শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সাতক্ষীরার শ্যামনগর

দিনে কয়লা রাতে কাঠ, ভাটার ব্যবসা জমজমাট

আইনের তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।-প্রতিদিনের সংবাদ

আইনের তোয়াক্কা না করে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অদৃশ্য কারণে প্রশাসনও আছে নীরব।

জানা যায়, উপজেলার জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা। ইটভাটার ট্রাক ও ভেকুসহ বিভিন্ন মেশিনের শব্দে ক্লাসের সময় তারা শিক্ষকদের কথা শুনতে পারে না। মাঠে খেলাধুলার সময় ভাটার ট্রাকগুলো দ্রুতগতিতে এলে তারা ভয় পায়।

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যদি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়, তাহলে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়।

সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইটভাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি উচ্চ আদালত এক আদেশে দেশের সব অবৈধ ইটভাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এসব অবৈধ ইটভাটা পুরোদমে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অধিকাংশ ভাটায় কয়লার সাথে তুষকাঠ মিশিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


  • উচ্চ আদালতে রিটের কারণে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না পরিবেশ অধিদপ্তর
  • জেলায় ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে শ্যামনগর উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইটভাটা

রামজীবনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে ইটভাটার পাশেই স্তূপ আকারে ফেলা রয়েছে জ্বালানি কাঠ।

উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাজী ব্রিকস ভাটার প্রবেশমুখে হাইকোর্টের একটি রিট পিটিশনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তোয়াক্কা না করে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ এবং চারপাশে স্তূপ আকারে সাজানো রয়েছে জ্বালানি কাঠ।

এছাড়া খানপুর এলাকার সাকিব ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায়, ভাটায় প্রবেশমুখে একটি বড় ঘরে সাজানো রয়েছে তুষকাঠ। এভাবে জনবসতি এলাকায় অবস্থিত ভাটায় জ্বালানি হিসেবে পুরোদমে কাঠ ও তুষকাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। একইভাবে তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করা হচ্ছে উপজেলা সদরের সোনার মোড় এলাকায় এইচবি ব্রিকস ও আশা ব্রিকস, খানপুরে গাজী ব্রিকসসহ অধিকাংশ ইটভাটায়।

ইটভাটায় জ্বালানি কাজে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক জানান, সংশ্লিষ্ট ভাটামালিকের নির্দেশে দিনে অল্প কয়লা ও সারারাত শুধু জ্বালানি কাঠ, সোয়াবিনের গাঁথ, তুষকাঠ ও টায়ার পোড়ানো বিষাক্ত কালি ব্যবহার করে তারা ইট পোড়াচ্ছেন।

গাজী ব্রিকসের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, প্রথমে ভাটায় নতুন আগুন জ্বালানোর সময় ভাটার ভেতরে অল্প কিছু কাঠ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

উপজেলা রামজীবনপুর এলাকার একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক জানান, যশোরের নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কয়লায় পানি মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে। এছাড়া দামও অনেক বেশি হাওয়ায় বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। তাছাড়া কয়লা দিয়ে পোড়ালে ইটের দামও বেড়ে যায়। তাই জ্বালানি হিসেবে কয়লার সঙ্গে তুষ ও কাঠ ব্যবহার করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার ইটভাটার এক শ্রমিক বলেন, ভাটায় কাঠ ব্যবহার করলে প্রতিটি ইটে খরচ ১-২ টাকা কম হয়।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, উপজেলায় অধিকাংশই ইটভাটাগুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমিতে স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও আবার ভাটায় কাঠ পোড়ানোর কারণে ফসলের ফলন বিপর্যয় ঘটছে।

পিডিএস/জেডকে

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সাতক্ষীরা,শ্যামনগর,ইটভাটা,কাঠ,কয়লা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close