মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯

পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো অসহায়দের

ইয়াবা সেবনের নিরাপদ ঠিকানা ছিল এসআই রোকনের বাসা!

রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া। সপ্তম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা লালাবাজারে কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ার মেঘনা এ-২৬/১ বাসার নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি। সেখানে রিমা বেগম (৩৫) নামে তার এক বান্ধবীকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বসবাস করে আসছিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এসআই রোকন এ ভাড়া বাসায় গড়ে তোলেন অপরাধের স্বর্গ রাজ্যে। পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি মজুদ করেন ইয়াবার। প্রায়ই অপরিচিত লোকের আসা-যাওয়া ছিল ওই বাসায়। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে রোকন ও রিমা দুইজন মিলে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে গরিব, অসহায় ও সুন্দরী মহিলা ও শিশুদের এ বাসায় নিয়ে আসতেন। এরপর তাদের জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতেন।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। অবশেষে গত শনিবার মধ্যরাতে ইয়াবার বড় চালানের খবর পেয়ে ওই বাসায় অভিযান চালান র‌্যাব-৯ এর সদস্যরা। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর দরজা না খোলায় র‌্যাবের আভিযানিক দল দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তল্লাশি চালিয়ে ৬০ পিস ইয়াবা, ছয়টি মোবাইল ফোন, ছয়টি সিমকার্ড, পতিতাবৃত্তি ও ইয়াবা ব্যবসার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪২২ টাকাসহ দুই মেয়েকে উদ্ধার করে। এ সময় এসআই রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া ও রিমাকে আটক করে র‌্যাব। রোকন সিলেট নগরীর মুন্সিপাড়ার আবদুর রশিদের ছেলে ও রিমা নেত্রকোনার কালিয়াজুড়ি থানার আটগাঁওয়ের মৃত মফিজুল মিয়ার মেয়ে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোকন র‌্যাবকে জানিয়েছেন, রিমার সঙ্গে তার পরকীয়া ছিল। তারা দুইজনে মিলে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে গরিব, অসহায় ও সুন্দরী মহিলা ও শিশুদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ওই বাসায় নিয়ে আসতেন। পরে জোর করে ইয়াবা সেবন করিয়ে তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করতেন। এর আগেও বিভিন্ন অপরাধে এই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পারিবারিক জীবনে রোকন উদ্দিনের স্ত্রী ও দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে। রোকনের সঙ্গে মনোমালিন্য থাকায় তারা নগরীর মুন্সিপাড়ায় আলাদা বসায় বসবাস করেন।

রিমা জানান, আড়াই বছর আগে রোকনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আগে তিনি পতিতাবৃত্তি করতেন। রোকনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর দুইজনে মিলে ইয়াবা ব্যবসা ও পতিতাবৃত্তির কাজ চালিয়ে আসছিলেন। ইয়াবা সংগ্রহ করতেন রোকন আর মেয়ে সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল রিমা বেগমের।

র‌্যাব সূত্র জানায়, কাজের প্রলোভন দিয়ে দুই মাস আগে রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া ১২ ও ১৩ বছর বয়সি দুটি মেয়ে শিশুকে সিলেটে তার ওই ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে তাদের আটকে রেখে বাধ্য করেন পতিতাবৃত্তিতে। তাদের ইয়াবা সেবনেও বাধ্য করা হতো। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনজন খদ্দেরকে সঙ্গ দিতে হতো তাদের। নানা চেষ্টা করেও শিশু দুটি তাদের হাত থেকে রোহাই পেত না।

মেয়ে দুটি র‌্যাবকে জানায়, কাজের কথা বলে এখানে তাদের নিয়ে আসা হয়। এরপর শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। বাধ্য করা হয় পতিতাবৃত্তি ও ইয়াবা সেবনে। এসব কাজে অনীহা প্রকাশ করলে তাদের দুইজনের ওপরই নির্যতন চালানো হতো। তাদের একজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার মাঝিকোনায় এবং অপরজনের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার ফুলবাড়ী এলাকার।

দাড়িয়াপাড়ার ওই বাসার কেয়ারটেকার আপ্তা মিয়া জানান, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর রোকন নিজেকে ডিসি অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই বাসা ভাড়া নেন। এরপর থেকেই ওই বাসায় প্রায়ই অপরিচিত লোকের আসা-যাওয়া ছিল। তারা রোকনের বন্ধু বা রিমার ভাই পরিচয়ে বাসায় আসতেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, গ্রেফতার রোকন ও রিমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে র‌্যাব বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেছে। পাশাপাশি জোরপূর্বক শিশুদের পতিতাবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে। গত রোববার দুপুরে সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় র‌্যাব-৯ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের। তিনি বলেন, গ্রেফতার রোকন উদ্দিন ভুঁইয়া পুলিশের এসআই হিসেবে বর্তমানে সাত-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সিলেটের লালাবাজারে কর্মরত আছেন। তারা দুইজন অবৈধভাবে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দাড়িয়াপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে গরিব, অসহায় ও সুন্দরী তরুণী ও শিশুদের ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা সেবনের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close