শাহ্জাহান সাজু

  ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯

দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ

অর্থবছরের দ্বিতীয় মেয়াদের (জানুয়ারি থেকে জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩০ জানুয়ারি সকালে ঘোষণা করা হবে নতুন বছরের প্রথম মুদ্রানীতি। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোই হবে মুদ্রানীতির বড় চ্যালেঞ্জ, এমনটাই ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে (জুলাই’১৮ থেকে ডিসেম্বর’১৮) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। তাই নতুন মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ বাড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর এটি বাড়াতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। এতে কর্মসংস্থানও কাক্সিক্ষত মাত্রায় বাড়বে না বলে জানান তিনি। জানা যায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুইবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। ছয় মাস পর এই মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে আর দ্বিতীয় মেয়াদের অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে প্রণয়ন করা হয়।

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রার সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

সূত্র জানায়, ব্যাংকে আমানতের প্রবাহ কমছে। বিপরীতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। এতে কমে যাচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। বাড়ছে বিনিয়োগ ব্যয়। কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্বও আদায় হচ্ছে না। এতে বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। এমন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সহজ হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। তবে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রাখতে বাড়ছে সরকারের ঋণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৯২ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে শেষে ব্যাংকঋণ ছিল ৮৮ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এই হিসাবে জুনের তুলনায় বেড়েছে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, তারল্য সংকটের কারণে অর্থবছরের প্রথমার্ধে লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এ কারণেই দ্বিতীয় মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঋণের জোগান দিতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়ানোর জন্যও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ তলানিতে রয়েছে। এখন বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতি করতে না পারলে চলতি অর্থবছরে সরকার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে ঋণ প্রবাহ তথা বিনিয়োগের গতি ফেরানো যায়, সে বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাবে মুদ্রানীতিতে।

জানা যায়, এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম মেয়াদে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছিলেন, উচ্চতর প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কম থাকায় বেসরকারি খাতের ঋণে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি সংকুলানের সুযোগ থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

পিডিএসও/হেলাল​

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চ্যালেঞ্জ,বেসরকারি খাত,বিনিয়োগ,মুদ্রানীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close