নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ স্বেচ্ছায় বেকার থাকছে : পরিকল্পনামন্ত্রী

শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটি অংশ স্বেচ্ছায় বেকার থাকছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, কাজ পেতে হলে আগে তরুণদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ তরুণদের অনেকে বেকার থাকে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে কাজ করতে চায় না। বেশি সচেতন হওয়া গ্রামের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কৃষিতে থাকছে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শহরমুখী হচ্ছে। সবার জন্য কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা বেকার থাকছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিকাশের সহযোগিতায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) আয়োজিত ‘২০১৯ ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সামিট’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এম এ মান্নান বলেন, অধিক উৎপাদনে কৃষি থেকে শিল্পে ঢুকছি। শিক্ষা প্রবেশ করেছে আমাদের গ্রামে। যেটা শ্রমের প্রধান উৎস। প্রযুক্তিও সমান তালে প্রবেশ করছে। বেশি সচেতন হওয়ায় তারা (গ্রামের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী) কৃষিতে থাকছে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী শহরমুখী হচ্ছে। তাই শহুরে যেসব কাজ, এসব কাজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সবার জন্য কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই যে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা বেকার থাকছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আরেকটি গ্যাপ আছে। কিছু লোক আছে, তারা বেকার বাই চয়েজ (স্বেচ্ছায়)। তারা গ্রামে যাবে না। যে চাকরিটা তাকে দেওয়া হচ্ছে বাজারের প্রয়োজনে, এটা সে করবে না। সে চায়, চেয়ার দুলিয়ে কাজ করা না করার একটা আধা কাজের মানসিকতা। এটা এখন সম্ভব নয়। এখন আমাদের কাজ করতে হবে হাতেকলমে। বাজারে যেটার চাহিদা আছে। এজন্য কিছু লোক বেকার থাকছে বলে মনে করেন তিনি।

দেশের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমানোর মানসিকতাও রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, আর কিছু আছে তরুণ বয়সী তারা অন্য কোথাও অন্য কোনো খানে পশ্চিমে-উত্তরে যেতে চায়। সেটারও ব্যাখ্যা আছে। আমাদের দেশের বাজারে তারা যথেষ্ট জায়গা পাচ্ছে না। বিদেশে গেলে তারা এমন কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করবে যেটা আমাদের সমাজে নানা সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত কারণে দিচ্ছে না। সুতরাং এসব হাজার হাজার তরুণ-যুবক ওই জীবনের খোঁজে যেতে চায়।

এম এ মান্নান বলেন, টেকসই উন্নয়নে আমাদের আরো বেশি কাজ করতে হবে, এখন যা করছি তার চেয়েও বেশি। এর মধ্যে মানব উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিশ্বাস করুন, বিগত দিনগুলোতে দেশে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এসেছে। এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্যে ফোকাস থাকতে হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, তিনি বলেন, জনগণকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত করতে হবে। সরকার বয়স্কভাতা, বিধবাভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা এবং সুবিধা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দিচ্ছে। যাতে গ্রামে অর্থ প্রবাহ বাড়ে। আমাদের অর্থনীতির বড় অংশ কিছু দিন আগেও ছিল আর্থিক খাতের বাইরে। সরাসরি বিনিময় হতো মানুষের হাতে। নিখুঁত টাকা ঢুকবে, ঘুরবে বেশি, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। এটাকে ত্বরান্বিত করলে আমাদের লাভ হবে বেশি। এজন্য ব্যাংকগুলো আমরা আইন করে বলছি, গ্রামে শাখা খুলতে হবে। আমাদের এই মুহূর্তে দারিদ্র্যবিমোচন এবং বৈষম্য দূরীকরণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা পাওনা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিকাশ, ডাচ্-বাংলাসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমরা গ্রামে পাঠাই। এছাড়া আমরা যে সহায়তাগুলো দেই গ্রামীণ কৃষক, মৎস্যজীবী বা অন্যদের সেগুলো কিন্তু আমরা ক্যাশের মাধ্যমে দেই। এই যে আমাদের ইনক্লুশন বা অন্তর্ভুক্তিকরণ করা; আমি মনে করি, এই সম্মেলন এই অন্তর্ভুক্তিকরণে সহায়তা করবে। এছাড়া আরো অনেক উপায় আছে। যত দিন যাচ্ছে ততই এ রকম আইডিয়া আসতে থাকবে বলেও মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তারাও সেটাই করেন। তবে আমরা দেশের বাইরে থেকে প্রযুক্তি এনে আমরা সেটা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। তবে এটা মোকাবিলা করার জন্য সার্বিকভাবে আপনাদের কান খাঁড়া রাখতে হবে। সরকারের কান খাঁড়া আছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ইউল্যাবের গবেষণা বিভাগ সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ ল্যান্ড সোসাইটির পরিচালক সাজিদ অমিত। তিনি বলেন, মানুষের সঞ্চয় দিন দিন বাড়ছে। সঞ্চয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগটা কাজে লাগানো যাচ্ছে। এই বিনিয়োগের কারণে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটা ভার্চুয়াল সাইট তৈরি হচ্ছে। এটিই মূল উদ্দেশ্য। স্বাগত বক্তব্যে আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান ইউল্যাবের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিশেষ উপদেষ্টা প্রফেসর ইমরান রহমান। এরপর বিকাশের সিইও কামাল কাদির মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ধারণা সম্পর্কে সবার সামনে তুলে ধরেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close