চট্টগ্রামে বুধবার ৪ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী মশক নিধনে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হবে। প্রতিদিন চারটি করে মোট ৪১টি ওয়ার্ডে ১০ দিন মশার ওষুধ ছিটানোর পর আবার পুনঃকার্যক্রম পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চলবে। সিটি করপোরেশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সিটি করপোরেশনের বাটালী হীলস্থ সম্মেলন কক্ষে মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিরূপণ ও প্রয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা নির্ধারণে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের (চবি) বিশেষজ্ঞ টিমের গবেষণা প্রতিবেদন গ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চসিকের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এ বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রামের ঘোষণা দেন। মেয়র এসময় জানান, মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২৫ জন স্প্রেম্যান ওষুধ ছিটাবেন। মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিরূপণ ও প্রয়োগ পদ্ধতির ভিন্নতা নির্ধারণে চবি কীটতত্ত্ব বিভাগের গবেষণা প্রতিবেদন লব্ধ একটি নতুন ইতিবাচক মাত্রা যুক্ত করেছে বলে তিনি করে বলেন, এর ভিত্তিতেই বর্তমান মশক নিধনের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চলবে। মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম অর্থাৎ প্রতিটি ওয়ার্ডে এক মাসে তিনবার ওষুধ ছিটানো হবে। এর বাইরে নিয়মিত কার্যক্রমও চলবে। এভাবে মাসব্যাপী কার্যক্রমে ১০০ জনবল সম্পৃক্ত থাকবে। বিশ^বিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ এর গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ প্রস্তাবনা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন তৈরির জন্য চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতারকে অনুরোধ জানালে তিনি তাতে সাড়া দিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে গবেষণা কর্ম সম্পাদনে সচেষ্ট ছিলেন এবং তার তত্ত্বাবধানে কীটতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরা যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সত্যিই নগরবাসীর জন্য বড় প্রাপ্তি। এ জন্য চবি উপাচার্যসহ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেয়র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মশক নিধনে এ ধরনের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন চসিকই এ-ই প্রথমবারের মতো পেয়ে সারা দেশে মশক নিধনে দিকনির্দেশনামূলক উপায় অন্বেষণের পথ দেখিয়েছে। চবির উপাচার্য ড. শিরিণ আখতার মশক নিধনে চসিকের কার্যক্রমকে অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করতে গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন তৈরির জন্য চবিকে দায়িত্ব দেওয়ায় সন্তোষ ও পরিতৃপ্তি জানিয়ে বলেন, এই দায়িত্বটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের এবং গর্বেরও।

আমরা চেষ্টা করেছি, একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ প্রস্তাবনা ও সুপারিশ সমৃদ্ধ গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে। এতে মেধা, যোগ্যতা ও সামর্থকে উজার করে দিয়েছি। এতে যদি মশক নিধন সফল হয় আমাদের শ্রম সার্থক হবে। তিনি জানান, প্রতিবেদন তৈরিতে বিশেষজ্ঞ টিম ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করেন। এর মধ্যে ৫৭টি স্পট থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। এ সংগৃহীত লার্ভার মধ্যে ১৫টি স্পটে লার্ভার শতভাগই ছিল এডিস, অ্যানাপলিস ছিল ৩৯টিতে। প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয় যে, ফগার মেশিনের চেয়ে স্প্রে-মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলে তার কার্যকারিতা ফলপ্রসূ হবে। তবে ফগার মেশিনে ছিটানো ওষুধের ভিন্নতা আনলে এর কার্যকারিতা পূর্ণতা পাবে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে মশা প্রজনন প্রতিরোধ সম্ভব। এ ধরনের মাছ লার্ভা খেয়ে বিনাশ করে। এ ছাড়া উদ্ভিদেও পুদিনাপাতা, লেবুপাতা, তুলসীপাতা, নিমপাতার, তেজপাতার ঘ্রাণ মশার প্রজনন প্রতিরোধ করে। চবি ভিসি এ প্রসঙ্গে সুপারিশ করেন যে, সিটি করপোরেশনের যেসব আইল্যান্ড আছে সেখানে এ ধরনের উদ্ভিদের চারা রোপণ করা হলে মশা নিধন অনেকটা সহজ সাধ্য হবে।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল আলমের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন উপস্থাপন সভায় বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি চবি উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী, শৈবাল দাশ সুমন, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, চবি গবেষণা টিমের আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক রবিউল হাসান, ড. মো. ওমর ফারুক, ড. তাপসী বোস, ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ। চবি গবেষণা টিমের আহ্বায়ক অধ্যাপক রবিউল হাসান প্রতিবেদনটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন করেন।

"