এস এম জুবাইদ, পেকুয়া (কক্সবাজার)

  ১২ অক্টোবর, ২০২১

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

৩১ বিদ্যালয়ে নেই ৫৯ শিক্ষক

প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ৫৯ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রেখে ৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজাখালীর হাজ্বী শের আলী সিকদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫৭ জন। তার বিপরীতে শিক্ষকের পদ সংখ্যা ৫ জন হলেও বর্তমানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২ জন শিক্ষক। যেখানে প্রধান শিক্ষকের পদটি ২০১৫ সাল থেকে শূন্য হয়ে আছে। এতে পাঠদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদের। বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে খণ্ডকালীন ২-৩ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের এসএমসি কর্তৃপক্ষ। ফলে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছে প্রশাসনিক কাজে। বেঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের নানা উন্নয়ন। বেহাত হচ্ছে দাপ্তরিক কাজ।

জানা যায়, বিদ্যালয় সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে আছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন পাশের জিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সুজাগীর।

অভিভাবকদের অভিমত, একটি সরকারি বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষক পাশের আরেকটি সরকারি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম চালায় কিভাবে। একসাথে দুইটি বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব কিনা।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজাগীর জানান, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে আরও ৪ জন শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে। ‘ছয় বছর ধরে এই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমি। এই ছয় বছরে সবসময় বিদ্যালয় শিক্ষক সংকটে রয়েছে।

পাঠদান যাতে বিঘ্ন না হয় সেজন্য ২-৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষকের ব্যবস্থা রেখে আসছি। আর আমি ভারপ্রাপ্ত হওয়াতে বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক ও পর্যাপ্ত সহকারী শিক্ষক ছাড়া এভাবে তো বিদ্যালয় চলতে পারেনা।

রাজাখালীর এই বিদ্যালয়সহ উপজেলার ৩১ প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে ৫৯ শিক্ষক ছাড়াই পাঠদান। ফলে পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫৬ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদসংখ্যা ৩৮০টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ হাজার ৯৭৩ জন। ৫৬ বিদ্যালয়ে সমপরিমাণ প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি ৩২৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদ। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের চাহিদা আরও প্রায় ৮০ জনের। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩২১ জন। এরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে ২০ কয়েকটি বিদ্যালয়। এছাড়াও সহকারী শিক্ষকের পদ শূণ্য আছে ২৭ বিদ্যালয়ে। শিক্ষক সংকটের এই সমস্যা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনপদগুলো আরও পিছিয়ে পড়ার একমাত্র কারণ।

এদিকে পেকুয়ার বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ করিয়ারদিয়া। আর এই এলাকার যোগাযোগ অবস্থা খুবই নাজুক। এলাকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। নেই শিক্ষার হার। সবদিকেই অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত এই জনপদের নাম করিয়ারদিয়া। আর সেই অবহেলিত বঞ্চিত এলাকার শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য স্থাপিত হয় করিয়ারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। এই বিদ্যালয়ে স্বাভাবিকভাবে নৌকায় পার হয়েই পৌঁছাতে হয়। আর এই বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন। ফলে ২ জনের পদ শূন্য হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক অধিকার ও শিক্ষা থেকে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। চরম ক্ষতির মুখে পতিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

করিয়ারদিয়ার বাসিন্দা ও অভিভাবক রফিক, কালাম, জিয়াবুল জানান, আমাদের কচিকাঁচা ছেলে মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিদ্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু যথাযত শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে উপযুক্ত পাঠদান ও শিক্ষা থেকে। ১৭৬ জন ছাত্র ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক আছে মাত্র ৩ জন। শিক্ষক সংকট চলছে এ অবস্থায় কিভাবে পাঠদান করবে এতগুলো ছাত্র ছাত্রীকে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদ হোছাইন বলেন, ১৭৬ জন ছাত্র ছাত্রীর বিপরীতে ৫ জন শিক্ষকের পদে আছে মাত্র ৩ জন। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ভোগান্তির কারনে অধিকাংশ শিক্ষক এখানে চাকরি করতে অনীহা দেখায়। এই বিদ্যালয়ে আসতে না আসতেই তদবির শুরু করে চলে যেতে। এতে সবসময় এই বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকে। আর বর্তমানে পুরো উপজেলায় শিক্ষকের যে সংকট এর প্রভাবও পড়েছে।

ফলে বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছে তিনজন। শিক্ষকদের এ সংকট নিরসনে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নীতিমালা পরিবর্তনে অনলাইন মাধ্যমে হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পেকুয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হানিফ চৌধুরী বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার (খ) ধারা প্রযোজ্য হওয়াতে ভিন্ন উপজেলা, জেলা এমনকি অন্য বিভাগের মানুষও নিয়োগ প্রাপ্ত হয় এবং সহজ শর্তে তারা নিজ এলাকায় পদায়িত হতে পারে। এই নীতিমালা পরিবর্তন না হলে হলে আজকের এই শিক্ষক সংকট নিরসন দুরূহ হবে। তিনি আরও বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ না করাতে অনেকে লিখিত পরিক্ষা পাশ করতে পারেনা? ফলে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।

শিক্ষার্থী থাকুক কিংবা না থাকুক ছয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছয় শিক্ষকের প্রয়োজন আছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছালামত উল্লাহ বলেন, সরকার দীর্ঘদিন নিয়োগ না দেওয়া এই শিক্ষক সংকটের অন্যতম কারণ। তাছাড়া শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের যে ঘাটতি তা কমিয়ে আনতে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি বলে মনে করি। তবে আমরা আশা করি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পেকুয়া,কক্সবাজার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close