সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ২৭ নভেম্বর, ২০১৮

‘সবিতা চক্রবর্তী’ স্মৃতি গ্রন্থাগার

নওগাঁর বদলগাছিতে বালুভরা আরবি উচ্চবিদ্যালয়ের ‘সবিতা চক্রবর্তী’ গ্রন্থাগারে তিন হাজার ৭২৬টি বই আছে। এই গ্রন্থাগার একদিকে বিদ্যালয়ের খ্যাতি যেমন বৃদ্ধি করেছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের সুযোগ প্রসারিত করেছে। ১০৪ বছরের এই বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতির নিরবিচ্ছিন্ন সেবাদান করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নিজ বিদ্যালয়টির উন্নয়নের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদেরই একজন সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তারই প্রচেষ্টায় কেবল বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে তাই নয়, এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ কার্লভার্ট নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কাজও সম্পাদন করেছেন তিনি। বালুভরা গ্রামে ছোট যমুনা নদীর ওপর জনগণের চাহিদা মাফিক গুরুত্বর্পূণ দুই-দুইটি ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। তারই উদ্যোগে এই এলাকার জনগণ অনেক আগেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। একজন সরকারী কর্মকর্তাকে নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন মনোনিবেশ করতে সহজে লক্ষ্য করা যায় না।

সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রচেষ্টায় এবং সক্রিয় উদ্যোগে বালুভরা আরবি উচ্চবিদ্যালয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সবিতা চক্রবর্তী’ স্মৃতি গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে মোট তিন হাজার ৭২৬টি বই রয়েছে।

বইয়ের তালিকায় রয়েছে স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী, শিল্পী সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্রকার, চলচ্চিত্র শিল্পী, ইতিহাসবিদদের জীবনী, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন লেখা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক নোভেল, কাব্যগ্রন্থ, রবীন্দ্র রচনাবলি, নজরুল রচনাবলি, ধর্মীয় গ্রন্থ সামগ্রী, গবেষণামূলক লেখা, শিশুতোষ লেখাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যম এই গ্রন্থাগারটিকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

এই গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাসুদা আক্তার জানান, ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার আগ্রহ বেশ। সপ্তাহে পাঁচ দিন প্রতিদিন একটি করে পাঁচটি ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ক্লাস রুটিনে। রুটিন মাফিক ক্লাসে এসে তারা তাদের চাহিদামতো বই নিয়ে পড়াশুনা করতে পারে। এখানে বই পড়া শেষে পুনরায় বইটি ফেরত দিয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই এবং শিশুতোষ বই পড়তে বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। এই গ্রন্থাগারের উল্লেখযোগ্য এবং বিরল বৈশিষ্ট হচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ছবি টাঙ্গিয়ে রাখা। সংগৃহীত বইগুলোর মতোই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্রীড়া, রাজনীতি, শিল্পী, দার্শনিক, চলচ্চিত্র শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, ঔপন্যাশিক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়কদের দুষ্প্রাপ্য সব ছবি এখানে চারিদিকের দেয়ালে সারিবদ্ধভাবে টাঙ্গানো রয়েছে। এসব ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধু থেকে মাওসেতুং, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শেক্সপিয়ার, হাছনরাজা থেকে লালন ফকির, কোনোটাই বাদ পরেনি। দুষ্প্রাপ্য এই সংগ্রহ সত্যিই যেকোনো মানুষকে অভিভূত করে। ছবির এই গ্যালারিতে মোট তিন শতাধিক ছবি ঠাঁই পেয়েছে। ছবির তালিকা আরো বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র প্রীতম কুমার চক্রবর্তী এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী যুথি আক্তার তারা দুজনেই এই লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক। তারা বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই পড়ে থাকে। তারা বলেন, এই গ্রন্থাগারে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, বালুভরা আরবি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েল পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে সবদিকে তার গঠনমূলক ভূমিকা অতুলনীয়। একমাত্র তারই নজরদারি এবং উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এ রকম একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেকে গর্বিত বোধ করছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুকমল কর্মকার বলেন, এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একটি লাইব্রেরি এলাকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে যথেষ্ট সহায়ক। কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে জ্ঞানী করে না। জ্ঞান অর্জনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমার পূর্বপুরুষ থেকেই এলাকার মানুষের কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। আমার দাদু বালুভরা আরবি উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তারও আগে বর্তমান জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে অনুরূপ আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানে আমার কিছু করার সুযোগ বা সাধ্য রয়েছে সেখানে কিছু করতে পারা গর্বের ব্যাপার। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে সুযোগ ও যোগ্যতা দিয়েছেন তার দায়বদ্ধতা থেকেই এলাকা এবং এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারা গৌরবের মনে করি। সেই চেতনা বোধ থেকেই আমি আমার গ্রাম, আমার এলাকা এবং আমার স্কুলের জন্য এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্মৃতি গ্রন্থাগার,সবিতা চক্রবর্তী,নওগাঁ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close