মোঃ আব্দুর রউফ, ধামরাই(ঢাকা)
‘শুধু নির্বাচন এলে আশ্বাস পাই, কিন্ত সেতু পাই না’
ঢাকার ধামরাইয়ে সুতিপাড়া ইউনিয়নের বিলকেষ্টি এলাকার জনগন মনের অক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন আমরা প্রায় দেড় যুগ ধরে শুধু আশ্বাস পেয়ে আসছি কিন্তু আজ পর্যন্ত পেলাম না সেতু। শুধু নির্বাচন এলে আশ্বাস পাই কিন্ত সেতু পাই না। উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের সমাজ সেবক মোঃ আনোয়ার হোসেন (৬৫) এই কথা বলেন।
ধামরাই উপজেলার একেবারে শেষের দিকের এলাকাটিতে প্রায় তিনশত পরিবারের বসবাস। অথচ এই নদী সেই যোগাযোগকে আলাদা করে দিয়ে জনজীবনেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে একটি সেতুর অভাবে। কারণ নদীর এপারে বাজার আর ঐপারে দুর্বিসহ মানুষের বসবাস। শুধু অভাব একটি সেতুর। যার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়। এছাড়া এই নদীর উপর কোনও সেতু না থাকায় প্রায় ৫কিলোমিটার ঘুরে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে হয় এখানকার মানুষকে।
বিলকেষ্টি গ্রামটির মধ্যে প্রায় তিনশত পরিবার আছে যারা ধামরাই উপজেলার মধ্যে রয়েছে অন্যদিকে মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ থানার প্রায় একশত পরিবার রয়েছে তাদের পত্যেকেই এই বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।
এই নদীর দক্ষিণ পারে রয়েছে নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশরাফ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বড় একটি বাজার যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ হাট বাজার করতে আসে। সেই সাথে স্কুলের সব ছাত্র ছাত্রীদের এই সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। আর এই সেতু দিয়ে পার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে তাদের।
এই ব্যাপারে নওগাঁও গ্রামের এ্যাডভোকেট মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা জন্মের পর থেকে শুনে আসতেছি যে এইখানে ব্রিজ হবে কিন্তু আজ পর্যন্ত ব্রিজের কোনও কাজ দেখতে পেলাম না। তবে শুনতেছি এই গাজীখালি নদীর উপর ব্রিজের সেঙ্কশন হয়েছে কিন্তু ট্রেন্ডার আজ পর্যন্ত পেলাম না। আল্লাহ জানে কবে এখানে ব্রিজ হবে। শুধু নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়ে থাকে, কিন্তু সেতু পাই না।
এই ব্যাপারে পশ্চিম বিলকেষ্টি গ্রামের মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, আমরা গ্রামবাসী গাজীখালী নদী পারাপারের জন্য আগে নৌকা ব্যবহার করতাম। তখন স্কুলে যাওয়ার সময় অনেক স্কুল পড়ুয়ার বই খাতা পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যেত এমনকি বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটত অহরহ। কিন্তু আজ আর সেই নৌকা নেই। কারণ এখন আর কেউ নৌকা বাইতে চায় না। তাই গ্রামবাসী মিলে সবার কাছ থেকে টাকা তুলে কোনোরকমে একটি বাশেঁর সাঁকো তৈরি করে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। এতে শুধু কোনোরকমের মানুষ পারাপার হয়। কিন্তু কোনও যানবাহন যাতাযাত করতে পারে না। যার জন্য আমাদের জনজীবন অনেক পিছিয়ে পড়েছে। স্কুলের ছেলে মেয়েরা অনেক কষ্ট করে এই সেতু দিয়ে পার হয়ে স্কুলে এসে পড়াশুনা করে সেইটাও দেখার কেউ নেই। শুধু নির্বাচন এলে নেতারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে আর খবর থাকে না।
এই ব্যাপারে আশরাফ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার স্কুলের ছেলেমেয়েরা অনেক ঝুঁকিতে পারাপার হয় বিশেষ করে মেয়েরা বাশেঁর সাঁকো দিয়ে পার হতে ভয় পেয়ে স্কুলে আসে না। আবার অনেকেই বাশেঁর সাঁকোর ভয়ে অন্য স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি কষ্ট হয় বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে । এই সময় সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে নিচে পরে অনেকেই আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কয়েকবার।
নওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টির দিনে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে না। যার কারণে দিন দিন স্কুলে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এত আমরা ভালো মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী হারাচ্ছি। কারণ ছোট ছোট বাচ্চারা বাশেঁর সাঁকো দিয়ে আসতে ভয় পায়। তাই এই গাজীখালী নদীতে ব্রিজের খুব প্রয়োজন।
এই ব্যাপারে সুতিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রাজা মিয়া প্রতিদিনের সংবাদ অনলাইনকে বলেন, সেতুটির ব্যাপারে এলাকার জনগন আমাকে অবগত করেছে। আমি নিজেও এই সেতুর ব্যাপারে কথা বলেছি। অতি দ্রুত সেতুটি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ইউছুব হোসেন বলেন, সেতুটির ব্যাপারে উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে করে অতি তাড়াতাড়ি সেতুটি নির্মাণ করা হয় সেই ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিএসও/রিহাব