নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২০

সূচকের বড় উত্থান পুঁজিবাজারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেওয়ার পর দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে। গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় সব কটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে সাত বছরের মধ্যে মূল্যসূচকের সবচেয়ে বড় উত্থান হয়েছে গতকাল। এতে একদিনেই ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপর বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের ওপর।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, সরকার পুঁজিবাজার ভালো করতে আন্তরিক। তারই প্রতিফল দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। তা ছাড়া বড় ধরনের ধসের কারণে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম অনেক কমে গেছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

তারা বলছেন, পতন কাটিয়ে উঠেছে পুঁজিবাজার। তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

টানা দরপতনের ধারাবাহিকতা কাটিয়ে এবার রেকর্ড উত্থানের সাক্ষী হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। দেশের প্রধান এই পুঁজিবাজারে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল দিন শেষে প্রধান সূচক বেড়েছে ২৩২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ফলে সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। সূচকের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা এদিন ছিল আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। সেখানে দিনশেষে সার্বিক সূচক বেড়েছে ৫৭৭ পয়েন্ট।

২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স চালু হওয়ার পর এটিই দেশের কোনো পুঁজিবাজারে এক দিনে সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান। এর আগে, ২০১৫ সালের ১০ মে এই বাজারে ১৫৫ পয়েন্ট বেড়েছিল এক দিনে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে অব্যাহতভাবে দরপতন হয়। এ অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক চার বছর আট মাস বা ৫৬ মাসের আগের অবস্থানে চলে আসে। ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টে নেমে আসে। এটি ২০১৫ সালের ৫ মের পর সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে গত ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও কিছুটা নমনীয় হয়। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়ে যায। আর এই কারণে পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে।

গতকাল ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানির ১৬ কোটি ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪২২টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪৬টির, কমেছে মাত্র ছয়টির। অপরিবর্তিত ছিল চারটির দাম। দিনশেষে ডিএসইতে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। আর দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্ট। এদিন ডিএসই শরিয়া সূচক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৯৯৭ পয়েন্ট এবং ডিএসইএ-৩০ সূচক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৮৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়।

অন্যদিকে, গতকাল আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৫৭টি কোম্পানির ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৭টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া এসব শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৩১টির, কমেছে ১৫টির, অপরিবর্তিত ছিল ১১টির কোম্পানির শেয়ারের দাম। দিনশেষে সিএসইতে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৬৭৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close