শিকল বন্দি জীবন ৩ মাদরাসাছাত্রের
ইফাদ, ইয়াসিন ও আজিজুল এরা সবাই একই মাদ্র্রাসার হেফজখানার শিক্ষার্থী। প্রত্যেকের বয়স তেরোর ঘরে। কৈশোরের দুরন্তপনায় যে জীবন অতিবাহিত করার কথা সেই জীবন তারা পার করছে শিকলবন্দী হয়ে। শিক্ষাগ্রহণের জন্য কিনা তাদের এ দুর্ভোগ!
আবাসিকের এসব মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া, টয়লেট-গোসল, লেখাপড়া, ঘুম সবই চলছে পায়ে লোহার শিকল বাঁধা অবস্থায়। এভাবেই তিন শিশুর বন্দি জীবন অতিবাহিত হচ্ছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের ভাইয়াসূতি হাফিজিয়া মাদ্রাসায়।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, ২০০৬ সালে ভাইয়াসূতি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই মাদ্রাসাটিতে সুপারের দায়িত্ব পালন করছেন মো. আরিফুল্লাহ। তিন শিশুকে শিকলবন্দী করে রাখার অভিযোগ মূলত তার বিরুদ্ধেই।
বর্তমানে মাদ্রাসাটিতে ৭৫ জন ছাত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জন এতিম ছাত্র। এ পর্যন্ত মাদ্রাসাটি থেকে ২৭ জন হাফেজ লেখাপড়া সম্পন্ন করেছে। মোট পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন হাফেজ হাফিজি শিক্ষা দেন আর দুইজন বাংলা পড়ান। মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য রয়েছে পরিচালনা কমিটিও।
শিকলবন্দি শিক্ষার্থী ইফাদ মিয়া নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া গ্রামের প্রবাসী কাওছার মিয়ার ছেলে। আজিজুল ইসলাম একই এলাকার কৃষক নাছির উদ্দিনের ছেলে এবং ইয়াসিন কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের টেক মানিকপুর গ্রামের মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তাদের পায়ে লোহার শিকলে তালা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। শিকল পায়ে নিয়েই তারা খেতে যাচ্ছে রান্না ঘরে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছে টয়লেটে আর পড়াশোনাও করতে হচ্ছে ওই শিকল বাঁধা অবস্থাতেই।
তাদের সঙ্গে ঘটে চলা এমন ঘটনার পেছনে অবশ্য একটি কারণও রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত লেখাপড়ার চাপে একবার তারা কাউকে কিছু না বলে মাদ্রাসা থেকে চলে গিয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু তাদের শিকলবন্দী জীবনের। শিকলের চাবি থাকে মাদ্রাসা সুপার মো. আরিফুল্লাহ’র কাছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সুপার মো. আরিফুল্লাহ দায় এড়িয়ে বলেন, এতে তার কিছু করার নেই। মাদ্রাসা থেকে তারা চলে যাওয়ার কারণে ওই ছাত্রদের অভিভাবকরাই শিকল দিয়ে পায়ে তালা দিয়েছেন।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান ভূঁইয়া রতন মাস্টার বলেন, এর আগে মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক প্রহার করেছিলেন ওই সুপার। তখন তার নামে মাদ্রাসায় সালিসও বসেছিল। ওইসময় তাকে বলে দেওয়া হয়েছিল কোনো শিক্ষার্থীকে যেন মারধর না করা হয়।
পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পায়ের শিকল খুলে দিতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু সুপার বলেন, ছাত্ররা চলে যায় এজন্য তাদের বাবা-মা শিকল দিয়েছে। তারপরও বলা হয়েছিল যারা চলে যায় চলে যাক, কিন্তু কারও পায়ে শিকল বা তালা দেওয়া যাবে না। কিন্তু তারপরও মাদ্রাসা সুপার কথা শোনেনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তবে আপনাদের কথা দিচ্ছি দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’