আজাদ হোসেন, চুয়াডাঙ্গা

  ১৪ মার্চ, ২০২৪

পাঁচ বছর আগে ‘নিরুদ্দেশ’ ভারতীয় নাগরিককে হস্তান্তর

৭২ ঘণ্টায় ঠিকানা মিললেও ফিরতে লাগল ছয় মাস

ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর রাজশাহীর জেলখানায় আটক ভাতীয় নাগরীক মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক কুমারের (৪০) বিষয়ে জানতে পারেন চিত্রসাংবাদিক ও সংগঠক মো. শামসুল হুদা। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তার বাড়ির ঠিকানা ও পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় আরো ৬ মাস লেগে যায় হস্তান্তর তার প্রক্রিয়া করতে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এবং ভারতের গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেককে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাঁচ বছর আগে ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়া ভারতীয় নাগরিক অভিষেক কুমারকে (৪০) পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। দর্শনা সীমান্তে অভিষেক কুমারকে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা, অভিষেকের মা পুস্পা দেবী, কাকা মুকেশ কুমার সিনহা ও ভাই পংকজ কুমার সিনহা উপস্থিত ছিলেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক কুমার পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বরাকাও জেলার গান্ধীনগর থানার জারিদি গ্রামের ঘনশ্যাম প্রসাদের ছেলে। তার ভারতীয় আধার কার্ড নম্বর ৮৫৯৯ ৪৯৯১ ৮০১৪। বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে তাকে রাজশাহী কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৫ বছর বন্দি ছিলেন।


  • অভিভাসন প্রত্যাবাসন জটিলতায় হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ধীরগতি
  • চুয়াডাঙ্গার দর্শনা ও ভারতের গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠক

২০২২ সালের ২২ মার্চ সুরক্ষা সেবা বিভাগ বহিরাগমন-১ থেকে ভারত প্রত্যাবাসনের চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তিু অভিষেকের পারিবারের সন্ধান না পাওয়ায় দায়িত্বশীল কারো কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর একাত্তর টিভির জেষ্ঠ্য চিত্রসাংবাদিক ও অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি বাংলাদেশের সাংগঠনিক স¤পাদক মো. শামসুল হুদার প্রত্যাবাসনবিষয়ক বেশ কিছু সাফল্যের কথা জানতে পেরে অভিষেককে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। পরে শামসুল হুদা রাজশাহী জেলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিষেকের বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তারপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিষেকের মা পুষ্পা দেবী ও বোন নিতু দেবীকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।

চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা বলেন, ‘অভিষেক কুমারের বিষয়টি জানার পর প্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র ৭২ ঘণ্টায় তার পরিবারের ঠিকানা খুঁেজ পাই। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় আরো ৬ মাস লেগে যায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া করতে। দুই দেশের বন্দিদের সাজাভোগ শেষে নিজ দেশে পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ে সহজতর করা দরকার।’

অভিষেকের মা পুস্পা দেবী বলেন, ‘অভিষেক কোচিংয়ে অংক ও জীববিজ্ঞান পড়াত। এক পর্যায়ে মানসিকভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ছেলের শোকে অভিষেকের বাবা মারা যান। দুদেশের সরকার ও শাসসুল হুদা সাহেবের প্রচেষ্টায় আমার ছেলেকে ফেরত পেয়েছি। সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির দর্শনা কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মন মোহন, দর্শনা আইসিপি কমান্ডার সুবেদার এনামুল হক, হাবিলদার সাকার উদ্দিন, দর্শনা থানার সেকেন্ড কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমান, দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই আতিক, এএসআই মোমিন প্রমুখ।

ভারতের গেদে বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার এসি বিতাশা, এস আই পি মুর্খার্জি, এসআই মজুমদার, গেদে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ জেসি দে, কাস্টমস কর্মকর্তা রামাতার পি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার এএসআই তন্ময় দাস, ডিআইবি সাধন মন্ডল, রেডক্রস প্রতিনিধি চিত্তরঞ্জন প্রমুখ।

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চুয়াডাঙ্গা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close