reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

হানিফ ওয়াহিদের হাসির গল্প

সম্মান

নিশ্চিত মনে দুশ্চিন্তা করছিলেন ফরহাদ সাহেব, বউ শ্রাবণী এসে হাজির। ফরহাদ সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, হুটহাট করে আমার রুমে ঢুকে পোড়ো কেন বুঝি না। তুমি আমার বউ, প্রেমিকা হলেও না হয় একটা কথা ছিল। তোমার কারণে যে মন খুলে আরামসে বসে একটু দুশ্চিন্তা করব তারও উপায় নেই। আমি তো মাঝেমধ্যে কনফিউজড হয়ে যাই, আমার বাড়িতে তুমি থাকো, নাকি তোমাদের বাড়িতে আমি পরজামাই থাকি!

শ্রাবণী বসতে বসতে অবাক গলায় বলল, পরজামাই আবার কী?

আরে যাহা ঘরজামাই, তাহাই পরজামাই...

শ্রাবণী তেলের পিঠার প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে বলল, এই সাতসকালে আমার মাথা না খেয়ে পিঠা খাও। কী নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেছো?

একটা উপন্যাসের প্লট নিয়ে, কিছুতেই সুন্দর একটা এন্ডিং টানতে পারছি না।

শোন, এসব আলতো-ফালতু লেখালেখি বাদ দেও, আজকাল লেখকের চেয়ে মানুষ রিকশাওয়ালাকেও বেশি দাম দেয়। রিকশাওয়ালাও কিছু ইনকাম করতে পারে, লেখকরা ঠনঠনাঠন। আমার কথার তো মূল্য দেও না, গরিবের কথা বাসি হলে ফলে...

শ্রাবণীর কথা শেষ করতে না দিয়েই ফরহাদ সাহেব বললেন, ফালতু কথা বল কেন? এখন গরিবের কথাও বাসি হলে ফলে না, কারণ এখন গরিবের ঘরেও ফ্রিজ আছে। তুমি তো আমাকে লেখক হিসেবে পাত্তা দিতে চাও না, লোকজন যে আমাকে কালজয়ী লেখক বলে সেটা জানো?

মাশাআল্লাহ! মারহাবা! তুমি কী এমন বই লিখেছো যে কালজয়ী লেখক হয়ে গেলে? তোমার তো এখনো কোনো বই-ই বের হয় নাই!

আরে, বই না হোক, আমি একটা গল্প লিখলাম না, যেটা একটা আঞ্চলিক পত্রিকায় ছাপা হলো, সেই গল্পের নাম কি ছিল জানো? কালজয়ী লেখক।

কথা শুনে শ্রাবণী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

ফরহাদ সাহেব তীক্ষè গলায় বললেন, এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই, আমাদের অফিসের সামনে যে পাগলটা থাকে সেও আমাকে সম্মান করে। দেখা হলে সালাম টালাম দেয়।

শ্রাবণী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, পাগল তো তোমাকে সালাম দিবেই, তোমরা সমগোত্রীয় কিনা! পাগল তো পাগল চিনবেই।

ফরহাদ অভিমানী গলায় বললেন, আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বল তো, আমার সংসারে তুমি মোটেও সুখী হও নাই? তোমাকে আমি একটুও শান্তি দিতে পারি নাই?

শ্রাবণী ঘাড়ের চুল ঠিক করতে করতে বলল, শান্তি পাই তো, মাসে অন্তত একটা দিন তোমার সংসারে আমি শান্তি পাই।

কোন দিন?

যেদিন তুমি অফিস থেকে স্যালারি পাও।

আচ্ছা, তুমি সব সময় আমার সঙ্গে উল্টাপাল্টা কথা কেন বলো জানতে পারি? আমি কি তোমার শত্রু? আমি কখনোই তোমাকে কোনো বিষয়ে আমার সঙ্গে একমত হতে দেখি নাই। বিষয়টা দুঃখজনক।

শ্রাবণী চোখ গরম করে বলল, কালোচনা আবার কী?

আরে, তোমরা অন্যদের নিয়ে যে গপসপ কর, আমরা ভদ্র ভাষায় তাকে কালোচনা বলি। আচ্ছা বাদ দাও, ভাবির কথা তুললাম বলে রাগ কর নাই তো আবার...

আরে নাহ! আমি রাগ করে দেখেছি, চুপ থেকেও দেখেছি, লাভ নাই। শান্তিও নাই। একমাত্র তখনই শান্তি পাই, যখন মন খুলে তোমাকে গালাগাল করতে পারি।

ফরহাদ সাহেব মনে মনে বললেন, লে হালুয়া! প্রকাশ্যে বললেন, গালাগাল কর কেন? তুমি আমাকে পেয়ে সুখী হও নাই? তুমি তো আমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করলা! আমি তো জানতাম, জামাই হিসেবে আমাকে পছন্দ করো...

মোটেই না, আমি কাউকে পছন্দ করি না, যাকেই পছন্দ করি, সে অন্যের হয়ে যায়। বিয়ের আগে যাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে চেয়েছিলাম, সে এখন আমার মামাতো বোনের স্বামী!

ফরহাদ সাহেব কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, তারপর উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, এত তিতা কথা অনায়াসে বলো কীভাবে? মুখে দেখি রাখঢাক নাই!

শ্রাবণী ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, শোনো, জিনিস তিতা হলেই খারাপ না। যার কফি যত তিতা, সে তত বেশি এলিট শ্রেণির মানুষ।

ফরহাদ সাহেবও একটা কঠিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, পুরুষ মানুষের জীবনে বিয়ে করা ঠিক না, প্রাইভেসি বলে কিছু থাকে না, ইজ্জতও থাকে না। তোমার কাছে কখনোই সম্মান পাই নাই, আশাও করি না। তারপর করুণ গলায় বললেন, তোমার কী হয়েছে বলো তো? মন খারাপ? কী করলে তোমার মন ভালো হবে?

বাদ দাও, আমার মন ভালো করার সাধ্য তোমার নাই।

আহা! চেষ্টা করতে তো দোষ নাই, শত হলেও তুমি আমার পছন্দের বউ...

সত্যি সত্যি তুমি আমার মন ভালো করতে চাও?

হ্যাঁ চাই। কী করতে হবে বলো।

তাহলে আমাকে হাজার বিশেক টাকা দাও মার্কেট করে আসি। তুমি টাকা দিলে সঙ্গে সঙ্গে মন ভালো হয়ে যাবে।

ওরে সর্বনাশ! বলো কী! থাক, তোমার মন ভালো করার দরকার নাই। পৃথিবীতে নাকি এখনো কোনো ভালো স্বামীর জন্ম হয় নাই, আমার একা ভালো হওয়া লাভ কী?

শ্রাবণী তীক্ষè চোখে কিছুক্ষণ স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, হুররাম নাকি বাদশাহ সোলেমানকে পটিয়ে তার বন্ধু ইব্রাহিম আর ছেলে মোস্তফাকে মেরে ফেলেছে। হায় আফসোস! আমি তোমাকে পটাতে পারলাম না!

ফরহাদ অসহায় গলায় বললেন, কিন্তু তুমি যা বলছো, তাতে তো আমার পটি বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে!

শ্রাবণী তার কথার উত্তর দিল না, তবে মোবাইলে কী যেন টাইপ করতে লাগল। টাইপ করা শেষ হলে সেন্ট করে বলল, তোমার মোবাইলে মেসেজ বক্স চেক করো।

ফরহাদ সাহেব মোবাইল হাতে নিয়ে ইনবক্স চেক করলেন। তাতে লেখা- তোমার ধারণা তোমাকে আমি সম্মান করি না। তোমার এখনকার আচার-আচরণ দেখে আমার মুখের সামনে গালি এসে বলতেছে, may i come in sir! তুমি আমার স্বামী বলে মুখ আঁটকে রেখে সম্মান জানিয়ে গালিগুলো ইনবক্সে দিলাম।

এখন বুঝলা তো, তোমাকে আমি কতটা সম্মান করি!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close