reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

জামাই ঘায়েল

এতিমের মতো কিছুক্ষণ অনলাইনে ঘোরাঘুরি করল ফারদিন, এর-ওর মেসেঞ্জারে নক দিল, কারো সাড়া পেল না।

এরপর ডিপি চেইঞ্জ করার জন্য গ্যালারিতে একটা ভালো ছবি খুঁজল, পেল না। উল্টো মনে হলো ডাস্টবিনে ময়লা খুঁজছে!

এদিকে আবার একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে, আইডির নাম ‘নাপা এক্সট্রা’! কারো আইডির নাম এমন হয়! ফাজলামোরও একটা লিমিট থাকা দরকার। বিরক্তিকর অবস্থা।

দূর ছাই! আর ফেসবুক চালাব না, বলেই মোবাইল ছুড়ে ফেলল সোফার ওপর। তা দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল ফারিয়া, ব্যঙ্গ করে বলল, ব্যাপার কী? ফেসবুক আর ভালো লাগে না? শয়তান আজকে হঠাৎ আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করল মনে হয়! আগে ভাবতাম ফেসবুক দিয়ে দুনিয়া চলে না, এখন দেখি ফেসবুকই দুনিয়া চালায়। ও মাগো মা! মানুষ এত মোবাইল টিপতে পারে!

ফারদিন এতে আরো রেগে গেল, রাগী গলায় বলল, এত কথা বইলো না তো বউ, চুপ করে থাকো, আমার জন্য দুইটা হাঁসের ডিম সেদ্ধ করে নিয়ে আসো। শরীর কেমন যেন দুর্বল লাগছে।

ফারিয়া জোরে জোরে হাত নেড়ে বলল, হ্যালো গাইস, হাঁস কিন্তু ডিম পাড়ে না। ডিম পাড়ে হাঁসের বউ। হাঁসের বউয়ের ডিম আনব? তার আগে বলো শরীর দুর্বল হলো কেন? মোবাইল চালাতে চালাতে?

আহা! এত কথা বলো কেন? অসহ্য!

ফারিয়া জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, একসময় তুমি আমার কথার প্রেমে পড়েছিলে, এখন উচিত কথা বললেই বলো, চুপ থাকো! আমি তো চুপ করেই আছি। মুখ সেলাই করে রাখব? তাহলে সুঁই-সুতা এনে দাও...

তুমি যেভাবে মনোযোগ দিয়ে আমার ভুল খুঁজে বের করো, সেভাবে যদি মনোযোগ দিয়ে রান্নাবান্না করতে...

ফারিয়া কথা শেষ করতে দিল না, আমি রান্নাবান্না ঠিকঠাক পারি না?

পারার যা ছিরি! গতকাল খাইতে চাইছিলাম নুডলস, তোমার রান্না হয়ে গেল সেমাই। মুখে দিয়ে দেখি পায়েস হয়ে গেছে!

আমার রান্না ভালো না লাগলে নিজে রান্না করে খেলেই হয়!

ফারদিন রাগ ভুলে দুষ্ট হাসি দিল, আহা! রান্নার মতো যদি বলতে, আমাকে ভালো না লাগলে আরেকটা বিয়ে করে নাও, কী যে ভালো লাগত!

কেন, আমাকে এখন আর ভালো লাগে না? তাহলে বিয়ে করছিলা কেন?

ফারদিন সোফায় হেলান দিতে দিতে বলল, আমি গবেষণা করে দেখেছি, মেয়েরা আসলে রাতের বেলা একা শুতে ভয় পায়। ভয় থেকে বাঁচানোর জন্যই আমরা ছেলেরা মেয়েদের বিয়ে করি। নইলে কী এমন ঠ্যাকা বিয়ে করার!

ফারিয়া চোখ গরম করে বলল, তাহলে বলতে চাও আমাকে বিয়ে করে তুমি সুখী নও?

