লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাট তিস্তা চরাঞ্চল
পানিশূন্য বালুচরে থমকে তিস্তাপাড়ের জীবন-জীবিকা
বর্ষা এলেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙণ আর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় তিস্তা পাড়ের মানুষের ফসলি জমি, বসতভিটা। সেই তিস্তা নদী শুকিয়ে গেছে। হেঁটেই পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা। নদী পাড়ে নেই নৌকা, মাঝি-মাল্লাদের হাঁকডাক। এমনই চিত্র দেখা গেছে গত মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের চর গোকুন্ডা গ্রামে।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে দেশে ঢুকেছে তিস্তা। এরপর লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।
উজানে গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে প্রতিবেশি দেশ ভারত নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। ফলে লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১২৫ কিলোমিটার তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কবলে পড়ে। দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে বালুচরে এখন হেঁটেই নদী পাড়ি দিচ্ছে মানুষ। ফলে ব্যারাজ, তিস্তা রেলসেতু, সড়ক সেতু ও গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু দেখে মনে হয় যেন এগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে ধু ধু বালুচরে।
নদী পাড়ের জেলেরা জানান, এক সময় তিস্তায় প্রচুর মাছ ধরা পড়তো। সেই মাছ বিক্রি করেই তারা সংসার চালাতেন তারা। সেই সময় তিস্তার মাছকে ঘিরে সদর উপজেলার তিস্তা বন্দরে শুঁটকির আড়ত ছিল। যেখান থেকে সারাদেশে যেত তিস্তা নদীর শুঁটকি। এখন মাছই পাওয়া যায় না।
- সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে বালুচরে এখন হেঁটেই নদী পাড়ি দিচ্ছে মানুষ।
- হাঁটু পানি ভেঙে সবাই নদী পারাপার হচ্ছেন স্থানীয়রা বাসিন্দারা।
- তিস্তার অববাহিকায় জীবনযাত্রা, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কবলে।
সদর উপজেলার পাঙ্গাটারী গ্রামের জেলে জীতেন্দ্রনাথ বলেন, মাছের শুঁটকি করেও সারা বছর বিক্রি করতাম। এখন নিজের খাবার মাছও পাওয়া যায় না।
তিস্তা চরাঞ্চলে গোবর্ধ্বন গ্রামের কৃষক নজির হোসেন বলেন, শুস্ক মৌসুমে যখন চাষাবাদের জন্য পানির প্রয়োজন তখন তিস্তায় পানি পাই না আমরা। ন্যায্য হিস্যা পেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকত তিস্তায়। তখন মাছই শুধু নয়, নদীর পানি ব্যবহার করে চরাঞ্চলের অনাবাদি জমিগুলোতে চাষাবাদ করা যেত।
খেয়া ঘাটের মাঝি সফিকুল বলেন, এখন নদীর মূল পানি প্রবাহ যেখানে, নৌকা চালানোর সুযোগ নেই। হাঁটু পানি ভেঙে সবাই নদী পাড়ি দিচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানান, নদীতে মাত্র ২ হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষ হচ্ছে। পানি কম থাকায় মূল স্রোত ধারার সব জলকপাট বন্ধ রয়েছে। ফলে পানি শূন্য রয়েছে মূল নদী।
পিডিএস/এস