বেনাপোল প্রতিনিধি

  ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সড়কে দাঁড়িয়ে শতবর্ষী মৃত্যুদূত, আতঙ্কে স্থানীয়রা

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী অনেক গাছ। নেই কোনো পাতা, শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে পুরা শরীর। সমস্ত শাখা-প্রশাখাগুলো আঁকড়ে ধরে আছে আগাছারা। তারা যেন গাছের রক্ত চুষে খাচ্ছে। মূর্তিমান আতঙ্কের মতো নড়বড়ে শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো। ঠিক যেন ভয়ানক মৃত্যুদূত। মৃদু বাতাসে এসব গাছ ভেঙে পড়তে বাধ্য। সড়কে সব সময় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এসমস্ত জরাজীর্ণ গাছের ডাল যেকোনো সময় মাথায় ভেঙে পড়তে পারে জেনেও জীবনের মায়া ত্যাগ করে সড়কে ছুটছে মানুষ। এ অবস্থায় সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ, মানববন্ধন করেও কোনো কিছুই হচ্ছে না।

ঐতিহাসিক যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শতবর্ষী দুই হাজারের বেশি গাছ কেটে যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এ সিদ্ধান্তের পর এসব গাছ রক্ষায় সরব হয়ে ওঠে দেশের পরিবেশবাদীরা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন মহামান্য হাইকোর্ট। শুরু হয় সড়কের দুই পাশে গাছ রেখে সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। ফলে মহাসড়ক সংস্কারে ঝুঁকিতে পড়ে শতবর্ষী গাছগুলো। এ জন্য মহাসড়কের পাশের মাটি কেটে সাড়ে তিন ফুট গভীর করা হয়। এতে পাশের শতবর্ষী গাছের শিকড় কাটা পড়ে। গাছগুলো একটু ঝড়ে উপড়ে পড়ে ফসলি জমিসহ সড়কের পাশে অবস্থিত ঘরবাড়ির উপর। এ ঘটনার পর মহাসড়কের পাশে বসবাসকারী মানুষদের মধ্য আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারও ঝড়বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে পড়তে পারে। এতে গাছের নিচে চাপা পড়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি হতে পারে। তাই উপড়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা এবং যখন তখন ভেঙে পড়তে পারে এমন গাছগুলো অপসারণের দাবি সচেতন মহলের।

দেখা যায়, গাছের গোড়া নড়বড়ে হয়ে যাওয়াসহ যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে শুকিয়ে যাওয়া এসব গাছ। সড়কের দুই ধারেই বিভিন্ন জায়গায় গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। যখন তখন ভেঙে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে এসব গাছের জন্য। বিভিন্ন বাজার সংলগ্ন অনেকগুলো গাছের ডাল শুকিয়ে গেছে। যেকোনো সময় ডাল পড়ে পথচারী ও যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। শুকনো উঁচু গাছের কাণ্ডগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

সড়কের ধারে থাকা মানুষেরা বলেন, বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছ আমাদের বাড়ির ওপরে পড়বে। যে কারণে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের দাবি জানান তারা। দ্রুত মরা গাছ অপসারণ করলে সড়কের দুর্ঘটনাও কমে আসবে বলে তারা জানান। বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, ভারত থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য আসে বেনাপোল স্থলবন্দরে। এ বন্দর থেকে বাংলাদেশি শত শত ট্রাকে করে এসব আমদানি পণ্য যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের উপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সড়কের চলাচলের সময় সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মরা গাছের ডাল হালকা বাতাসে ভেঙে পড়ে। প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনা ঘটছে এই মহাসড়কে। যতদ্রুত সম্ভব এসব মরা গাছ অপসারণ করা হোক।

উল্লেখ্য, যশোরের জমিদার কালী পোদ্দার তার মাকে সোজা পথ দিয়ে গঙ্গাস্নানে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ৫৮ হাজার কড়ি ব্যয়ে ১৮৪২ সালে যশোর শহরের বকচর থেকে ভারতের নদিয়ার গঙ্গাঘাট পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেছিলেন। আর ৮০ কিলোমিটারের ওই রাস্তার ছায়ার জন্য দুই ধারে কালী পোদ্দার বিদেশ থেকে এনে অতিবর্ধনশীল জয়নাল্ক গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। সেই বৃক্ষগুলো যশোর-বেনাপোল সড়কে এখনো ছায়া দেয়ার পাশাপাশি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু গাছগুলো আজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেনাপোল,যশোর,শতবর্ষী গাছ,মৃত্যুদূত,সড়ক,বসবাসকারী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close