পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি

  ২১ নভেম্বর, ২০২১

৬০০ পরিবারকে আশার আলো দেখাল ইসলামিক রিলিফ

হতভাগী সাহিদা বেগম। বাড়ি পীরগাছার কৈকুড়ী ইউনিয়নের নজর মামুদ গ্রামে। প্রতিবন্ধী স্বামী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে বেকায়দায় পড়েন সাহিদা বেগম। একদিকে অভাবের সংসার। অন্যদিকে প্রতিবন্ধী স্বামীর হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে না পারা। এই যেন কষ্টকর জীবনের ঘানি টানা। কিন্তু কী করবেন? জানেন না। সামান্য সেলাইয়ের কাজ করে চলছিল না সংসার। অভাব ও বিপদ যেন পরিবারের ওপর ভর করেছে। তার মতো মালতি রানীর অভাবের সংসার। স্বামী ধীরেন্দ্র নাথ চন্দ্র রায় মৌসুমি জেলে। পানি থাকলে মাছ ধরেন, না থাকলে নাই! টেনেটুনে চলছিল সংসার। বাড়ি কৈকুড়ী ইউনিয়নের সুবিদ রায়পাড়া গ্রামে। একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীর মৃত্যুতে দিশাহারা হয়ে পড়েন মালতী রানী। পাশের ধানের চাতালে কাজ করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে থাকেন। এমন সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ। তাদের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তায় পরিবার দুটির মুখে ফুটেছে হাসি। ছেলেমেয়েরাও হয়েছেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত।

এ রকম ৬০০ দরিদ্র, অসহায়, বিধবা ও অভাবগ্রস্ত মানুষকে আলোকিত জীবনে ফিরে এনেছেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ। পীরগাছা উপজেলা কৈকুড়ী ইউনিয়নে ১২টি গ্রামের এসব পরিবার এখন স্বাবলম্বী। এলাকাভিত্তিক দল গঠন করে আয়বৃদ্ধির জন্য ৫০০ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এককালীন ৫০ লাখ টাকা। ৬০০ পরিবারকে চাল-ডাল, ৩২৭৫ পরিবারে প্রতি বছর দেওয়া হয় কোরবানির মাংস, ১০০ পরিবারকে রমজানের খাদ্যসামগ্রী ও নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ। এসব দলের সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন বাল্যবিয়ে, যৌতুকের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছেন ১১টি বাল্যবিয়ে। নিজেদের প্রচেষ্টায় দেওয়া হয়েছে ৮টি যৌতুকবিহীন বিয়ে। এসব পরিবারে সদস্যরা গবাদিপশু পালন, দর্জি, মুদি দোকান, সেলাই প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মসামাজিক উন্নয়নে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন।

জানা যায়, নজর মামুদ গ্রামে ২০-২৫ জনের একটি দল সভা করছে। যেখানে বাল্যবিবাহ, যৌতুকের কুফল, নারী নির্যাতন, নারীর অধিকার, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার, নিরাপদ পানি, শিশুদের পড়াশোনা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করছেন নারীরা। এই দলের সভাপতি রাশেদা বেগম জানান, এলাকায় বাল্যবিবাহের হার কমেছে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারের ফলে এলাকায় রোগব্যাধি কমেছে, নারীরা সচেতন হয়েছে ও নারী নির্যাতন কমেছে।

কথা হয় সাহিদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অভাবে সংসারে সংস্থাটি আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে। এককালীন ১০ হাজার টাকা নিয়ে দর্জির কাজের পাশাপাশি নিজ বাড়িতে একটি মুদি দোকান দেই। ব্যবসায় আয় বাড়তে থাকে। এরপর একটি গাভি ক্রয় করে এবং দুধ বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এখন সংসারের অভাব নেই। আমার প্রতিবন্ধী স্বামীকে একটি হুইলচেয়ার দিয়েছে সংস্থাটি। তারা সব সময় আমাদের সুখে দুঃখে পাশে থাকছে।

মুদি দোকানি মালতি রানী বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমি দিশাহারা হয়ে পড়ি। ইসলামিক রিলিফ বাংলদেশের স্বনির্ভর দলের সদস্য হয়ে এককালীন ১০ হাজার টাকা নিয়ে চাতালের কাজের পাশাপাশি ছোট দোকান দেই। এখন সচ্ছলতার সঙ্গে জীবন-যাপন করছি।

সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমরা অতিদরিদ্র পরিবারকে আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে অসচ্ছলতা দূরীকরণ, অর্থনৈতিক ও আত্মসামাজিক উন্নয়ন, আয়বর্ধনমূলক কর্মসৃষ্টি, শিশুদের শিক্ষা ও অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা উন্নীতকরণ এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছি। তারা এখন নতুন জীবনে ফিরে এসেছে। সামনের দিনগুলোতে তারা নিজেরাই এগিয়ে যেতে পারবে।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবুর রহমান বলেন, সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা অনেক। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ অসহায় ৬০০ পরিবারকে স্বাবলস্বী করতে যে কার্যক্রম করেছে তা সত্যিই ব্যতিক্রম। এটি দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি মডেল দৃষ্টান্ত। আমি চাই সংস্থাটির কার্যক্রম আরো প্রসারিত করে অন্য ইউনিয়নের সুফল ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close