ফারদিন আঙুল দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল, আজকাল সুখী হওয়ার জন্য বিয়ের দরকার হয় না, মোবাইলে একশো পারসেন্ট চার্জ থাকলেই হয়। তা ছাড়া যেখানে স্বয়ং জীবনানন্দ দাশের বিবাহিত জীবনেই আনন্দ ছিল না, সেখানে আমি কোন হরিদাস পাল!

ফারিয়া হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, আচ্ছা, তুমি একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না। সারাক্ষণ এমন চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলো কেন?

ফারদিন একটা কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, আমি মিষ্টি করে কথা বলে দেখেছি, হেসে হেসে কথা বলেও দেখেছি। আনন্দ শুধু ঘাড় ত্যাড়ামিতে।

ফারিয়াও ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, আমি তোমাকে এত করে বোঝাই, তাও বুঝো না! তা ছাড়া বুঝিয়ে লাভ কী? আজকাল তো তোমাকে বোঝাতে বোঝাতে আমি নিজেই কম বুঝতে শুরু করেছি। তুমি সব সময় এমন বাঁকা করে কথা বলো কেন, বলো তো?

ফারদিন আরেকটা দুষ্ট হাসি দেয়, আমি স্কেল দিয়ে লাইন বাঁকা করে আঁকা মানুষ, আমার কাছে তুমি সোজা উত্তর আশা করো কীভাবে? আমি এভাবেই কথা বলি।

ফারিয়া এবার রেগে গেল, তোমার আচার আচরণ দেখে গালি আমার মুখের সামনে এসে বলতেছে, মে আই কাম ইন স্যার!

দেও গালি, সমস্যা কী? তোমার মতো সুন্দরীদের গালি শুনতে আমার ভালোই লাগে। তোমাদের মুখের গালি অনেকটা ক্লাসিক কবিতার মতো... যদিও জানি কচুপাতা ভিজানো আর মেয়ে মানুষকে বোঝানো সমান কথা, তারপরও একটা কথা বলতে চাই, রাগ করবা?

না রাগ করব না, কারণ তুমি আমাকে সুন্দরী বলেছো। কী কথা বলো...

তুমি সব সময় টি-শার্ট পরে থাকো কেন?

তাতে কী অসুবিধা?

না মানে, টি-শার্ট পরলে তোমাকে বউ বউ লাগে না, ভাই ভাই লাগে। থাকগে সে কথা। আমাকে ভালো দেখে একটা কুপরামর্শ দাও দেখি।

কী কুপরামর্শ?

আমার আশা ছিল বিয়ে করব শাবানা, বিয়ে করে ফেলেছি রিনা খান। এখন বাঁচার উপায় কী?

ফারিয়া কিছুক্ষণ রাগী চোখে জামাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আচ্ছা, বিয়ের আগে তুমি কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছিলে? তারা তোমাকে সহ্য করত কীভাবে?

ফারদিন দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বলল, বিয়ের আগে অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম তো, প্রপোজও করেছিলাম।

ফারিয়া অতি উৎসাহে স্বামীর সামনে মুখ এনে বলল, তারপর? তারপর কী হলো? মনে মনে বলল, ওরে শয়তান তোরে ঘায়েল করার অস্ত্র পাওয়া গেছে। খাইছি তোরে!

ফারদিন আরেকটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, তারপর আর কী হবে! প্রপোজ করার সঙ্গে সঙ্গে রিজেক্ট করে দিল!

তারপর আর কারো প্রেমে পড়ো নাই?

পড়ব না কেন? বেশ কয়েকজনের প্রেমেই পড়েছিলাম।

ফারিয়া খুশি খুশি গলায় বলল, এত মেয়ের প্রেমে পড়ছিলা? তারপর কী হলো?

ফারদিন মুখে একটা দুঃখের ভাব এনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, তারপর আর কী হবে। প্রপোজ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই রিজেক্ট করে দেয়!

জামাই ঘায়েল করার অস্ত্র মিস হওয়ার দুঃখে ফারিয়া মনে মনে হা-হুতাশ করতে লাগল।

এদিকে বউয়ের অবস্থা দেখে ফারদিন মিটিমিটি হাসতে লাগল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close