নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ভর্তুকি চেয়েছে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সরকারের কাছে ৩৫০ কোটি টাকা ভর্তুকী চেয়েছে। শ্রমিক/কর্মচারিদের বকেয়া বেতন ভাতাসহ চিনি উৎপাদন খরচের জন্য চলতি অর্থবছরে এই টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অর্থমন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আংশিক সাড়া দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে ভর্তুকী বাবদ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া সম্মতি দিয়েছে। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির লোকসান কাটাতে এর আগেও ভর্তুকি হিসেবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বেশি দামে চিনি উৎপাদন করে তা কম দামে বিক্রি করার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাগত লোকসান দিচ্ছে। এই লোকসান পূরণে জন্য গত পাঁচ অর্থবছরে বিএসএফআইসিকে প্রায় ৪০৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় বলছে,অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই এই মুহূর্তে বিএসএফআইসিকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়া যেতে পারে।

সূত্র জানায়, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিএসএফআইসি কর্তৃক উৎপাদিত চিনি সরকার নির্ধারিত রেটে বা দামে (উৎপাদন খরচ থেকে কম রেটে) বিক্রি করেছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১০-১২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করে কম মূল্যে বিক্রি করেছে বিএসএফআইসি। এতে প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড গ্যাপ হয়েছে ৪৮৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। উল্লেখিত লাকসান ও ট্রেড গ্যাপের কারণে চলতি অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে শ্রমিক/কর্মচারিদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-বাতাসহ চিনি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তাই চিনিকলগুলোকে সচল রাখতে ভতুর্কী ও ট্রেড গ্যাপ সমন্বয়ের শর্তে ৩৫০ কোটি টাকা চেয়েছে বিএসএফআইসি। অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখ করেছে, চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে বিএসএফআইসি’র উৎপাদন ক্ষমতা আনুমানিক ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসাবে চাহিদার মাত্র ১১ দশমিক ৬ শতাংশ উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান বাজারে চিনির খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ৫৫ টাকা। বিএসএফআইসি’র প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় ১০০ টাকা। সে হিসেবে বাজার মূল্যের চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ প্রায় ৪৫ টাকা বেশি। বাজারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত চিনির দামের চেয়ে বিএসএফআইসি’র চিনির দাম বেশি হওয়ায় গুদামে এ বছর ৬০ হাজার মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এগুলোসহ নানা কারণে প্রতিষ্ঠানিটর ক্রমবর্ধমান লোকসানের পরিমাণ দাড়িয়েছে আনুমানিক ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এসব কারণেই প্রতিষ্ঠানটি অর্থমন্ত্রণালয়ের কাছে ভতুর্কী ও ট্রেড গ্যাপ বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় দেখেছে, বিএসএফআইসি বর্তমান ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিদ্যমান বাজার দরে চিনি উৎপাদন করতে সক্ষম নয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দিচ্ছে। এছাড়াও চিনি আমদানি প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ না হওয়া সত্তে¡ও চিনি আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ লোকসান দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে মনে করছে না অর্থমন্ত্রণালয়। তাই চিনির বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসএফআইসিকে সচল রাখার স্বার্থে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। এর আগেও চলতি অর্থবছরেই এই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। ফলে চলতি অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ভর্তুকী বাবদ মোট ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভতুর্কী ও ট্রেড গ্যাপ হিসেবে দেওয়া ৫০ কোটি টাকা অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অনুকূলে ভতুর্কী খাতে এ অর্থ সমন্বয় করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist