প্রদীপ মজুমদার

  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

হারিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লার ঐতিহাসিক অভয় আশ্রম ছাত্রাবাস

মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লার ঐতিহাসিক অভয় আশ্রমটির নামকরণ করেছেন, তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও আদর্শ নিয়েই আশ্রমের যাত্রা। ১৯২৩ সালে যখন কুমিল্লায় এ আশ্রমের গোড়াপত্তন হয়, যাঁরা আশ্রম প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাদের নেতৃস্থানীয় অনেকেই কুমিল্লার অধিবাসী ছিলেন না। মূলত ব্রিটিশ রাজশক্তিকে বিতাড়ণের উদ্দেশ্যেই দেশমাতৃকার জন্য উৎসর্গিত একদল শিক্ষিত প্রত্যয়ী যুবক এ কর্মকান্ডে নিবেদিত হয়ে ছিলেন। অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই তৎকালীন ভারতবর্ষে সশস্ত্র আন্দোলনের কাজ সামান্য আকারে চলতে থাকে। তাদের একটি প্রধান ঘাটি ত্রিপুরায় ছিল। কিন্তু অভয় আশ্রমপন্থীরা মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে তাদের সাথে একটা সৌহার্দ্য ভাব বিদ্যমান ছিল। এমন কী পরবর্তীতে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরও কয়েকজন বিপ্লবী অভয় আশ্রমে লুকিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

কুমিল্লা অভয় আশ্রমে মহাত্মা গান্ধী দু’বার এসেছিলেন ১৯২৫ এবং ১৯৪২ সালে। রবীন্দ্রনাথ একবার ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করতে এসেছিলেন। এছাড়া আচার্য প্রফুল্ল রায়, চক্রবর্তী রাজা-গোপালচারী, সীমান্ত গান্ধী আবদুল গাফফার খান, যমুনা লাল বাজাজ, ঠক্কর বাবা, সাদিক আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু, শরৎ চন্দ্র বসু, প্রমুখ জাতীয় নেতৃবৃন্দ তাঁরা এসেছিলেন অভয় আশ্রমের কর্মযজ্ঞ দেখার জন্য।

আশ্রমের মূল আদর্শ ছিল অহিংসভাবে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং আত্মকর্মসংস্থা উন্নয়নে স্বদেশী দ্রব্য তৈরি করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। ব্রিটিশ সরকার বার বার আশ্রমের সমস্থ কিছু বাজেয়াপ্ত করে, তারপরও কুমিল্লার সাধারণ মানুষ অভয় আশ্রমকে বুকে তুলে নিয়েছে।

অভয় আশ্রমের বিশাল কর্মকান্ডে পরবর্তীতে কুমিল্লার কৃতী সন্তান জননায়ক অখিলচন্দ্র দত্ত, ব্যাংকার ইন্দুভূষণ দত্ত, ত্রিপুরাবান্ধব নরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত, বিশ্বেশ্বর চ্যাটার্জী, আশরাফ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দানবীর মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য প্রমুখ এসে যোগদান করেন।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আশ্রমটি লুণ্ঠিত হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বরের পর তৎকালীন কর্মিবৃন্দ এসে শূন্য জায়গায় আশ্রয় নেন। প্রবোধ দাশগুপ্ত তখন খুবই অসুস্থ কুমিল্লার বিজ্ঞজনেরা পরলোকগত, আশ্রমকর্মী পরিমলচন্দ্র দত্ত ও রাজেন চক্রবর্তী আশ্রমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে মারামারি মামলা হামলা কাঁদা ছুড়া ছুড়ি ইত্যাতি অনেক কিছু ঘটে যায় তা সকলেরই জানা। ঐ সময়ে আশ্রমটিকে ছাত্ররাই রক্ষা করেছেন। তারপর জোট সরকারের আমলে আশ্রমটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে রূপান্তরিত করার জন্য গোপনে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়। সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেওয়ায় তা সফলকাম হয়নি। তারপর কুমিল্লার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পরিচালনায় এক্ষেত্রে ব্যরিস্টার নিখিলেশ দত্ত, বাসুদেব চ্যাটার্জী, চন্দন রায়, তাপস বক্সী, সমীর মজুমদার, এডভোকেট কিরণময় দত্ত, আরোমা দত্ত, বাঁশরী দত্ত, পাপড়ী বোস প্রমুখদের মাধ্যমে আশ্রমটি পরিচালিত হয়। ২০০২ সালে ছাত্র সংখ্যা ছিল ২০০ জন পরবর্তীতে এই কমিটি গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টকে আশ্রমটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখনকার সভাপতি ছিলেন বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা সকল ছাত্ররা স্যারকে অনুরোধ করে ছাত্রাবাসটি রাখার জন্য। কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় ছাত্ররা আন্দোলন করে পরবর্তী সময় মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় এম.এ মালেক স্যার বর্তমানে সচিব পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। স্যার এর কাছে স্মারক প্রদান করেন। মাননীয় জেলা প্রশাসক বদলী জনিত কারনে এবং গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি পরিবর্তন হয়। বর্তমান সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সম্মানিত ফেলো। আশ্রমে শতাধিক ছাত্র কুমিল্লা থেকে স্যার এর সাথে ঢাকায় অফিসে সাক্ষাত করেন। এবং স্যার আস্বস্ত করেন যে, ছাত্ররা আশ্রমে থাকবে। পরে কোন অদৃশ্য কারনে ২০১১ সাল থেকে নতুন কোন ছাত্র ভর্তি করানো হয় নাই। বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন। যদি নতুন ছাত্র ভর্তি না করানো হয় তাহলে অভয় আশ্রম ছাত্রাবাসটি বিলুপ্তি হয়ে যাবে।

অতএব বর্তমান কমিটির কাছে আকুল আবেদন যে, ছাত্রাবাসটি রক্ষা করুন এবং কুমিল্লাবাসি সহ আশ্রমের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ করছি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অভয় আশ্রম,ছাত্রাবাস,কুমিল্লা,ঐতিহাসিক অভয় আশ্রম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist