কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

উপজেলা আ.লীগ নেতাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন জেলা সভাপতির

কুষ্টিয়ার খোকসায় অভিযোগ

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে দলের জেলা সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার দাবি করে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় খোকসা বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন দলের কয়েকশ নেতাকর্মী। নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে সদর উদ্দিন খান ও তার ভাই রহিম খানকে দল থেকে বহিষ্কারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খোকসা উপজেলার শোমসপুর এলাকায় একটি ধানের চাতালের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন। দলের জেলা সভাপতির বাড়িতে নির্যাতনের পর খোকসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান তিনি। পরে আলমগীর হোসেনকে ভয় দেখিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে কুষ্টিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরূপ সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী আলমগীর খোকসা থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।

লিখিত অভিযোগে আলমগীর হোসেন জানান, আসন্ন খোকসা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উদ্দিন খানের ভাই রহিম খান চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করতে বলেন সদর উদ্দিন। একই সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান ও খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আক্তারের পক্ষে নির্বাচন করতে নিষেধ করেন তিনি। নিষেধ না মানায় তাকে তুলে নিয়ে তার বাড়িতে আটকে রেখে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান। তার দাবি, এ ধরনের কোনো ঘটনা তার জানা নেই। ওই সময় তিনি বাড়িতেও ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। এখন কত কথা শোনা যাবে। তার সব কথা তো সত্যি নয়।’

তুলে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে নির্যাতনের শিকার আলমগীর হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার শোমসপুর এলাকায় এক ব্যক্তির ধানের চাতালের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল এসে তাকে বলেন, ‘বড় কাকা (সদর উদ্দিন খান) ডাকছে, যেতে হবে।’ একপর্যায়ে রহিম খানের ছেলে রবিনসহ চারজন তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে একটি মোটরসাইকেলের মধ্যে বসিয়ে তুলে নিয়ে যান। অন্য যুবক তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসেন।

আলমগীর হোসেন আরো বলেন, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে শোমসপুর গ্রামে সদর উদ্দিন খানের বাড়ির দোতলার একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়। এ সময় সদর উদ্দিন খান লাঠি হাতে করে এসে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে তার ভাইয়ের পক্ষে কাজ করার জন্য হুমকি দেন। এরপর শুরু হয় নির্যাতন। লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন। একপর্যায়ে বিছানায় থাকা একটা অস্ত্র হাতে নেন সদর উদ্দিন খান। এভাবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট চলে নির্যাতন। শারীরিক নির্যাতনই নয়, একপর্যায়ে কোরআন শরিফ নিয়ে শপথ করান এবং কাউকে এ বিষয়ে বলতে নিষেধ করেন। এ সময় একটি ফোন এলে দরজা খুলে দেওয়া হয়।

পরে সরদ উদ্দিনের ভাইয়ের ছেলে রবিনের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে করে তুলে নেওয়ার স্থানে আলমগীরকে রেখে আসে। পরে থানা-পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সন্ধ্যায় তিনি নিজে বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। জানতে চাইলে খোকসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক শাহিনা খানম জানান, আলমগীর হোসেনের ডান হাত ও এক পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে যান।

খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার বলেন, ‘আলমগীর হোসেনকে নির্যাতনের বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হচ্ছে। সদর উদ্দিন খানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে।’ এবার দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষনা দিলেন তিনি। খোকসা থানার ওসি আননূর যায়েদ বলেন, ‘একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সমাবেশ মামলার বাদী আলমগীরের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, থানা পুলিশ সদর খানের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে বলেছেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে, কোনো আসামি বাদ দেওয়া বা যোগ করার ব্যাপার নেই। তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্ঠতা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা নেওয়া হবে।’ এদিকে শুক্রবার বেলা ১১টায় খোকসা বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে উপজেলা চেয়ারম্যান বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে কয়েকশ নেতাকর্মী বাসস্ট্যান্ডে আসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন, খোকসা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এস এম এমদাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তাজবীর আহম্মেদসহ কয়েকশ নেতাকর্মী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close