উখিয়া প্রতিনিধি
বর্ষপূর্তি সমাবেশে রোহিঙ্গাদের ঢল
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আবারও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা ছাড়া মিয়ানমার ফিরতে অনীহা প্রকাশ করেছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গার অংশগ্রহণে বিশাল সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা তাদের দাবি পুনঃব্যক্ত করেন।
রোববার উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্পে পৃথক পৃথক সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। রোববার সকাল থেকে উখিয়ার ২০টি ক্যাম্প থেকে হাজারো নারী, পুরুষ ও শিশুরা মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে যোগ দেয়। কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের বর্ধিত -৪ নং ক্যাম্পের মাঠে বর্ষপূর্তি সমাবেশের আয়োজন করে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস বা এআরএসপিএইচ। উক্ত সমাবেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সমাগম ঘটতে দেখা গেছে। ঐ সমাবেশে উক্ত সংগঠনের রোহিঙ্গা নেতারা বক্তব্য দেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশটি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি করা হয় সকাল সাড়ে ১০টায়।
এআরএসপিএইচ এর চেয়ারম্যান মাস্টার মহিবুল্ল্যাহ বলেন, আমরা বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমার ফিরতে চাই। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, মিয়ানমারে স্বাধীন ও মর্যাদার সাথে নিজ নিজ ঘর বাড়িতে বসবাসের নিশ্চয়তা ফেলে মিয়ানমার ফিরে যেতে প্রস্তুত বলে জানান।
অন্যদিকে, কুতুপালং ২ নং ক্যাম্পের ডি- ব্লকের মাঠে আরেকটি বর্ষপূর্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গা রিফুউজি কাউন্সিলের আয়োজনে সমাবেশে ঐ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা, ডাক্তার জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশ সরকার যদি ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিত তাহলে সেটিই হত বিশ্বের সবচেয়ে উল্ল্যেখযোগ্য মানবিক ট্র্যাজেডি। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের প্রাণ রক্ষা করায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চিরদিন বাংলাদেশ ও স্থানীয় লোকজনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তারা বলেন, আমরা আশাবাদী বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যেভাবে উদারতা ও সহানুভূতি দেখিয়েছে সেভাবে রোহিঙ্গাদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করে মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর আশা ব্যাক্ত করেন।
নিজেদের নাগরিক অধিকার ও হারানো ভিটে মাটি ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে আলোচনা করা হবে। ৫ দফা দাবী না মানা পযর্ন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারের ফিরে যাবে না। কারন মিয়ানমার সরকারের উপর আস্হা রাখা বোকামি। সমাবেশে ঘোষণাকৃত দাবি হলো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে হবে, নিরাপত্তা ও অবাধে চলাচলের স্বাধীনতা, নিজেদের হারানো ভিটে মাটি ফেরত দিতে হবে ও ২৫ আগষ্টের নির্যাতনের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্ল্যাহ আরো বলেন, রোহিঙ্গারা এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে শুধু অধিকার ফিরে পেতে। আমরা নিজেদের দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চিয়তা ছাড়া কখনো ফিরে যাবে না। মিয়ানমার সরকারের উপর আস্হা রাখা বোকামি। রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম বলেন, বাংলাদেশের সরকার নাগরিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে দাবি না মানা পযর্ন্ত আমরা ফিরে গেলে আবারও নির্যাতন হতে পারে।
উক্ত সমাবেশে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নুরুল ইসলাম। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন মসজিদে গণহত্যার বিচার চেয়ে দোয়া করেন। ২৫ আগষ্টকে ঘিরে এনজিও সংস্থার আয়োজনে কোনওকিছু হয়নি ।ক্যাম্প অভ্যন্তরের দোকান পাট গুলো সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত বন্ধ ছিল।
উখিয়া থানা রওসি আবুল মনসুর বলেন, আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পিডিএসও/রি.মা