লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ২১ মে, ২০১৮

বৈরী আবহাওয়ায় ও শ্রমিক সংকটে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান ও ভুট্টা

বৈরী আবহাওয়া আর চরম শ্রমিক সংকটের কারণে চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো পাকা ধান ও ভুট্টা কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছে লালমনিরহাট জেলার কৃষকেরা। ফলে নুতন ধান ও ভুট্টা ঘরে আসার সম্ভাবনাতেও হাসি নেই তাদের মুখে। তাদের চোখে-মুখে দেখা যাচ্ছে সার্বক্ষণিক হতাশার ছাপ।

সরেজমিন সদর উপজেলা, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এখনো শ্রমিক সংকটের কারণে মাঠের পর মাঠ পাকা ধান ও ভুট্টা ক্ষেতে পড়ে আছে। এতে চরম দুর্ভোগ পড়েছে সাধারন কৃষকরা। অনেক ধান ক্ষেত পানিতে ডুবে যাচ্ছে আর ভুট্টা গাছ ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে ভুট্টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষকেরা চরম হতাশায় দিন পার করছেন।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদের জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৫ শত ৫৫ হেক্টর জমি নির্ধারন করা হলেও বাস্তবে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। প্রথম দিকে আবহওয়া অনুকুলে, সময় মত সার-সেচ ও পরিচর্যা করায় বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে হাজারো কৃষক। কিন্তু কৃষকের বুক ভরা স্বপ্নে প্রথমত আঘাত হানে শিলা বৃষ্টি। তারপরও অনেকটা ভালো ফলন হয়েছে এবার ইরি-বোরো ও ভুট্টায়।

লালমনিরহাট জেলার কৃষকেরা জানান, বোরো ধান ও ভুট্টা কর্তনের পুরো মৌসুমে লালমনিরহাটে সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচি চালু থাকায় শ্রমিকদের একটি অংশ সেখানে শ্রমিক বিনিয়োগ করছে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষকদের মতে, এ সময় কর্মসৃজন কর্মসূচি স্থগিত থাকলে ওই শ্রমিকেরা ধান ও ভুট্টা কর্তনে শ্রম দিতে পারতো। এতে কিছুটা হলেও শ্রমিক সংকট হ্রাস হতো।

হাতীবান্ধা উপজেলার দক্ষিন গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান জানান, এখন বোরো ধান ও ভুট্টা কাটার মৌসুম। অথচ বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক স্থানের বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও কৃষকদের মধ্যে প্রতিনিয়ত শিলাবৃষ্টির আতঙ্ক লেগেই রয়েছে। আবহাওয়ার এ পরিস্থিতিতে কৃষকেরা জরুরি ভাবে ধান ও ভুট্টা ঘরে উঠানোর চেষ্টা করলেও তা পারছেন না। এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক। গ্রামগুলোতে যে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক রয়েছে তারা জোট বদ্ধ হয়ে অনেকটাই সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে ধান কাটার মজুরি। এর ফলে কৃষকদেরকে প্রতি বিঘা জমির ধান ও ভুট্টা কর্তনের জন্য ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার ভেটমারী এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান জানান, তিনি ৯ একর জমিতে ভুট্টা উৎপাদন করেছেন। এখন পর্যন্ত অনেক কষ্টে অর্ধেক ভুট্টা ঘরে তুলতে পারলেও এখনও অনেক ভুট্টা ঘরে তুলতে পারেননি। তার মতে, এ ৪ বিঘায় ভুট্টা উৎপাদনে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। ওই ভুট্টা বিক্রি করেছে ৬৭ হাজার টাকা মাত্র। সামান্য এই লভ্যাংশ ওই কৃষকের জন্য হতাশা জনক।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, এ সময় শ্রমিকের বিশাল একটা অংশ বগুড়া ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রম বিক্রি করতে যায়। ফলে কিছুটা শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে অনেক কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ধান ও ভুট্টা,শ্রমিক সংকট,বৈরী আবহাওয়ায়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist