হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প
পশু ডাক্তার
ঘটক আমাদের বসার ঘরে বসে আছে। ছোট চাচা বললেন, ঘটক সাহেব, ছেলে ডাক্তার তো?
ঘটক বললেন, জি জনাব।
ছেলে কোথায় চাকরি করে?
ঘটক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, এখনো চাকরি করে না, সদ্য পাস করে বেরিয়েছে।
ইরা শুনে বলল, বাদ। সবে পাস করেছে মানে চেংরা পোলাপান। নাবালক ডাক্তার বিয়ে করব নাকি! ঘুমের ওষুধ চাইলে যমের ওষুধ দিয়ে দেবে!
ইরা আমাদের চাচাতো বোন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হলো ডাক্তার বিয়ে করা। যে সে ডাক্তার হলে হবে না, প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হতে হবে। সরকারি ডাক্তার হলে ভালো হয়। আমাদের পরিবারে কোনো ডাক্তার নেই, ইরা সেই অভাব পূরণ করতে চাইছে। নিজে ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করে ফেল মেরেছে। তার এক বান্ধবী ডাক্তার বিয়ে করে তার সঙ্গে চটাংচটাং কথা বলেছে। সেও ডাক্তার বিয়ে করে দেখিয়ে দেবে। সে কম কীসে?
এক সপ্তাহ পর ঘটক আরেকজন ডাক্তারের খোঁজ নিয়ে এলো। সেই ছেলের ছবি দেখানো হলো। রাজপুত্রের মতো চেহারা। ইরা পছন্দ করল।
চাচা বললেন, ছেলেকে আসতে বলি?
ইরা বলল, বাবা খোঁজ নাও ছেলে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার কি না।
চাচা বললেন, ছেলে ইন্টার্নি করছে।
দুর! ইন্টার্নি করছে মানে ছেলে এখনো ছুরি-চাকু ভালো করে ধরতে শিখেনি। বাদ দাও তো বাবা। বিয়ের পর দেখা গেল ব্যাটা রোগীর পেট কাটতে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি সব সাফ করে দিয়েছে, ভালো হবে?
চাচা মিনমিনে গলায় বললেন, আচ্ছা বাদ।
ডাক্তারদের ছবি দেখাতে দেখাতে ঘটক গলদঘর্ম হয়ে গেল। ইরার পছন্দ হয় না। তার এক কথা, ছেলে কুচকুচে কালো হোক অথবা আফ্রিকা জঙ্গলের কোনো প্রাণী হোক আপত্তি নেই, প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হতে হবে। বান্ধবীর ওপর প্রতিশোধ নিতে হবে।
দুই মাস পর ঘটক আবার একজন ডাক্তারের খোঁজ নিয়ে এলো। পাত্রের মথায় বিশাল টাক!
ইরা বলল, টাক তো দূরের কথা, মাথা না থাকলেও সমস্যা নেই, প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হলেই হলো!
ঘটক বলল, এই ছেলে নামকরা ডাক্তার। সরকারি চাকরি করে। তার হাত যশ বেশ ভালো। মরা রোগীও তার হাত পেলে লাফ দিয়ে বেঁচে ওঠে।
ইরা বলল, বাবা বিয়ের আয়োজন কর, আমি একেই বিয়ে করব।
বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক হয়ে গেল।
এত দিনে ইরার মনের আশা পূরণ হতে চলেছে। প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার পাওয়া গেছে। বান্ধবীর ওপর প্রতিশোধ নিতে হবে না!
আমার দাদি শুনে বললেন, ভালোই হলো। ডাক্তারের কাছে গেলে লম্বা সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকতে হয়, এখন থেকে নাতিন জামাইকে দিয়ে চিকিৎসা করাব, সিরিয়াল লাগবে না।
ধুমধামে বিয়ের আয়োজন হলো।
বিয়ের দিন আমরা বরের জুতা, মোবাইল ইত্যাদি চুরি করে আনলাম, সেলামি দিলেই তবে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বর নতুন শালা-শালিদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত। এমন সময় বরের মোবাইলে একটা ফোন এলো, হ্যালো, ছাগল ডাক্তার বলছেন? ডাক্তার সাব, আমার ছাগলটা দুদিন ধরে অসুস্থ, কিছু খেতে চায় না, আপনি যদি একটু আসতেন!
আমি মোবাইল রিসিভ করে রেগে গিয়ে বললাম, এই মিয়া! পাগল ছাগলের ডাক্তার বলছেন কাকে? মাথা ঠিক আছে আপনার?
এইটা কি সরকারি ডাক্তারের মোবাইল না?
আমি বললাম, হ্যাঁ। সরকারি ডাক্তার হলেই কি গরু ছাগলের চিকিৎসা করতে হবে নাকি? যত্তসব! বলেই ফোন নিজের পকেটে রেখে দিলাম।
কিছুক্ষণ পরই আবার ফোন।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল, ডাক্তার সাব, আমার মুরগি দুইটা পাতলা পায়খানা করতাছে, কী ওষুধ খাওয়ামো?
আমি আগের চেয়ে বেশি রেগে বললাম, দেখুন সরকারি ডাক্তার বলেই এমন ফাজলামো করবেন, এইটা ঠিক না। ভদ্রতা বজায় রাখুন।
ওপাশ থেকে বলল, মুরগির ডাক্তাররের কাছে মুরগির চিকিৎসা চামু না তো কার কাছে চামু?
দাদি আমার পাশে ছিলেন। তিনি আর্তনাদ করে বললেন, ওরে! ব্যাটারা আমার নাতিন জামাইয়ের কাছে গরু-ছাগলের চিকিৎসা চাইছে কেন? এই ব্যাটা পশু ডাক্তার না তো!
বুঝলাম দাদির পশু ডাক্তার সম্পর্কে ধারণা নেই। আমি বললাম, দাদি, পশু ডাক্তারের পেশা তো অনেক ভালো পেশা, অন্যান্য ডাক্তারি পেশার মতোই। উন্নত বিশ্বে পশু ডাক্তারদের যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখা হয়।
ইরার কাছে যখন খবর গেল তার জামাই পশু ডাক্তার, সে শুধু কোৎ করে একটা শব্দ করল, তারপর বলল ওরে!, আমার প্রতিশোধের কি হবে রে!
তারপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল!
"