মৃণাল সরকার মিলু, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

তাড়াশে নিয়োগ জালিয়াতি

ডিসি-ইউএনওসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একটি মাদরাসায় নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে উপজেলার গোন্তা আলিম মাদরাসার নিয়োগ পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তন ও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে চারটি পদে চারজনকে পদায়নে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

তাড়াশ সহকারী জজ আদালতের বিচারক মো. লোকমান হাকিম মামলাটি সাময়িকভাবে গ্রহণ করে ৩০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শনোর আদেশ দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের পেশকার মো. মুনতাসীন মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে, সোমবার (২২ জানুয়ারি) উপজেলার তালম ইউনিয়নের পাড়িল গ্রামের হাদিউল ইসলাম, গোন্তা গ্রামের জয় ইসলাম ও ফাতেমা খাতুন মামলাটি করেন। মামলার বাদীরা উপজেলার গোন্তা আলিম মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ প্রার্থী ছিলেন।

পেশকার মো. মুনতাসীন মামুন জানান, তাড়াশ ইউএনও ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন, গোন্তা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ টি আর আব্দুল মান্নান, সভাপতি আতিকুর রহমান, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক (ডিসি), বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), পরিচালক (প্রশাসক ও অর্থ) ও ডিজির প্রতিনিধি মো. আবু নাঈম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গাবরগাড়ি গ্রামের মো. সেলিম রেজা, লাউতা গ্রামের সাগর ও স্বপ্না খাতুন।


  • গোপনে নিয়োগ পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তন ও উৎকোচ নিয়ে চারটি পদে পদায়নের অভিযোগ।
  • মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকেও বিবাদী।
  • ৩০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের কারণ দর্শনোর আদেশ আদালতের।

এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ জুন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় তাড়াশের গোন্তা আলিম মাদরাসার ৪টি শূন্য পদ উপাধ্যক্ষ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি দেখে শূন্য ৪টি পদে চার প্রার্থী যথাযথ নিয়মে আবেদন করেন। ওই বিজ্ঞপ্তির ৩টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ওই বছরের ২১ জুলাই দেওয়া হয়। এর আগেই টাকা দিয়েও চাকরি পাচ্ছেন না এবং নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিতের দাবিতে নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন ২০ জুলাই তাড়াশ ইউএনও বরাবর অভিযোগ দেন একাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী পদপ্রার্থী মো. জয় ইসলাম ও আয়া পদপ্রার্থী ফাতেমা খাতুনেরও স্বাক্ষর ছিল।

এদিকে নিয়োগ নেওয়ার জন্য টাকা দিয়েও প্রতারণার শিকার হয়ে ২০২৩ সালের ২১ জুলাই নির্ধারিত পরীক্ষার দিন একাধিক চাকরি প্রত্যাশী আত্মহননের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে একজন কীটনাশক পান এবং আরেকজন পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষেই রশি দিয়ে গলায় ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করলে ওই নিয়োগের ডিজির প্রতিনিধি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ আবু নঈম নিয়োগ স্থগিত করে চলে যান।

পরে পরীক্ষার ভেন্যু পরিবর্তনের জন্য ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর তাড়াশ ইউএনওর মাধ্যম করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক লিখিত আবেদন করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ টি আর আব্দুল মান্নান। এতে ৪ ডিসেম্বর ওই আবেদনে সুপারিশ করেন ইউএনও। এই সুযোগে অন্য প্রার্থীদের প্রবেশপত্র না দিয়েই গোপনে ২৯ ডিসেম্বর শূন্য চার পদে পছন্দের চারজনকে নিয়োগ সম্পন্ন করে বিল দেওয়ার জন্য মাদরাসা অধিপ্তরে পাঠান মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতির মো. আতিকুর রহমান।

মামলা সম্পর্কে বাদীদের পক্ষের আইনজীবী মো. একরামুল হক বলেন, মামলার পর বিবাদীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন আদালত। পরে শুনানি শেষে মাদরাসার সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগপাপ্ত সেলিম রেজা, সাগর ও স্বপ্না খাতুনকে ৩০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শনার আদেশ দিয়েছে বিচারক।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সিরাজগঞ্জ,তাড়াশ
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close