reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

আল মামুন তালুকদারের হাসির গল্প

সাহসের সমাচার

বদরুল যে ভিতু প্রকৃতির তা কারো অজানা নয়। ছোটবেলা থেকেই তার এই স্বভাব। সবকিছুতেই সে ভয় পায়। স্কুলে পড়ার সময় সবার পেছনে বসত। অরবিন্দু স্যার বলত, ‘বদরুল দাঁড়া। তুইই সবার আগে বল তো দেখি কবিতাটা।’ এমন বিরক্ত লাগত তার। সবাইকে রেখে তার ওপর চোখ পড়ত স্যারদের। কোনো দিনও সাহস করে সামনের বেঞ্চে বসতে পারেনি। এভাবে কষ্ট করে স্কুল, কলেজ শেষ করে। শেষে একটা মাস্টারি চাকরিও জুটে যায়। তার যে প্রধান শিক্ষক আবদুল হক স্যার তাকেও যমের মতো ভয় পেত।

এক বর্ষায় তাকে বিয়ে করাল, তাও জোর করে। ধরে-বেঁধে পীরের মুরিদ যাকে বলে। বিয়ের পর তার স্ত্রীও তাকে ভয় দেখাতে লাগল। তেলাপোকা, টিকটিকি এসব দিয়েই ভয় দেখাত। তার স্ত্রী কোনো বায়না ধরলে যদি না করত, তাহলেই ওয়্যারড্রব অথবা টেবিলের ড্রয়ার থেকে খোঁজ করে একটা তেলাপোকা মেরে শুঁড় ধরে সামনে নিয়ে আসত। এটা নিয়ে আবার তার স্ত্রী মাঝেমধ্যে ঠাট্টা-মশকরা করত। প্রায়ই ছড়া কাটত।

‘বদলরুল ভিতুর ডিম

বাসন মাঝতে লাগে ভিম’

বদরুল নীরবে তা সহ্য করত।

কিছুদিন আগের ঘটনা। রাতে শুতে যাবে তখনই এক কাণ্ড ঘটে গেল। মশারির ভেতর একটি তেলাপোকা ভালোই সাহসের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে লাগল। বদরুল ভয়ে মশারি ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। তার স্ত্রী মাথা নাড়িয়ে হেসে হেসে এই ছড়াটা আবার কাটল।

‘বদলরুল ভিতুর ডিম

বাসন মাঝতে লাগে ভিম’

তার স্ত্রী সেই তেলাপোকা মারল, মেরে তেলাপোকার শুঁড় ধরে তার শরীরের দেওয়ার চেষ্টা করল। বদরুল দরজা খোলে সেন্ডেল ছাড়া বকনা বাছুরের মতো লেজ তুলে দৌড় দেয়। দূরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, ‘দেখ ভালো হবে না কিন্তু! তুমি কিন্তু ভালোই রাগ তুলছো আমার। রাগে ঘড়-ঘড় করে বলল, ঘটনা কিন্তু বেগতিক হবে বলে দিলাম। তুমি জানো আমার রাগ উঠলে মেজাজের কি দশা হয়।’

এই ভয়ের জন্য ডাক্তার-কবিরাজ, ঝাড়-ফুঁক, পানি পড়া, তেল পড়া আল্লাহর দুনিয়ায় কোনো চেষ্টা সে কমতি রাখেনি। এই ভয়ের উৎস কোথায় ডাক্তার পর্যন্ত ধরতে পারেনি। ডাক্তার তাকে বলেছিল, শারীরিক কসরত করতে নিয়মিত। ডাক্তারের কথামতো তাও করেছে, তাতেও বিন্দুমাত্র কোনো সাফল্য আসেনি। একজন বলেছিল, রাতে ঘুমানের আগে খাঁটি সরিষার তেল নাকে মালিশ করতে, তাতে নাকি সাহসের কোনো কমতি কম হয় না। কই এই পরামর্শও তার সরিষা পরিমাণ কাজে লাগেনি। তার স্কুলের আনিস স্যার বলেছিল, শহীদ আল বোকারীর কাছে যেতে। ঢাকায় গিয়ে সারা দিন বসে বসে শহীদ আল বোকারীর লেকচার শুনেছে দিনভর, সাহস সঞ্চয়ের আশায়। গোটা চার দিনের কোর্সে অংশগ্রহণ করেছে। কোর্স শেষে বাসায় এসে প্রতিদিন ভোরে এবং ঘুমানোর আগে মেডিটেশন করছে। পাক্কা আধা ঘণ্টা সময় নিয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকত। কিন্তু কোনো কিছুই তার মনের ভয়কে টলাতে পারেনি। একসময় মনে হলো কোনো কিছুই আর কাজ হবে না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিল। মনে মনে বলল, থাকুক ভয়। এত সাহসের দরকারই-বা কী? আমি কী রণক্ষেত্রের কোনো যোদ্ধা নাকি যে আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। নাকি কোনো পুলিশ অফিসার যে রাতের অন্ধকারে চোর-ডাকাত ধরতে হবে।

এক ভোরের ঘটনা। ঘুম থেকে ওঠে বাইরে হাঁটতে বের হলো। হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ করল তার মনে কোনো ভয়ের আলামত নেই। বেশ সাহস সঞ্চারিত হচ্ছে বুকে। বাসায় ফিরল বীরের বেশে। রাস্তা থেকে একটা গুঁই সাপ ধরে পকেটে গুঁজে নিয়ে এলো। তার স্ত্রীকে পকেট থেকে বের করে দেখাল। তার স্ত্রী কোনো কথা না বলে নির্বিকার ভঙ্গিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকল দীর্ঘসময়। একসময় তাকে পা ধরার জোগাড়। ভয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘প্লিজ এমন করো না।’ তারপর কীভাবে জানি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেল বদরুল পকেটে সাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক দুপুরে হ্যাড স্যারের রুমে গিয়ে বলল, ‘আমার সাত দিনের ছুটি চাই জনাব।’ সঙ্গে সঙ্গে ছুটি মঞ্জুর করল হ্যাড স্যার। এলাকার পাতি নেতারাও দেখা হলে রাস্তাঘাটে দোকানে নিয়ে চা খাওয়ায়, আর চুপি চুপি বলে, ‘বদরুল ভাই আপনি নাকি সাপ নিয়ে ঘুরে বেড়ান?’ সে দেখাতে চাইলে বলে, ‘ভাই দোহাই লাগে কোনো প্রয়োজন নেই।’ এখন তার স্ত্রীও বেশ ভয় পায় তাকে। মারাত্মক ভয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close