বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ০৯ মে, ২০২২

বেনাপোলে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস

আমদানি বাড়লেও রাজস্ব আদায় কমেছে

বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়লেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। ২০২০-২১ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ১০১ টন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-২১-মার্চ-২২) আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮১৫ টন পণ্য। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ৯ মাসে ১ লাখ ৩১ হাজার টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৬০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এ সময় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, বিপরীতে আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বন্দর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস দেখা দিয়েছে। ২০২০-২১ বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ টন। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬০৬ টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৪ দশমিক ৮২ টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ দশমিক ৮৬ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৭৮ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২২০ দশমিক ৮৪ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ টন পণ্য।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, দিন দিন আমদানি পণ্যের ওপর অযৌক্তিক হারে শুল্ককর বাড়ছে। শুল্কহার স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা হলে বৈধপথে আমদানি বাড়বে। এতে রাজস্ব আয়ও বেশি আসবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের ওপর রাজস্ব ৪ ডলার, বেনাপোল বন্দরে ওই একই পণ্যের ওপর সাড়ে ৪ ডলার শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদণ্ডবৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, বেনাপোল বৃহৎ বন্দর হলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। সপ্তাহে সাত দিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও কাগজে-কলমে বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বেনাপোলে সব ধরনের হয়রানিমুক্ত করা প্রয়োজন। বেনাপোল বন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রম চালু হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানির সঙ্গে রাজস্বও বাড়বে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, চলতি অর্থবছরে কম শুল্কযুক্ত অথবা শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে সরকারের বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পণ্য বেশি এসেছে। এতে আমদানির পরিমাণ বাড়লেও আমরা রাজস্ব পাইনি। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত চালও এসেছে। আশা করছি ঈদের পর আমদানি ও রাজস্ব বেড়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close