাহায্যে ওই অস্ত্রের সিস্টেম হ্যাক করে তাদেরকেই ধ্বংস করা সম্ভব।

কারণ পারমানবিক বোমা পরিচালিত হয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির মাধ্যমে। এটি অনেকের কাছে অবাস্তব ও কাল্পনিক। তবে নিকট ভবিষ্যতেই এমন ঘটনা ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে গোয়েন্দাগিরির জন্য এখন আর শত শত কর্মকর্তার টিমের প্রয়োজন হয়না। একটি প্রযুক্তি পণ্য দিয়েই বহু মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইসরাইলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ। ডিজিটাল মাধ্যমে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই। আজ যেটি করা যাচ্ছেনা। কাল সেটি সম্ভব।

প্রতিদিন নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরী হচ্ছে। আর প্রত্যেকটিতেই থাকছে প্রচুর পরিমানে দুর্বলতা। কোন হ্যাকার ওই প্রযুক্তিতে দুর্বলতা খুঁজে বের করতে পারলেই তা হ্যাক করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবে অনায়াসেই। অনেকেরই ধারণা সাধারণ মানুষ প্রযুক্তির কুফলের মধ্যে নেই। তাই এ বিষয়ে কিছু না জানলেও চলবে। কিন্তু বাস্তব সত্য হল যিনি একটি মোবাইল ব্যবহার করছেন তিনি সাইবার জগতের একজন সক্রিয় সদস্য। তার লেবেল অনুযায়ী যে কোন মুহুর্তেই বিপদে পড়তে পারেন।

আসছে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় প্রকাশিতব্য ‘সাইবার ক্রাইম: প্রযুক্তির ঝুঁকি ও নিরাপত্তা’ বইয়ে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বইটি ৭ টি সাব টাইটেলে বিন্যাস করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘সাইবার ক্রাইম: ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রধান সংকট’ শিরোনামের লেখায় বিশ্বব্যাপী সাইবার ক্রাইমের ধারণা দিয়ে এটি ব্যবস্থাপনার সংকট গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

‘তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব ও অপরাধের ধারণাপত্র’ অধ্যায়ের আলোচনায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের শুরু এবং বর্ধিষ্ণু প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকা অপরাধ ও তার ভয়াবহতার চিত্র। সাধারণত বাংলাদেশ ও বিশ্বে কি ধরণের সাইবার অপরাধ হয়ে থাকে তার ধারণা দেয়া হয়েছে। ‘সাইবার ক্রাইমের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ অধ্যায়ে বিশ্বব্যাপী কি ধরণের অপরাধ সংঘটিত হয়, সে বিষয়টি স্থান পেয়েছে। আলোচিত সাইবার হামলা বা গোপন নথি প্রকাশের বিষয়ে সাম্যক আলোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে এখন কি ধরণের সাইবার ক্রাইম হচ্ছে সে বিষয়ে আলোকপাত হয়েছে।

এর মধ্যে স্থান পেয়েছে- ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে আক্রমণ, ব্যক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যতয় ঘটানো। ম্যালওয়্যার, স্প্যামিং বা জাঙ্ক মেইল আক্রমন। ইমেইল, ব্লগ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হুমকি দেয়া। ব্যক্তির নামে মিথ্যাচার/অপপ্রচার, যৌন হয়রানি। ফিশিং বা কারো লগইন/অ্যাকসেস তথ্যচুরি, ইউজার আইডি, ইমেইল ও পাসওয়ার্ড চুরি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা। পাইরেসি বা সদ্য প্রকাশিত গান ও সিনেমার এমপিথ্রি বা মুভি ফাইল চুরি করে ইন্টারনেটে শেয়ার করে দেয়া। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বা ব্লগ ও ওয়েবসাইট থেকে কোন লেখা ও ফটোগ্রাফি সহজেই কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া। পর্ণগ্রাফি, শিশু পর্ণগ্রাফি।

ব্যক্তিগত তথ্য, পরিচয় ও ছবি চুরি করে ইন্টারনেটের অপব্যবহার করা। ওয়েবসাইট হ্যাক করা। মোবাইল ব্যবহার করে সাধারণত অপরাধীরা কোন ব্যক্তিকে ব্লাকমেইল করে, সফটওয়ার ব্যবহার করে নম্বর ক্লোন করে কল দেয়া। সিমকার্ড ক্লোন করে, অন্যের সিম তুলে নেয়, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে ওইফাই হ্যাক ও ফেসবুক হ্যাক করে থাকে। এছাড়া সাধারণ ফিচার মোবাইল ব্যবহার করে এসএমএস চুরির অপরাধ। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অর্থ চুরি, ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করে অর্থ চুরি করা। কার্ড ক্লোনিং, স্কিমিং, পিন কমপ্রোমাইজিং, অ্যাকাউন্ট হ্যাক, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেয়। এর বাইরে অনলাইনে বিদেশীদের পাতা ফাঁদের মাধ্যমে অর্থলোভী মানুষ গুলো প্রতারিত হওয়ার কেসস্টাডিও তুলে ধরা হয়েছে।

‘অপরাধের নানা ধরণ ও কৌশল ’ অধ্যায়ে দেশে-বিদেশে সংঘটিত হওয়া সাইবার ক্রাইমগুলোর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থান পেয়েছে মোবাইল ব্যবহার করে প্রতারণা ও অন্যান্য অপরাধ, কম্পিউটার ভিত্তিক অপরাধ এবং অন্যান্য টেকনোলজি ব্যবহার করে করা অপরাধগুলোর পদ্ধতি। ‘সাইবার ক্রাইম ও অর্থনীতি: ক্রিমিনাল ইন্ডাস্ট্রি, কারা করছে অপরাধগুলো’ অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে সাইবার ক্রাইমের ইকোনোকি ইন্টারেস্ট, ক্রিমিনালরা অবৈধভাবে অপরাধ করলেও এখানে প্রচুর লেনদেন হচ্ছে। এই ক্রিমিনাল ইন্ডাস্ট্রি, কারা করছে অপরাধগুলো এবং কত মিলিয়ন ডলার এর ইন্ডাস্ট্রি এটি সে বিষয়ে আলোচিত হয়েছে।

‘সমাধানের সন্ধান’ ব্যক্তি সচেতনতা, আইনী ব্যবস্থা, দেশে দেশে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা’ অধ্যায়ে সাধারণর বা বিশেষ ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত যেসব সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে তার আলোচনার পাশাপাশি এগুলোর বিষয়ে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সাইবার অপরাধ বিষয়ে দেশে দেশে কি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে, বাংলাদেশের সাইবার ক্রাইম আইন ও কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয় তার তুলনা মূলক আলোচনাসহ দেশে বিদেশে এ বিষয়ে কি আইনী ব্যবস্থা রয়েছে তার আলোচনা এবং ভবিষ্যতে কি ধরণের প্রত্যাশা রয়েছে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাইবার অপরাধ দমনে কতোটা সক্ষম সে বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের প্রধান ডিসি মো. আলিমুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। বইটিতে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হয়েছে ‘ বাংলাদেশের আইন সাইবার ক্রাইম মোকাবিলার উপযুক্ত নয়’ শিরোনামে।

বইটি লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাংলা ও ইংরেজি বিভিন্ন নিউজ, আর্টিকেল ও গবেষণাপত্রকে সোর্স হিবেবে ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের ইন্টারভিউ, সাইবার ক্রাইম বিষয়ক কর্মশালা ও ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া হয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাইবার ক্রাইম,সাইবার,নিরাপত্তা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist