নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ জুলাই, ২০২০

রফতানিতে উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব ডিসিসিআইয়ের

রফতানিমুখী শিল্পের জন্য উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ। গত শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারি খাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এই প্রস্তাব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ডিসিসিআই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ। মূল প্রবন্ধে তিনি দেশের অর্থনীতির ২০টি খাতের বর্তমান অবস্থা ও খাতগুলোর উন্নয়নে সুপারিশ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, চলমান কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে অনেক কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সরকারের যথাযথ নীতি-সহায়তা ও প্রণোদনার সঠিক ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য উৎসে কর কমিয়ে ০.২৫ শতাংশ করারও প্রস্তাব করেন তিনি। চীন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও কৌশল এখনই নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন শামস মাহমুদ।

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ শতাংশ কম রফতানি অর্জিত হয়েছে। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়া, অশুল্ক বাধাসমূহ দূরীকরণ ও সম্ভাবনাময় অংশীদারদের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোরারোপ করেন।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ থেকে ০.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনলে এ খাতে রফতানি আরো বৃদ্ধি পাবে। চামড়া খাতের উন্নয়নে তিনি দ্রুত সিইটিপি স্থাপন ও ট্যানারি মালিকদের স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া কোভিড-১৯-এর কারণে এমএসএমই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং ব্যাংকগুলো থেকে তারা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না, এ অবস্থা উত্তরণে স্বল্পসুদে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ও রিফাইন্যান্সিং স্কিম আরো বেশি হারে বাস্তবায়নে তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ, বিল্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম অংশ নেন।

ড. মাশরুর রিয়াজ কোভিড-১৯-এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি মোকাবিলায় টিকে থাকা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ অত্যাবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর ফলে বৈশ্বিক চাহিদা ও সাপ্লাই দুটিই উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তিনি অর্থনীতির এ অবস্থা উত্তরণে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি করপোরেট কর, টার্নওভার কর প্রভৃতি কমানোর প্রস্তাব করেন এবং কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট নীতিমালাসমূহের সংস্কার ও বন্ড মার্কেট আরো কার্যকরের ওপর জোরারোপ করেন।

হোসেন খালেদ বলেন, ব্যাংক খাত থেকে সরকারের বেশিমাত্রায় ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহকে কমিয়ে দিতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের শিল্প খাত বর্তমানে কর্মসংস্থানের সুযোগ ধরে রাখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং এ অবস্থা মোকাবিলায় ব্যাংক ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি পুঁজিবাজারের ওপর সবার আস্থা বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান এবং পরিবেশ সুরক্ষায় আরো বেশি হারে ‘সবুজ প্রকল্প’ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি ইলেকট্রিক্যাল ভিহাইক্যালের আরো ব্যবহার বাড়ানোর জন্য নীতি-সহায়তা প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন।

আবুল কাসেম খান বলেন, ভুয়া কোভিড সনদ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুণœ হয়েছে এবং এ পরিস্থিতি যেন আর বাড়তে না পারে সেজন্য সরকারকে আরো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোরারোপ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর জন্য আমাদের অবশ্যই সহায়ক কর কাঠামা থাকতে হবে, যা কি না এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে উদাহরণ তৈরি করবে। তিনি সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে বিশেষ করে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা যেন ঋণ-সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারকে আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি ও পুঁজিবাজারের অনুপাত মাত্র ১১.১ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে এশিয়া ও পাশের দেশগুলোর মধ্যে অনেক কম। তিনি দেশের বন্ড মার্কেট আরো কার্যকর করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পসমূহে অর্থায়ন নিশ্চিতকল্পে সেগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন।

আসিফ ইব্রাহীম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো আইপিওর যথেষ্ট অভাব রয়েছে, তিনি পুঁজিবাজারের উন্নয়ন বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসইর কঠোর নজরদারিরও প্রস্তাব করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close