প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৩ মে, ২০২৪

গাছ লাগানো নিয়ে যা জানা দরকার

তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে পরিবেশ প্রশ্নটি সামনে এসেছে। জলাধার ও সবুজের ভারসাম্যের বিষয়টি অনুভূত হচ্ছে। দেশে বৃক্ষরোপণের পক্ষে সরব প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিভিন্ন পরিসরে গাছ লাগানোর আহ্বান বেশ জোরেসোরে শোনা যায়। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কর্মসূচিও দেখা যাচ্ছে। তবে এখন গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, উপযুক্ত সময়, স্থান ও ধরন বা প্রজাতি মেনে গাছ না লাগালে উপকারের বদলে বরং ক্ষতি বেশি হতে পারে। এই সময়ে বৃক্ষরোপণের যথার্থতা নিয়ে কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, যখনকার কাজ তখন করতে হবে। এখন অসময়ে গাছ না লাগিয়ে বরং নতুন করে যেন বৃক্ষনিধন করা না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। নতুন গাছ লাগালে সেগুলোর যত্ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা উচিত।

কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, দেশে চারা রোপণের উৎকৃষ্ট সময় বর্ষাকাল। তবে রোপণের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে সারা বছরই ‘চারা-কলম’ লাগানো যায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ খ ম গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘বর্ষার শুরু অথবা শেষের দিকে গাছ লাগানো ভালো।’ তবে কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, প্রথম বৃষ্টির পরপরই চারা লাগানো উচিত হবে না। কারণ প্রথম কয়েক দিন বৃষ্টির পরপরই মাটি থেকে গরম গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়, যা চারা গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এমনকি চারা মারা যায়। বলা হয়, যেকোনো গাছের চারা রোপণ করার সর্বোত্তম সময় দিনের শেষভাগে অর্থাৎ পড়ন্ত বিকেল বেলায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘আমরা ভুল গাছ লাগিয়েছি ভুল জায়গায়। ঢাকা শহরের রাস্তার মাঝখানে বট গাছ লাগানো হয়েছে। যে গাছে পাখি বসে না, বাসা বাঁধে না সে গাছ আমরা লাগাতে পারি না। ফুল গাছ সৌন্দর্যবর্ধক, তাই বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় অনেকেই ফুল গাছ লাগান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানীর মতে, ফুল গাছ নান্দনিকতা বাড়ায়। তবে ফলদ গাছ পাখিসহ অন্যান্য প্রাণীর আশ্রয় ও খাবারের উৎস। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে এ ধরনের বনায়ন।

অধ্যাপক আ খ ম গোলাম সারওয়ারের মতে, কোনো এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে যেসব গাছের আধিক্য বেশি নতুন গাছ লাগানোর সময় সেগুলোই বেছে নেওয়া পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- মধুপুর বা ভাওয়াল বনাঞ্চল এলাকায় শাল গাছের উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই সেখানকার আশপাশের এলাকার মাটিতে শাল গাছ লাগানোটাই ভালো। দীর্ঘদিন ধরে যে প্রাকৃতিক বন গড়ে ওঠে সেখানকার গাছগুলো সেই পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ভালোভাবে অভিযোজিত।’

ইউক্যালিপ্টাসের মতো আরো কিছু বিদেশি প্রজাতির গাছ নিয়ে গবেষক ও উদ্ভিদবিদদের উদ্বেগও রয়েছে। তারা মনে করেন এসব গাছ বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অপরিসীম ক্ষতি করেছে। ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে একসময় ধানখেতের পাশে ইউক্যালিপটাস লাগানো হতো। কয়েক বছর পরে দেখা গেল মাটিতে দূর্বাঘাস পর্যন্ত গজাচ্ছে না।’

গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, মূলত বিদেশি প্রজাতি, যেমন- রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশিয়া, শিশু, বাবলা ও ইউক্যালিপটাস জাতীয় গাছের জন্য প্রচুর জায়গার দরকার হয় এবং এগুলো দেশি গাছের তুলনায় অনেক দ্রুততার সঙ্গে বেশি পরিমাণে পুষ্টি মাটি থেকে শুষে নেয়। ফলে, তাদের সঙ্গে অন্য প্রজাতির গাছ বাঁচতে পারে না। এভাবে জৈববৈচিত্র্যের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close