বিজ্ঞান ডেস্ক

  ১১ জুন, ২০১৭

গ্রহখেকো তারা!

যেন একটা কেটলিতে জল ফুটছে আর সেই কেটলির মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে গরম ধোঁয়া! আর সেই জল কেটলিতে ফুটতে ফুটতে পুরোটাই উবে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে সেই কেটলিতে আর একটুও জল পড়ে নেই। পুরোটাই উবে গেছে। ঠিক একই রকম অবস্থা হয়েছে মহাকাশে। আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি দাউদাউ করে জ্বলা একটা তারা বা নক্ষত্র নিজেরই একটা ‘সন্তান’, যে কিনা আস্ত একটা গ্রহকে গিলে খাচ্ছে। আর এতে বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন একটা দিন আসবে যখন ওই ভিন গ্রহটির আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।

একেবারে হালে সেই রাক্ষুসে তারা আর তাকে পাক মেরে চলা ও ধীরে ধীরে উবে যাওয়া গ্রহ ‘কেল্ট-৯বি’ ধরা পড়েছে ২৭ বছর ধরে মহাকাশে থাকা হাব্?ল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে। অন্য নক্ষত্রম-লের সেই ভিন গ্রহটি চেহারায়, আকারে-আকৃতিতে দেখতে অনেকটা আমাদের বৃহস্পতির মতো। পুরোটাই গ্যাসে ভরা। আর অসম্ভব গরম সেই গ্রহটি।

ওই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি টেক্সাসের অস্টিনে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির গ্রীষ্মকালীন বৈঠকে সেই গবেষণাপত্রটি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার পর তা নিয়ে শোরগোলও শুরু হয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এত গরম ভিন গ্রহের হদিস এর আগে মেলেনি। ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটিই এই ব্রহ্মান্ডে আপাতত সবচেয়ে উষ্ণ কোনো গ্রহ। শুধু তাই নয়, সূর্যের মতো যত তারা বা নক্ষত্রের হদিস মিলেছে এখন পর্যন্ত, তাদের বেশিরভাগের চেয়েই অনেক অনেক বেশি গরম, গা অনেক বেশি তেতেপুড়ে যাচ্ছে এই সদ্য অবিষ্কৃত ভিন গ্রহ-‘কেল্ট-৯বি’র।

চাঁদ যেমন তার একটা পিঠ সব সময় রাখে পৃথিবীর দিকে, এই ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটিও তেমনই তার একটা পিঠ সব সময় রাখে তার নক্ষত্র ‘কেল্ট-৯’-এর দিকে। আর তার অন্য পিঠটি সব সময়েই থেকে যায় অন্ধকারে। ওই ভিন গ্রহের যে পিঠটি সব সময় তার নক্ষত্রের দিকে থাকে, তার নাম-‘ডেসাইড সারফেস’। অন্য পিঠটির নাম-‘নাইটসাইড সারফেস’। বছরভর, সারাক্ষণ সেই গ্রহটির ‘ডেসাইড সারফেস’-এর তাপমাত্রা থাকে ৭ হাজার ৮০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪ হাজার ৩১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৪ হাজার ৬০০ কেলভিন)।

মূল গবেষক কলাম্বাসের ওহাইয়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক স্কট গাউরির দাবি, ‘এত গরম, গ্যাসে ভরা ভিন গ্রহের হদিস এর আগে মেলেনি। আমাদের বৃহস্পতির মতো গ্যাসে ভরা গ্রহ হলেও ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটি ‘গুরুগ্রহ’-এর চেয়ে প্রায় তিন (সঠিক হিসেবে, ২.৮ গুণ) গুণ ভারী। যদিও তার ঘনত্ব আমাদের বৃহস্পতির প্রায় অর্ধেক।’

আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির গত সপ্তাহের বৈঠকে ওই গবেষণাপত্রটি নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে ‘নানা মুনির নানা মত’। কেউ বলছেন, সত্যি-সত্যিই কি কোনো গ্রহ অতটা গরম হতে পারে? অনেক তারা বা নক্ষত্রের চেয়েও যে বেশি গরম ‘কেল্ট-৯বি’ ভিন গ্রহটি। তাদের সংশয়, অন্য কোনো ধরনের মহাজাগতিক বস্তু নয় তো ‘কেল্ট-৯বি’

সহযোগী গবেষকদের অন্যতম, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বসন্ত রেড্ডি জানিয়েছেন, ‘ভরের নিরিখে ‘কেল্ট-৯বি’কে গ্রহ বলে মনে হলেও, তার যে বায়ুমন্ডল রয়েছে বলে এখন পর্যন্ত আমাদের অনুমান, তা কোনো গ্রহের হতে পারে বলে আমাদের জানা নেই। ওই গ্যাসে ভরা ভিন গ্রহটির যে পিঠটি সব সময় তার নক্ষত্র ‘কেল্ট-৯’-এর দিকে থাকে, তার যা তাপমাত্রা জানা গেছে, তা কোনো গ্রহের হলে আর সর্বক্ষণ সেই গ্রহটিকে সেই তাপমাত্রায় পুড়ে যেতে হলে, সেই গ্রহের বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। আর সেই গ্রহটির যদি বায়ুমন্ডল থেকেও থাকে, তার অত গরম নক্ষত্রের সুতীব্র বিকিরণে সেই বায়ুমন্ডলের উবে যেতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়।’ তবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, যেভাবে অসম্ভব তাপ ঠিকরে বেরুচ্ছে ওই নক্ষত্র ‘কেল্ট-৯’-এর পিঠ থেকে, তাতে সেই তারাটিও আর খুব বেশি দিন ওই অবস্থায় থাকবে না। হয়ে যাবে ‘লাল দানব নক্ষত্র’ বা ‘রেড জায়ান্ট স্টার’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist