নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা

অনুমোদন পাওয়া সব ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করতে হবে। ফলে ২০১৩ সালের পর চালু হওয়া সব ব্যাংককে নতুন করে আরো ১০০ কোটি টাকা মূলধন জোগার করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাসহ ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডসভায় তিনটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য সিটিজেন ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংক। নতুন তিনটি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন সংগ্রহ করতে হবে তাদেরও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক জানান, ‘আগের ব্যাংকগুলোর জন্য কিছুটা চাপ সৃষ্টি হলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের জন্য এটা ভালো সিদ্ধান্ত।’ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। তারা আরো ব্যাংক চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা তাদের জন্য বেশি চাপ হওয়ার কথা নয়।

আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সব ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ। উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সাত বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ১৪টি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে, তার সবগুলোকেই পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা করে সংগ্রহ করতে হবে। ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের বেশির ভাগই ২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০১৬ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অনুকূলে সীমান্ত ব্যাংক এবং ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ নামে আরেকটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত রোববার বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে তফসিলি ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে চালু হওয়া সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৪৯৮ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংকের ৪৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংকের ৪৫২ কোটি টাকার ওপরে, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৪২৮ কোটি টাকা, প্রবাসী উদ্যোক্তাদের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫৬২ কোটি টাকার বেশি, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ৪২৫ কোটি টাকা এবং এনআরবি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ‘নতুন প্রজন্মের’ একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, তার ব্যাংক বর্তমান নির্ধারিত মূলধনই সংরক্ষণ করতে পারছে না। নতুন করে ১০০ কোটি টাকা বাড়ানো হলে তাদের বেশ বেগ পেতে হবে। কারণ ব্যাংকের উদ্যোক্তারা যে টাকা ব্যাংকে বিনিয়োগ করেন, তার চেয়ে বেশি টাকার সুবিধা নিতে চান।

তবে পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু গণমাধ্যমকে বলেন, তার ব্যাংকে পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, পদ্মা ব্যাংকের মূলধন এখন ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে চালু হওয়া ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের শর্ত ছিল ৪০০ কোটি টাকা। এখন সেটি ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আগামীতে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ আরো বাড়ানো হতে পারে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের ক্ষেত্রে সব ব্যাংকের জন্য একই নির্দেশনা দিতে চায়। অচিরেই বিষয়টি নিয়ে নির্দেশনা জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে চালু হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ওই ঝুঁকি থেকে উত্তরণে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সাবেক ফারমার্স বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটাতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) ও আইসিবি থেকে মূলধন জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা চলছে। আরেকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর জন্য পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা, অথবা ঝুঁকিবাহিত সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের অনুপাত (সিআরএআর) ১০ শতাংশ বা এর মধ্যে যেটা বেশি হবে, সেই পরিমাণে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close